প্রায় ২২ বছর পর বাল্য বন্ধুর সাথে দেখা শুধু দেখা নয় স্বপরিবারে বেড়াতে এসেছে টুটুল মৃদুলের বাসায়।
উত্তরবঙ্গে দুজনের বাবাই সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন সেই সূত্রে পাশাপাশি থাকা হয়েছিল তারপর বদলি ও অবসরজনিত কারণে আলাদা হয়ে যাওয়া। তারপর যোগাযোগ ছিলনা একযুগ। একযুগ পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। সেই বাল্য বন্ধুকে পেয়ে কি যে উচ্ছাস, কি যে ভাললাগা দু’বন্ধুর। যেমন আড্ডা, তেমনি খাওয়া-দাওয়ার আর হরদম ঘোরাঘুরি তো চলছেই।
টুটুলরা সিলেট থেকে কক্সবাজার যাবে। রাতের বেলায় রওনা দিবে তাই টিকিট কাটার জন্য মৃদুল ও টটুল বাসা থেকে বের হলো।
কথায় কথায় কখন যে সময় চলে গেল বুঝতেই পারলা ওরা , মনে হলো চোখের পলকে বাস স্ট্যান্টে চলে এসেছে তারা। দোকানের সামনে এটা-সেটা খাওয়ানোর জন্য প্রস্তাব করতে লাগলো একজন আরেকজনকে। টিকিট কেটে ফিরে আসার সময় টুটুল একটা ঘড়ির দোকান থেকে ঘড়ি কিনে বন্ধুকে পরিয়ে দিল।
মৃদুল যদিও বলতে ছিল না আমিতো ঘড়ি এখন আর পরিনা মোবাইলেই সময় দেখি। টুটুল বলল- আমি সবসময়ই ঘড়ি ব্যবহার করি তাই তোমাকেও ঘড়ি উপহার দিলাম। দোকান থেকে ফিরতে গিয়ে টুটুলের জুতা ছিড়ে গেল। জুতা সারাই এর জন্য মুচির কাছে জুতা দিয়ে দুজন চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ টুটুল মৃদুলকে জড়িয়ে ধরলো । বললো তুমি তো অনেক স্মার্ট হয়ে গেছো, আমার কথা বলা সুন্দর, তোমার চেহারা সুন্দর, তোমার সবকিছু সুন্দর। তারপর হাতে চুমু খেলো। মৃদুল লজ্জায় লাল হচ্ছেে এর মধ্যেই টুটুল মৃদুলের গালে চুমু দিল।
এদিক-সেদিক তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করছে মৃদুল। তারপর টুটুল কি বলছে তা আর মৃদুলের কানে যাচ্ছে না। সে লোক লজ্জার ভয়ে বন্ধুকে ছাড়িয়ে একটু দম নিতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা টুটুল হয়তো বুঝেছে তাই বন্ধুকে ছেড়ে দিয়ে হাতে হাত ধরে দুজন দাড়িয়ে মনের ভিতর জমে থাকা কথা বলে যাচ্ছে। তুমি খুব ভাল আছে বন্ধু ! টুটুলের এমন কথায় চুমুর সাথে ভাল থাকার কি কোন মিল আছে ভেবে পায়না মৃদুল।
টুটুলের এক ছেলে এক মেয়ে আর মৃদুলের এক ছেলে। দুজনের ছেলের নাম মিরাজ । নামের এই কাকতালীয় মিল থাকায় দুজনই অবাক । টুটুলের বাবা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর হল, মা শয্যাশায়ী। মৃদুলের বাবা-মা গ্রামে থাকে মোটামুটি সুস্থ।
টুটুল ময়মনসিংহে আর মৃদুল থাকে সিলেট।
তুমিতো সরকারি চাকরি করছ ছেলেমেয়ে নিয়ে শহরে থাকছো সুখেই আছ। কথাটা মৃদুল কে টুটুল বলল।
মৃদুল বললো তুমিও তো ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই আছো দেখছি। গ্রামে নিরিবিলি থাকছো।
নারে ভাই ভালো আর কোথায় থাকি- একটা চাকরি বাকরি নাই গ্রামে পড়ে আছি। শহরে আর থাকতে ভাললাগনো তাই চাকরি ছেড়ে নিজের খেত, জমি-জমা নিয়ে আছি। তবুও বই আর বাচ্চাদের আবদারে প্রতিবছর একবার করে ঘুরতে বের হই।
মৃদুল বললো - শহরে থাকা যদি সুখ মনে করো তবে ওই নামের সুখেই সুখে আছি। বাবা মাকে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়, ছোট ভাই এর পড়ার খরচ চালাতে হয়, নিজেদের থাকা খাওয়ার পরে মাস শেষে হাতে তেমন কিছু থাকেনা। প্রতিবছর ইচ্ছা থাকলেও ঘুরতে বের হওয়া হয় না। এই শহরের আশে পাশেই ঘুরি আরকি।
কাজ , দায়িত্ব-কর্তব্য, সমাজ -সংসার পিছে পরে কখন যে জীবনের দিন গুলো পার হয়ে যাচ্ছে বুজতেই পারছি না। ছোট কালটাই ভালো ছিল মনে হয়, সুখে ছিলাম বলা যায়।
মনে আছে বন্ধু সেই যে তুমি আমি পড়ালেখা করবো না বলে এক শীতের সকালে অজানার উদ্দেশ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম কিন্তু সন্ধ্যা অবধি না খেয়ে পথে পথে হেটে অজানা এক রেল স্টেশনে এসে পথ খুজে না পেয়ে পৃথিবীর বাস্তবতা বুঝতে পেরে দিন শেষে আবার আমাদের ফিরতে হয়েছিল নিজেদের ঘরে। সেদিন হারিয়ে যেতে পারিনি তুমি- আমি। হারিয়ে গেলে হয়তো ভালো থাকার দিন কিংবা সুখে থাকার দিনের দেখা পেতাম।
হয়তো ভাল থাকার দিনের দেখা না পেয়ে মরেই যেতাম সকলের অগোচরে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৮