মিনারা বেগমের মনে সন্দেহ ঢুকছে। তার স্বামী নাকি ভাই কে হতে পারে অপরাধী। এত চোখে চোখে রেখেও কিভাবে এরকম ঘটনা ঘটে গেল সেটাই বুঝতে পারছেনা মিনারা বেগম।
রমিলা এই বাসায় কাজ করছে অনেক বছর ধরে। এই রমিলা যে একদিন মাথাব্যথার কারণ হবে কে জানত। সজীব সাহেবের ভাবগতিক দেখে বুঝর উপায় নাই যে সে রমিলার সাথে এমন কিছু ঘটাতে পারে।
মিনারা বেগমের ভাই মিনার। এ বাসায় থেকেই লেখাপড়া করছে কলেজে। নিজের ভাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে কষ্ট হলেও বাদ দেওয়ার কথা কিছুতেই ভাবতে পারেনা মিনারা। কারন পুরুষ মানুষের স্বভাব বলে কথা, একই সুযোগ পেলে অসৎ হতে এরা একটু দ্বিধা করে না। নিজের ভাই বলে যে চরিত্র ফুলের মত পবিত্র হবে এর কোনো কারণ নেই।
এখন আর সন্দেহ নয় রমিলার পেটে বাচ্চা আছে মিনারা বেগম স্পষ্ট বুঝে গেছেন। ঘন ঘন বমি, মাথা ঘুরানো, শরীর দুর্বল লাগা, অসুস্থ হওয়া এসব ব্যাপার গুলো যে একটা পরিণতির দিকে গড়াবে সেটা মিনারা ঘুণাক্ষরেও মনে স্থান দেননি। তখন যদি এটা আমলে নিতেন আজকে তাহলে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়ার মত অবস্থা হতো না।
মারধর করেও কোন লাভ হল না রমিলা কিছুতেই কারো নাম মুখে আনলো না। সজীব সাহেব অবশ্য ড্রাইভারকে দোষারোপ করেছেন এবং মিনারা কে বলছেন ওকে তোমার সামনে এনে জেরা করে বের করবো কে এই অঘটনের নায়ক।
সজীব সাহেব গোপনে ড্রাইভারকে টাকা দিয়ে স্বীকারোক্তির জন্য রাজি করিয়েছেন। কিন্তু শয়তান ড্রাইভারটা কাঁচকলা দেখিয়ে টাকা পেয়ে রাতেই চম্পট দিয়েছে। সজীব সাহেব এবার যে মোক্ষম একটা সুযোগ পেলেন বললেন- স্বীকারোক্তির ভয়ে ড্রাইভার পালিয়ে গেছে তারমানে সেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে আর কোন সন্দেহ নেই।
প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু বিশ্বাস করার মহিলা মিনারা বেগম নন। তার এই ড্রাইভারকে দোষারোপ করা আর না করা তার স্ত্রী কাছে কোন অর্থবহ নয়। সজীব সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন কি করা যায় ? রমিলা কে নিয়ে নতুন প্লান করেছেন তিনি সব দোষ মিনারের ঘাড়ে চাপানোর জন্য রমিলা- কে বলেছেন একদিন তুই মিনারের রুমে ঢুকে ওকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার চেঁচামেচি করবি আমি ওর বোনকে সাথে নিয়ে এসে দেখব যে ও তোর সতীত্ব নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এভাবেই ওকে জালে ফাঁসিয়ে আমি বেঁচে যাব। আর আমি বেঁচে গেলেই তোর বেঁচে যাওয়া। তখন তোর কোন ক্ষতি হতে দেবো না। সবকিছু সামলে নেব।
মিনার বিকেলের দিকে একটা উপন্যাস পড়ছিল খাটে শুয়ে শুয়ে। রমিলা রঙ্গিন শাড়ি পড়ে ওর রুমে ঢুকলো এক কাপ চা নিয়ে। মিনার চা এর কাপ নিতে গেল ঠিক তখনই ইচ্ছে করে বুক থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে দিল রমিলা। মিনার তার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব। নির্দোষ মিনারকে দোষী আসামী সাজাতে রমিলার বিবেক বাধা দিচ্ছে। অতীতে অনেক উপকারের ছবি তার চোখের সামনে যেন নেচে উঠল তাই সে দ্রুত ঘুরে দৌড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই দরজায় সজোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল এবং আর্তনাদ করে উঠলো।
আর এমন একটি শব্দ শুনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন সজীব সাহেব। তিনি মনে করেছেন তার সাজানো নাটক সফল হতে যাচ্ছে তাই তিনি কাল বিলম্ব না করে মিনারা বেগমকে সাথে করে নিয়ে দৌড়ে মিনারের রুমে এসে দেখলেন ব্যর্থ নাট্যমঞ্চের যবনিকা ঘটেছে।
ভয় ও টাকার লোভ দেখিয়ে রমিলার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে পারিনি সজীব সাহেব। রমিলা তাকে জানিয়ে দিয়েছে- একেই তো পাপ করেছি তার উপর শিশু হত্যার মতো অপরাধ করলে খোদা আমায় ক্ষমা করবেন না। আমি অপরাধী কিন্তু কিছুতেই এমন পাপ করতে পারুমনা।
সজীব সাহেব যেন গ্যাড়াকলে পড়ে গেলেন। তিনি ভেবে পেলেন না-এই হারামজাদী কাজের মেয়ে এত শক্তি ও সাহস পায় কোথা থেকে!
মিনারা বেগম তার ভাইকে সাবধান করে দিয়েছিল আগেই যদি কোন দিন কোন অনৈতিক কাজ তার দ্বারা হয় তবে বাসা থেকে এক কাপড়ে বিদায় নিতে হবে। বোনকে দেওয়া ওয়াদা সে রক্ষা করে চলেছে প্রাণপন।
কৌশলে রমিলা ও তার সন্তানের অমঙ্গল হবে না এমন আশ্বাস দিয়ে তথ্য বের করে ফেলেন মিনারা। একদিন তুই আমাকে আগুনে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁয়েছিলি । তাই তোর ভাগ্য আগুনে পুড়ে গেলেও আমি তোর ও তোর অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাবো।
নিজের স্বামীর উপর সন্দেহ ছিল, তার বন্ধু বান্ধব থেকে শোনা চরিত্রহীনতার কাহিনীগুলো বিশ্বাস করেননি কিন্তু আজ যখন নিজের চোখের সামনে ঘটে গেলো এমন ঘটনা তখন এর কোন ক্ষমা নেই । কারণ তিনি স্বামীকে বলে রেখেছিলেন- যদি নিষিদ্ধ অপরাধের মত কোন কান্ড ঘটে তার সামনে তবে সেটাই হবে এক সাথে দুজনের থাকার শেষ অধ্যায়। যে তীব্র বিতৃষ্ণা জন্মেছে মনে তা আর কোন দিন শেষ হবার নয়। লজ্জায়, ঘৃনায়, অপমানে স্বামীর সাথে আর একটি কথাও বলেননি মিনারা বেগম।
সবকিছু শোনার পর, জানার পর মিনার বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং বলে যায় বছর পাঁচেক আগে কিভাবে কাজের ছেলেটার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে তার ভগ্নিপতি । বোনের সংসারে আগুন লাগবে ভেবে সে তখন সেটা প্রকাশ করেনি। কিন্তু এখন কাজের মেয়েটার সর্বনাশ করে যখন তার উপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে তাই সে না বলে পারলনা। এমন জানোয়ারের সাথে আর থাকা সম্ভব নয়, যার কাছে পুরুষ এবং নারী কেউ নিরাপদ নয়।
রমিলা কে খুন করে ফেলতে পারে কিংবা তার অনাগত সন্তানের ক্ষতি করতে পারে সেটা ভেবেই রমিলা কে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেন মিনারা বেগম। রমিলাকে বিয়ে দিয়ে ড্রাইভারের সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন যে তিনিই দেখিয়েছিলেন। তার স্বামী সে স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে যে কলঙ্কের দাগ দিয়েছেন তা কছিুটা মুছতে তাদের সব দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিয়ে তিনি তারপর পাড়ি জমান তার প্রবাসী ছেলের কাছে যে থাকে জার্মানিতে।
একা হয়ে পড়েন সজীব সাহেব। একাকিত্বের যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে একদিন তিনি রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যান। মিনারা বেগমের কথা মতন রমিলা আবার ফিরে আসে এই বাড়িতেই নতুন অতিথির হাত ধরে তাঁর যে যাওয়ার কোন জায়গা নেই।
নিয়তির নিষ্ঠুর খেলায় পিতার বাড়িতে পিতৃপরিচয়হীন কন্যাশিশুটি বড় হতে থাকে। নিজের অপরাধের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয় রমিলা। অপরাধী অপরাধ করে পার পায়না এই শিক্ষাটা রমিলা বাকি জীবনে আর ভুলেনি।
ছবি নেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২