somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনাকাঙ্ক্ষিত চুম্বন ও ভালো থাকার দিন

১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রায় ২২ বছর পর বাল্য বন্ধুর সাথে দেখা শুধু দেখা নয় স্বপরিবারে বেড়াতে এসেছে টুটুল মৃদুলের বাসায়।

উত্তরবঙ্গে দুজনের বাবাই সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন সেই সূত্রে পাশাপাশি থাকা হয়েছিল তারপর বদলি ও অবসরজনিত কারণে আলাদা হয়ে যাওয়া। তারপর যোগাযোগ ছিলনা একযুগ। একযুগ পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। সেই বাল্য বন্ধুকে পেয়ে কি যে উচ্ছাস, কি যে ভাললাগা দু’বন্ধুর। যেমন আড্ডা, তেমনি খাওয়া-দাওয়ার আর হরদম ঘোরাঘুরি তো চলছেই।

টুটুলরা সিলেট থেকে কক্সবাজার যাবে। রাতের বেলায় রওনা দিবে তাই টিকিট কাটার জন্য মৃদুল ও টটুল বাসা থেকে বের হলো।

কথায় কথায় কখন যে সময় চলে গেল বুঝতেই পারলা ওরা , মনে হলো চোখের পলকে বাস স্ট্যান্টে চলে এসেছে তারা। দোকানের সামনে এটা-সেটা খাওয়ানোর জন্য প্রস্তাব করতে লাগলো একজন আরেকজনকে। টিকিট কেটে ফিরে আসার সময় টুটুল একটা ঘড়ির দোকান থেকে ঘড়ি কিনে বন্ধুকে পরিয়ে দিল।

মৃদুল যদিও বলতে ছিল না আমিতো ঘড়ি এখন আর পরিনা মোবাইলেই সময় দেখি। টুটুল বলল- আমি সবসময়ই ঘড়ি ব্যবহার করি তাই তোমাকেও ঘড়ি উপহার দিলাম। দোকান থেকে ফিরতে গিয়ে টুটুলের জুতা ছিড়ে গেল। জুতা সারাই এর জন্য মুচির কাছে জুতা দিয়ে দুজন চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ টুটুল মৃদুলকে জড়িয়ে ধরলো । বললো তুমি তো অনেক স্মার্ট হয়ে গেছো, আমার কথা বলা সুন্দর, তোমার চেহারা সুন্দর, তোমার সবকিছু সুন্দর। তারপর হাতে চুমু খেলো। মৃদুল লজ্জায় লাল হচ্ছেে এর মধ্যেই টুটুল মৃদুলের গালে চুমু দিল।

এদিক-সেদিক তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করছে মৃদুল। তারপর টুটুল কি বলছে তা আর মৃদুলের কানে যাচ্ছে না। সে লোক লজ্জার ভয়ে বন্ধুকে ছাড়িয়ে একটু দম নিতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা টুটুল হয়তো বুঝেছে তাই বন্ধুকে ছেড়ে দিয়ে হাতে হাত ধরে দুজন দাড়িয়ে মনের ভিতর জমে থাকা কথা বলে যাচ্ছে। তুমি খুব ভাল আছে বন্ধু ! টুটুলের এমন কথায় চুমুর সাথে ভাল থাকার কি কোন মিল আছে ভেবে পায়না মৃদুল।

টুটুলের এক ছেলে এক মেয়ে আর মৃদুলের এক ছেলে। দুজনের ছেলের নাম মিরাজ । নামের এই কাকতালীয় মিল থাকায় দুজনই অবাক । টুটুলের বাবা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর হল, মা শয্যাশায়ী। মৃদুলের বাবা-মা গ্রামে থাকে মোটামুটি সুস্থ।

টুটুল ময়মনসিংহে আর মৃদুল থাকে সিলেট।

তুমিতো সরকারি চাকরি করছ ছেলেমেয়ে নিয়ে শহরে থাকছো সুখেই আছ। কথাটা মৃদুল কে টুটুল বলল।

মৃদুল বললো তুমিও তো ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই আছো দেখছি। গ্রামে নিরিবিলি থাকছো।

নারে ভাই ভালো আর কোথায় থাকি- একটা চাকরি বাকরি নাই গ্রামে পড়ে আছি। শহরে আর থাকতে ভাললাগনো তাই চাকরি ছেড়ে নিজের খেত, জমি-জমা নিয়ে আছি। তবুও বই আর বাচ্চাদের আবদারে প্রতিবছর একবার করে ঘুরতে বের হই।

মৃদুল বললো - শহরে থাকা যদি সুখ মনে করো তবে ওই নামের সুখেই সুখে আছি। বাবা মাকে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়, ছোট ভাই এর পড়ার খরচ চালাতে হয়, নিজেদের থাকা খাওয়ার পরে মাস শেষে হাতে তেমন কিছু থাকেনা। প্রতিবছর ইচ্ছা থাকলেও ঘুরতে বের হওয়া হয় না। এই শহরের আশে পাশেই ঘুরি আরকি।

কাজ , দায়িত্ব-কর্তব্য, সমাজ -সংসার পিছে পরে কখন যে জীবনের দিন গুলো পার হয়ে যাচ্ছে বুজতেই পারছি না। ছোট কালটাই ভালো ছিল মনে হয়, সুখে ছিলাম বলা যায়।

মনে আছে বন্ধু সেই যে তুমি আমি পড়ালেখা করবো না বলে এক শীতের সকালে অজানার উদ্দেশ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম কিন্তু সন্ধ্যা অবধি না খেয়ে পথে পথে হেটে অজানা এক রেল স্টেশনে এসে পথ খুজে না পেয়ে পৃথিবীর বাস্তবতা বুঝতে পেরে দিন শেষে আবার আমাদের ফিরতে হয়েছিল নিজেদের ঘরে। সেদিন হারিয়ে যেতে পারিনি তুমি- আমি। হারিয়ে গেলে হয়তো ভালো থাকার দিন কিংবা সুখে থাকার দিনের দেখা পেতাম।

হয়তো ভাল থাকার দিনের দেখা না পেয়ে মরেই যেতাম সকলের অগোচরে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×