পাখির বাসা দিয়ে বানানো স্যুপ চীনে বেশ জনপ্রিয় ও কয়েকশ বছরের পুরনো অভ্যাস। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল-পাখির বাসা দিয়ে রান্না করা স্যোপ এমনই স্বাদ যে, বারবার খেতে ইচ্ছে করে। সুইফট একটি ছোট দ্রুতগতির পাখি যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অর্থাৎ চীনেই বেশি পাওয়া যায়। এই পাখি নিজের লালা দিয়ে যে বাসা বানায় তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং সাদা ও সুন্দর বাসা তৈরী হয়। বিগত প্রায় চারশ' বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনারা এ স্যুপ খেয়ে চলেছে। অন্যান্য দেশের বাসিন্দারাও এর স্বাদ চেখে দেখছে। যদিও আকাশ ছোয়া দাম।
সম্ভবত প্রাণীজগত থেকে পাওয়া যেসব খাবার মানুষ খায়, পাখির বাসা দিয়ে বানানো এই স্যুপ তার মধ্যে সব চেয়ে দামি। চীন ছাড়া আমাদের কাছেপিঠের দেশগুলোর মধ্যে হংকংয়ের নামি দামি রেস্তোরাঁগুলোতে এই স্যুপ পাওয়া যায়। তবে এর ছোট এক বাটি স্যুপ খেতে হলে শ' খানেক ডলার গুনতে হবে। এতো গেল স্যুপের দাম। যে বাসা দিয়ে সেই স্যুপ বানানো, তার দাম কত? দুই ধরণের সুইফট পাখির বাসা দিয়ে স্যুপ বানানো হয়। এর একটাকে বলে হোয়াইট নেস্ট বা সাদা বাসা। এক কিলোগ্রাম ওজনের হোয়াইট নেস্টের দাম কম করে হলেও ২ হাজার ডলার। আর অন্যটাকে বলে রেড ব্লাড নেস্ট। রেড ব্লাড নেস্ট কিনতে হলে এক কেজির জন্য অন্তত ১০ হাজার ডলার ব্যয় করতে হবে।
সুইফট পাখি কিন্তু অন্যসব পাখির মত খড়কুটো দিয়ে বাসা বোনে না। মুখ থেকে লালার মত এক রকমের জিনিস বের করে তা দিয়ে বাসা বানায়। এ বাসা পানিতে সহজে গুলে যায়। এসব বাসায় খাদ্য উপাদানও যথেষ্ট। স্যুপ খেতে মজার হলেও এ পাখির বাসা জোগাড় করা কিন্তু মোটেও সহজ নয়! পাহাড়ের গুহায় অনেক উঁচুতে বাসা বাঁধে এরা। কয়েক শ' গজ লম্বা লম্বা বাঁশের মই লাগিয়ে তবে এসব বাসার নাগাল পাওয়া যায়। এত লম্বা মই, তার ওপর এর এক একটা মইয়ের বয়স দু'শ, তিনশ' বছর পর্যন্ত। আর কত যে জোড়াতালি লাগানো, তার কোন লেখাজোখা নেই! বাসা পাড়তে গিয়ে এই মইয়ের ওপর থেকে পড়ে গেলে আর দেখতে হবে না! তাছাড়া ইচ্ছে করলেই এসব গুহায় ঢুকে সুইফট পাখির এ বাসা পেড়ে আনবে, সে সুযোগ নেই। কিভাবে কখন এই বাসা পেড়ে আনা যাবে তার আইন আছে। ডিম পাড়ার আগে সুইফট পাখি বাসা বাঁধে। একবার বাসা বাঁধার পরপরই বাসা পেড়ে আনা হয়। বাসা পেড়ে নিয়ে গেলে পাখিগুলো আবার বাসা বাঁধে। তবে এবার আর সে বাসা পাড়তে দেয়া হয় না। তখন তারা সে বাসায় ডিম পাড়ে, তা দেয়, বাচ্চা লালন করে। বাচ্চাকাচ্চা উড়তে শেখার পর অবশ্য সেই বাসা পেড়ে আনতে কোন মানা নেই।
ছবি- ইউটিউব থেকে নেওয়া।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩৫