১.
নীলক্ষেতে কাজ শেষ করে মল চত্বর হয়ে ঢুকলাম কলা অনুষদে। এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। তাই যখনই এই দিকে আসি হাঁটতে থাকি কলা অনুষদের ভিতর দিয়ে। আজ মনটা তেমন ভালো নেই। কিছুই ভালো লাগছে না। আজ বীথিও আসেনি। আর আসলেই বা কি। হাঁটার সময় কেউ থাকে না আমার পাশে। কাউকে রাখতে ইচ্ছাও করে না। তাই ক্লাশ শেষে কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে ওর থেকে আলাদা হয়ে যাই এখান দিয়ে হাঁটার জন্য। "আরে, আপু!", হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি ডিপার্টমেণ্টের জুনিয়র মুনিয়া। একটা হাসি দিলাম।
ঃ আপনি এখানে?
ঃ নীলক্ষেতে একটা কাজ ছিল। তাই এইদিকে আসলাম। ভালো লাগে হাঁটতে।তা তুমি এখানে?
পাশে একটা ছেলেকে দেখিয়ে হাসি দিলো। বুঝলাম বয়ফ্রেন্ড। আমিও হাসি ফিরিয়ে দিয়ে আর দেরী করলাম না। হাঁটতে লাগলাম লাইব্রেরীর দিকে। অনেক শান্তির একটা জায়গা। কেউ কারো দিকে খেয়াল করে না। যে যারযার কাজ করে। হঠাৎ মনে পড়ল আজ তো শুক্রবার। লাইব্রেরী বন্ধ। কি করব এখন? মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেলো। এই দিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম শাহবাগের দিকে। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাত নাম্বারে ভিড় দেখে আর উঠতে ইচ্ছে করল না। রিকশা ঠিক করলাম , বললাম টিএসসি হয়ে যেতে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে স্লোগান দিচ্ছে একটা মেয়ে। সম্ভবত লাকি। আমাদের ক্যাম্পাসের ।কয়েকবার দেখেছিলাম। রিকশা টিএসসির দিকে চলল। হুডটা নামিয়ে দিলাম। বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। এই ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগে। রাজু ভাস্কর্যের কাছে এসে দেখলাম দোয়েল চত্বরের রাস্তা বন্ধ। আমি বললাম, '' মামা,আপনি শহীদ মিনার হয়ে যান।" সামনেই একটা কনসার্ট হচ্ছিলো। বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য । এখানেও জ্যাম। কি আর করা? রিক্সায় বসে কনসার্ট দেখছি। একজন গান গাচ্ছিল, "আজ কেন মন উদাসী হয়ে...." গান শুনতে শুনতে নিজেই উদাসী হয়ে গেলাম।
২.
ঃ বুড়ি
ঃ ও মা গো
হঠাৎ এমন জোরে ডাক শুনে চমকে গেলাম বললে ভুল হবে। ভয় পেয়ে গেলাম। ফিরেই দেখি বুড়ো ভাল্লুক। ইচ্ছে মতো পিঠে ঘুষি মারতে লাগলাম।
ঃ ফাজিল। এমন করে কেউ চিৎকার দেয়?? আমি ভয় পাইসি না?
ঃ তা এতো উদাস হয়ে কার কথা ভাবছিলি? আমার কথা?
ঃ যা ভাগ। তোর কথা ভাবতে আমার বয়েই গেছে। আর আমি কার কথা ভাবি তা তোকে কেন বলব?
ঃ আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি শুনি? পাশের বাসার ভাইয়াকে?
ঃ আর যাকেই বলি, তোকে বলব না।
ঃ কেন? কেন? আমি কি করলাম?
ঃ তুই যে বদের বদ। তিলকে তাল করিস।
ঃ কি বললি?
ঃ যা শুনেছিস তাই। এখন ভাগ এখান থেকে।
ঃ ঠিক আছে যাচ্ছি। পরে ডাকলে কিন্তু আর আসব না।
ঃ আসিস না।
ঃ সত্যি কিন্তু।
ঃ আরে যা যা। তোকে আমার জানা আছে। বিড়াল একটা। দুদিন গেলেই আবার চলে আসবি। আমি ছাড়া তোর যাওয়ার জায়গা আছে নাকি?
ঃ মনে থাকল তোর কথাগুলো। গেলাম।
৩.
হঠাৎ পিছন রিকশা থেকে ধাক্কা খেয়েই সংবিৎ ফিরে এল।জ্যাম ছুটে রিকশা শহীদ মিনার পার হয়ে মেডিকেলের দিকে চলছিল। বুড়ো ভাল্লুকের কথা মনে পড়লো। আজ চার বছর ওর সাথে দেখা হয় না। জানি না কোথায় আছে? কেমন আছে? কি করে? এই রাস্তা ধরে কতবার ওর সাথে বাসায় ফিরেছি তার হিসাব নেই। ও বকবক করতো আর আমি চুপচাপ শুনতাম। মাঝে মাঝে কথা বন্ধ করে বলত, " তুই কিছু বলবি না?" আমি হেসে বলতাম, " আমি তো শুনছি।" আর সেদিন এমন কথাই বলেছি যে রাগ করে আর ফিরল না। কত খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। না মোবাইলে, না ভার্চুয়াল জগতে। এতো রাগ? এতো অভিমান? কি এমন বললাম আমি? সারাক্ষণ যে আমার পিছনে লেগে থাকত, আমকে না রাগালে যার পেটের ভাত হজম হতো না, আমার সাথে ঝগড়া না করলে যার ঘুম আসতো না সেই কিনা আজ আমার থেকে অনেক দূরে আছে অভিমান করে!!! কিন্তু বরাবরই অভিমানী ছিলাম আমি। অল্পতেই রেগে যেতাম।আবার অল্পতেই রাগ ভাঙত। আর আজ সে এমন অভিমানীই করলো যে আমাকে টার রাগ ভাঙ্গানোর সুযোগটাই দিলো না। এসব ভাবতে ভাবতে ভিতর থেকে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
৪.
ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা ছুই ছুই করছে। বারান্দায় এলাম। কাজটা করার জন্য এটাই সবচেয়ে নিরাপদ। প্যাকেট থেকে লাইটারটা বের করলাম। আজ একটা লাইটার কিনেছি বুড়ো ভাল্লুকের জন্য।সিগারেট খেত। ওর খুব শখ ছিল আমার টাকা দিয়ে সিগারেট খাওয়ার।কিন্তু কখনো সেটা পূরণ করিনি কারণ সিগারেট খাওয়া পছন্দ করতাম না। লাইটারটা জ্বালিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম। বারোটা এক মিনিট। " শুভ জন্মদিন বুড়ো ভাল্লুক"
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫