somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূতুরে ছায়া

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১।
মাজহারুলের মা ও ফারিয়ার মা প্রতিবেশী। রমজান মাস ছাড়াও রোজা রাখার জন্য যখন তারা মনস্থির করেন তখন ভোর রাতে একে অপরকে ডাকাডাকি করে জাগিয়ে তোলেন। দীর্ঘদিন এমন ধারা অব্যাহত রয়েছে। ক’দিন আগে ফারিয়ার মার রাতে ঘুমাতে যেতে দেরি হলো। বোন ও ছেলের সাথে ফোনালাপ সেরে যখন তিনি বিছানায় গেলেন তখন রাত প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। সাধারণত নয়টা থেকে দশটার মধ্যেই গ্রামের সবার ঘরের বাতি নিভে যায়। আর এগারোটা মানে মধ্যরাত।

ঘুমটা গভীর হতে পারেনি অমনি মাজহারুলের মা পর পর দুইবার তাকে ডাকলো উঠার জন্য। তিনি ভেবেছেন ভোর হয়ে আসছে তাই ডাকছে। দরজা খোলার পর তিনি কাইকে দেখতে পেলেন না। বাহিরে তখন মরা জোছনার আলোয় অস্পস্ট সব কিছু দেখা যায়। পশ্চিম দিকে তাকাতেই দেখলেন ধীরে ধীরে একটা মহিলার ছায়া পুকুর পাড়ের দিকে চলে যাচ্ছে। তিনি ব্যাপারটা না বুঝেই মাজারুলের মা বলে ডেকে ‍উঠলেন বার দুয়েক। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে মাজহারুলদের ঘরের কাছে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলেন।

ভিতর থেকে মাজহারুলের মা বলল-চাচী এত রাতে ডাকছেন ক্যান? ভোর হতে আরও দেরি আছে। ও আচ্ছা, ঘুমাও বলে ফারিয়ার মা ভয়ার্ত অনুভূতি ও পাংশু মুখে ঘরে ফিরে আসে। পরে যখন দিনের বেলা পুরো ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন দু’জন তখন বেশ অবাক হন।
তাদের তখন প্রশ্ন ছায়াটি কার ?

২।

মৃদুল কুমিল্লা শহরে এসেছে প্রায় বছর খানেক। স্নাতকে পড়ছে। নতুন মেসে উঠেছে। এটা তার ২য় মেস বদল। রেজাউল তার বন্ধু ও সহপাঠী। দোতাল্লা বিল্ডিং এর নীচ তলার সবকটি কক্ষ খালি। শুধু একটি কক্ষ তারা দুই বন্ধু ভাড়া নিয়েছে। উপর তলায় মালিক থাকেন।
নিরীবিলি বলে বেশ ভাললাগে দুজনের এখানটায় থাকতে। একদিন জরুরী ফোন পেয়ে রেজাউল গ্রামের বাড়ি চলে যায়। মৃদুল একা। রাতে লাউট নিভিয়ে যথারীতি ঘুমিয়ে পড়েছে। গাছ গাছালীর ছায়া ঘন থেকে ঘন হচ্ছে রাত্রির রহস্যময়তায়।

মাঝ রাতে দরজায় আঘাত করার শব্দ পেয়ে জেগে উঠে মোবাইলে দেখে রাত একটা বাজে। শব্দটা নেই। কিছুক্ষন পর দরজায় আবারও শব্দ হচ্ছে এবার নখ দিয়ে আচরানোর ভংঙ্কর শব্দ। ভয়ে গা শিউরে উঠল মৃতুলের। সাথে সাথে লাইট জ্বালালো সে। কক্ষটি আলোকিত হবার পর আবার শব্দ থেকে গেছে। কিছুক্ষন পর সে শুয়ে পড়ল লাইট অন রেখে। একটু পর আবারও সেই একই কাহনী। মনে হচ্ছে কেউ রাগে হিংস্রভাবে দরজায় আছড় কাটছে।

মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে দরজার কাছে গিয়ে সাহস করে বলল-কে ? কোন উত্তর নেই। বিরতি দিয়ে বার বার একই কান্ড ঘটে চলেছে। এবার মৃদুল দরজায় জোড়ে জোড়ে থাপ্পড় দিল। শব্দ বন্ধ। সাহস করে দোয় দুরুত পড়ে দরজা খুলেলে ফেলল। টর্চের আলোয় কিছুই ধরা পড়লনা। কিছুই নেই সেখানে। ঘাম দিয়ে যেন জ্বড় সারলো।

রেজাউল চলে যাবর পর থেকেই তার অবচেতন মন ভূত নিয়ে ভাবতে ছিল বলেই কি এমন কান্ড ঘটল। উত্তর সে আজও খুঁজে পায়নি।

৩।

সুরিয়া বেগম এর শ্বশুরবাড়ি নাকি ভাল জায়গা নয়। বিভিন্ন কিছুর উৎপাত লেগেই আছে। এক রাতে সুরাইয়ার জা গেছে বাহিরে প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে । কি যেন দেখে সে বেশ ভয় পায়। ওমাগো বলে চিৎকার করে উঠে। ঘরে ফিরে উল্টা পাল্টা কথা বলতে থাকে। সুরিয়া বুঝে যায় যা বুঝার। সে কোন কথা বলেনা তার জা এর সাথে। কিন্তু একটা সময় সে কথা না বলে পারেনা। জা এর কথা শুনে হাসতে থাকে সুরিয়া। জা তখন বলে-এত হাসিসনা তোর ঘরে মাইয়া হইবো, মাইয়া। কন্ঠটা যেন শত বছরের বুড়ির মত শোনা গেল।

একটা ভয় সুরিয়া বেগমের মনে হানা দেয়। সে চুপ করে বাকি রাত কাটিয়ে দেয়। সে বছর সত্যি সত্যি তার একটা কণ্যা সন্তান হয়। কি দেখেছিল তার জা তার আর জানা যায়না পুরোপুরি। জা বলে সে নাকি একটা ছায়া দেখেছে, অদ্ভুত ছায়া। সবাই জানে এটা নিছক কোন ছায়া নয়। তবুও তার সাথে যেটি ছিল সেটি যে ভবিষ্যৎবানী করেছে তা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাওয়ায় অবাক না হয়ে পারেনা পুরো পরিবার।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×