আজকের গল্প অনলাইনে ফেসবুক পেজে কিভাবে রান্না ও খাবার পরিবেশন করা হয় কন্যার কন্ঠে এর বর্ণনা ।
অনেকদিন থেকেই আমার স্ত্রী বলছিল সে একটি রান্না বিষয়ক ফেসবুক পেজ খুলবে। আমি বলেছিলাম তুমি এত ঝামেলা নিতে পারবে না। সে বলল না পারলে না পারবো চেষ্টা তো করি। তো ফাইনালি দু-তিন মাসে আগে তার আইডি থেকে একটি রান্না বিষয়ক পেজ খুলল। সে বলল সে তার ফেস দেখাবে না এমনকি কন্ঠও দিবেনা শুধু ভিডিও করবে সাথে মিউজিক বা গান এড করে দিবে। আমি বললাম তোমার যেভাবে সুবিধা তুমি সেভাবেই কর।
প্রথম কয়েকদিন ভিডিও করা এবং এডিটিং করা আমি শিখিয়ে দিলাম। আর বাকিগুলো সে নিজেই করত মানে মিউজিক বা গান সিলেক্ট করা ক্যাপশন লিখা, হ্যাশটেগ দেওয়া এবং পোস্ট করা।
একটি গান সিলেট কর বা ক্যাপশন কি হবে কিংবা কোন মিউজিকটা দিলে মানাবে এগুলো ভাবতে ভাবতেই তার অনেকটা সময় চলে যেত তারপর ভিডিও এডিটিং করতেও আমি প্রায় ঘন্টা দুই লেকে লেগে যেত। বেশ কদিন যাবার পর সে বুঝতে পারল কাজটা অতটা সোজা নয় এবং বাবুর প্রতি যত্ন অনেকটা কমে গেছে।
তাই সে মাস খানে যাওয়ার পর বলল আর আর কাজ করবে না। কিন্তু ভিউ লাইক শেয়ার যে না কমতে শুরু করেছে অমনি সে ভাবলো না মাঝপথে কাজটা ছাড়া ঠিক হবে না। এবার সঠিক করল কন্ঠ দিবে তাই সে ভিডিও দেখতে শুরু করল কিভাবে কন্ঠ দিলে সুন্দর লাগবে। আমার কন্যা তার কান্ড দেখে বলল আম্মু তুমি এভাবে বলবে-হ্যালো এভরিওয়ান কেমন আছেন ? আমি আজকে কি রান্না করেছি আপনারা দেখেন, মাংস, মাছ আবার পোলাও রান্না করেছি কিসমিস দিয়েছি। আহ কি ঘ্রাণ। অনেক মজা হয়েছে । আপনারা বাসায় রান্না করেন এবং আমাকে জানান মজা হয়েছে নাকি? আমার এই ভিডিওটা বেশি বেশি শেয়ার করেন।
ওমা বুড়ির কথা শুনে আমি আর আমার টাসকি খেলাম। মা মেয়েকে কাছে টেনে কোলে নিয়ে বলল, ওরে বাবা বুড়ি তো আমার চেয়েও ভালো কণ্ঠ দিতে পারবে। আমাকে বলল দেখছেন বাচ্চারা যা দেখে তাই শিখে। নাহ আমার এগুলো বাদ দিতে হবে। ওর এখন পড়ালেখার সময়, স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হয়ে আসছে। ওর ক্ষতি হবে ওকে সময় না দিয়ে দিনরাত এসো ভিডিও সিডিও নিয়ে পড়ে থাকলে।
তখন মেয়ে বলে উঠলো তুমি এগুলো বন্ধ করলে তোমার ভিউ কমে যাবে তোমার ইনকাম হবে না।
তার মা এবার বিস্মিত হয়ে বলল আমি এগুলোতে ইনকাম করতে চাই তোমাকে কে বললো। ইনকাম কি, মেয়ে বলল টাকা টাকা। কিচ্ছু বুঝনা। হুম বুঝছি তুমি দিন দিন পেকে যাচ্ছ। দাঁড়াও তোমাকে স্কুলে ভর্তি করাচ্ছি।
তারপর অনেকদিন এসে আর ভিডিও আপলোড দেয়নি। হঠাৎ করে আবার সিদ্ধান্ত নিল সপ্তাহে একদিন সে ভিডিও দিবে বা যখন মন চায় তখন দিবে কিন্তু এভাবে রেগুলার কাজ করবেনা না। ঘুমের সমস্যা আর টেনশন তো আছেই।
আমি বললাম যাক তাহলে শখ মিটেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:২৩