somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুড়ো ভাল্লুক

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
নীলক্ষেতে কাজ শেষ করে মল চত্বর হয়ে ঢুকলাম কলা অনুষদে। এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। তাই যখনই এই দিকে আসি হাঁটতে থাকি কলা অনুষদের ভিতর দিয়ে। আজ মনটা তেমন ভালো নেই। কিছুই ভালো লাগছে না। আজ বীথিও আসেনি। আর আসলেই বা কি। হাঁটার সময় কেউ থাকে না আমার পাশে। কাউকে রাখতে ইচ্ছাও করে না। তাই ক্লাশ শেষে কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে ওর থেকে আলাদা হয়ে যাই এখান দিয়ে হাঁটার জন্য। "আরে, আপু!", হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি ডিপার্টমেণ্টের জুনিয়র মুনিয়া। একটা হাসি দিলাম।
ঃ আপনি এখানে?
ঃ নীলক্ষেতে একটা কাজ ছিল। তাই এইদিকে আসলাম। ভালো লাগে হাঁটতে।তা তুমি এখানে?
পাশে একটা ছেলেকে দেখিয়ে হাসি দিলো। বুঝলাম বয়ফ্রেন্ড। আমিও হাসি ফিরিয়ে দিয়ে আর দেরী করলাম না। হাঁটতে লাগলাম লাইব্রেরীর দিকে। অনেক শান্তির একটা জায়গা। কেউ কারো দিকে খেয়াল করে না। যে যারযার কাজ করে। হঠাৎ মনে পড়ল আজ তো শুক্রবার। লাইব্রেরী বন্ধ। কি করব এখন? মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেলো। এই দিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম শাহবাগের দিকে। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাত নাম্বারে ভিড় দেখে আর উঠতে ইচ্ছে করল না। রিকশা ঠিক করলাম , বললাম টিএসসি হয়ে যেতে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে স্লোগান দিচ্ছে একটা মেয়ে। সম্ভবত লাকি। আমাদের ক্যাম্পাসের ।কয়েকবার দেখেছিলাম। রিকশা টিএসসির দিকে চলল। হুডটা নামিয়ে দিলাম। বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। এই ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগে। রাজু ভাস্কর্যের কাছে এসে দেখলাম দোয়েল চত্বরের রাস্তা বন্ধ। আমি বললাম, '' মামা,আপনি শহীদ মিনার হয়ে যান।" সামনেই একটা কনসার্ট হচ্ছিলো। বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য । এখানেও জ্যাম। কি আর করা? রিক্সায় বসে কনসার্ট দেখছি। একজন গান গাচ্ছিল, "আজ কেন মন উদাসী হয়ে...." গান শুনতে শুনতে নিজেই উদাসী হয়ে গেলাম।


২.
ঃ বুড়ি
ঃ ও মা গো
হঠাৎ এমন জোরে ডাক শুনে চমকে গেলাম বললে ভুল হবে। ভয় পেয়ে গেলাম। ফিরেই দেখি বুড়ো ভাল্লুক। ইচ্ছে মতো পিঠে ঘুষি মারতে লাগলাম।
ঃ ফাজিল। এমন করে কেউ চিৎকার দেয়?? আমি ভয় পাইসি না?
ঃ তা এতো উদাস হয়ে কার কথা ভাবছিলি? আমার কথা?
ঃ যা ভাগ। তোর কথা ভাবতে আমার বয়েই গেছে। আর আমি কার কথা ভাবি তা তোকে কেন বলব?
ঃ আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি শুনি? পাশের বাসার ভাইয়াকে?
ঃ আর যাকেই বলি, তোকে বলব না।
ঃ কেন? কেন? আমি কি করলাম?
ঃ তুই যে বদের বদ। তিলকে তাল করিস।
ঃ কি বললি?
ঃ যা শুনেছিস তাই। এখন ভাগ এখান থেকে।
ঃ ঠিক আছে যাচ্ছি। পরে ডাকলে কিন্তু আর আসব না।
ঃ আসিস না।
ঃ সত্যি কিন্তু।
ঃ আরে যা যা। তোকে আমার জানা আছে। বিড়াল একটা। দুদিন গেলেই আবার চলে আসবি। আমি ছাড়া তোর যাওয়ার জায়গা আছে নাকি?
ঃ মনে থাকল তোর কথাগুলো। গেলাম।


৩.
হঠাৎ পিছন রিকশা থেকে ধাক্কা খেয়েই সংবিৎ ফিরে এল।জ্যাম ছুটে রিকশা শহীদ মিনার পার হয়ে মেডিকেলের দিকে চলছিল। বুড়ো ভাল্লুকের কথা মনে পড়লো। আজ চার বছর ওর সাথে দেখা হয় না। জানি না কোথায় আছে? কেমন আছে? কি করে? এই রাস্তা ধরে কতবার ওর সাথে বাসায় ফিরেছি তার হিসাব নেই। ও বকবক করতো আর আমি চুপচাপ শুনতাম। মাঝে মাঝে কথা বন্ধ করে বলত, " তুই কিছু বলবি না?" আমি হেসে বলতাম, " আমি তো শুনছি।" আর সেদিন এমন কথাই বলেছি যে রাগ করে আর ফিরল না। কত খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। না মোবাইলে, না ভার্চুয়াল জগতে। এতো রাগ? এতো অভিমান? কি এমন বললাম আমি? সারাক্ষণ যে আমার পিছনে লেগে থাকত, আমকে না রাগালে যার পেটের ভাত হজম হতো না, আমার সাথে ঝগড়া না করলে যার ঘুম আসতো না সেই কিনা আজ আমার থেকে অনেক দূরে আছে অভিমান করে!!! কিন্তু বরাবরই অভিমানী ছিলাম আমি। অল্পতেই রেগে যেতাম।আবার অল্পতেই রাগ ভাঙত। আর আজ সে এমন অভিমানীই করলো যে আমাকে টার রাগ ভাঙ্গানোর সুযোগটাই দিলো না। এসব ভাবতে ভাবতে ভিতর থেকে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

৪.
ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা ছুই ছুই করছে। বারান্দায় এলাম। কাজটা করার জন্য এটাই সবচেয়ে নিরাপদ। প্যাকেট থেকে লাইটারটা বের করলাম। আজ একটা লাইটার কিনেছি বুড়ো ভাল্লুকের জন্য।সিগারেট খেত। ওর খুব শখ ছিল আমার টাকা দিয়ে সিগারেট খাওয়ার।কিন্তু কখনো সেটা পূরণ করিনি কারণ সিগারেট খাওয়া পছন্দ করতাম না। লাইটারটা জ্বালিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম। বারোটা এক মিনিট। " শুভ জন্মদিন বুড়ো ভাল্লুক" :)

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×