বেশ কিছু দিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থ্য হয়েছি। এর পর পরই বাবা-মা, বোন ও তার দুই ছেলে মেয়ে আমার বাসায় বেড়াতে এসেছে। বাবা যেহেতু সাবেক সেনা অফিসার তাই ওনার পারকিনসন ডিজেজ এর জন্য ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে আসার জন্য চলতি মাসের দুই তারিখ প্রথম চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সিএমএইচ যাই। বাবা-মা দুজনকেই ট্রিটমেন্ট করাবো। যা হোক আম্মার জন্য প্যাথলজি কিছু টেস্ট করানো হয়েছে আর তিন তারিখ আউটডোরে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে আসবো।
কিন্তু আব্বার শরীর ভালো লাগেনা বলে ওনাকে আর নিয়ে যাওয়া হয়নি, আম্মাকে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখানো হলো। এদিকে সারা জীবন কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভোগা আব্বার টয়লেট হচ্ছেনা ৪দিন ধরে। সাপোটারি গ্লিসারিন দেওয়াতেও কাজ হলনা। পেট ফুলে ব্যাথা শুরু হয়েছে। ওনার বয়স ৭৩ বছর। ফার্মেসি থেকে টয়টেল হওয়ার ঔষধ এনে খাওয়ানো হলো।
এর পর থেকে বমি ও লুজ মোশন শুরু হলো আর বন্ধ হচ্ছে না। একদিনেই উনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। অবস্থা ভয়াবহ। ডিহাইড্রেসন হয়ে গেল। ছয় তারিখ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে সিএমএস নিয়ে গেলাম। ওনাকে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হলো। হাসপাতালে কতর্ব্যরত ডাক্তার, নার্স প্রায় ছয় জন একসাথে কাজ শুরু করলো। ওনারা আমাদের অভয় দিয়ে বললেন- আপনারা ওনাকে এখানে এনেছেন আপনাদের দায়িত্ব শেষ এবার আমাদের দায়িত্ব শুরু। যা করার আমরাই করবো। আপনারা বাহিরে ওয়েট করেন।
রাতটা ইমার্জেন্সিতে নিবির পর্যবেক্ষনে থাকার পর পরের দিন ২ নং ওয়ার্ডে রেফার করলো। যেহেতু বাবা বয়স্ক মানুষ তাই একজন সবসময় তার সাথে থাকতে হয়। দিনে মা থাকেন রাতে আমি একদিন আর আমার ভাই একদিন পালা করে থাকি। ৭ তারিখ রাতে আমি যখন ঘুমাতে যাব দেখি বাবার পাশের বেড খালি কিন্তু বালিশ ও মশারি নেই। দুই বেড পরে সালাউদ্দিন নামের একজন সৈনিক বলল- আপনি ডিউটিতে যে আছে ওনাকে রিকোয়েস্ট করেন এক্সট্রা বালিম , মশারি আপনাকে দিবে। আমি কথা মত গেলাম এবং বললাম। ডিউটিতে যে আর্মি ছিল ওনি বললেন যদি থাকে তবে পাবেন না থাকলে পাবেন না।
১০ মিনিট পর সেই আর্মি আমাকে মশারি ও বালিশ দিয়ে গেলাম। আমি ধন্যবাদ জানালাম। শুতে যাব তখন দেখি ফ্যানের বাতাস আমার এদিকে আসছেনা। সালাউদ্দিন ভাই তার টেবিল ফ্যান আমার বেডে ফিট করে দিলেন। কিন্তু বিপত্তি হলো ফ্যান এক মিনিট চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। ওনি ফ্যান খুলে ছুড়ি দিয়ে স্ক্র খুলে তার ঠিক করে আবার ফিট করে দিয়ে গেলেন।
আমি ওনার প্রতি কৃতজ্ঞ। রাত এগারোটা বেজে গেছে। আমি বললাম আপনি অনেক কষ্ট করেছেন এবার ঘুমান। ওনার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওনার ৪ দিন ধরে জ্বর কিছুতেই কমছেনা তাই এখানে ভর্তি করা হয়েছে। ওনার সাথে কথা বলে বেশ ভালোলাগলো। সকালে বিদায় নিয়ে আসলাম। কিন্তু একদিন পরে গিয়ে দেখি ওনি রিলিজ হয়ে চলে গেছেন। কি আফসোস ফোন নাম্বারটা রাখা হলোনা। ইচ্ছে ছিল আমার বাসায় একদিন ইনভাইট করার কিন্তু উপকারী সালাউদ্দিন আমাকে আর সে সুযোগ দিলনা।
হয়তো কোন একদিন আবার দেখা হতে পারে আবার নাও দেখা হতে পারে। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন উপকারী সালাউদ্দিন।
চারদিন পর আব্বুকেও রিলিজ করেছে এখন বাসায় ভালো আছেন। আর্মিদের সেবা ও ব্যবহারে তাদের উপর আস্থা ও ভরশা আজও অটুক।
ছবি- নেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫০