১.
মেঝের উপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে অপরাজিতার শরীরটা। ওর শরীরের চারপাশে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে অপরাজিতার মনে হচ্ছে কে যেন “অপা” “অপা” বলে ডাকছে আর কান্না করছে। অপরাজিতার হঠাৎ সে দিনের কথা মনে পড়লো যে দিন রাজ্যকে নিয়ে মায়ের সাথে ওর ঝগড়া হয়।মায়ের কথায় কষ্ট পেয়ে এক গাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে যখন পড়েছিল তখন মা ওকে "অপা অপা" বলে ডাকছিল আর কান্না করছিল,কথা গুলো ওর আপুর মুখ থেকে শোনা। সময়টা ছিলো রোজার মাস। অপা যখন এই কান্ডটা করল তখন আযান দিচ্ছিল। সবাই তখন ইফতার না করে অপাকে নিয়ে ব্যস্ত। খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন সবার, এই প্রথম অপা সবার মনে কষ্ট দিল। কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলো না অপার মত শান্ত মেয়ে এমন একটা কাজ করবে।
২.
রাজ্যের সাথে সম্পর্কের কথা যখন ওর মা জানতে পারে তখন থেকে অপার মায়ের সাথে ঝগড়া শুরু। অনেক চেষ্টা করেও কেউ অপাকে বুঝাতে পারলনা যে রাজ্যের ভিতরে একটা পশু বাস করে। সময় হলেই সেটা জেগে উঠে। কিন্তু অপা ওকে অবিশ্বাস করবে কিভাবে?রাজ্য যে ওকে অনেক ভালোবাসে। ইতিমধ্যে অপা রাজ্যকে যতগুলা পরীক্ষা করেছে রাজ্য সব গুলাতে উত্তীর্ন হয়েছে। রাজ্যকে যতই দেখে অপা ততই মুগ্ধ হয়। এতো সুন্দর কেউ হতে পারে!!! কিন্তু অপা ভেবে পায় না যে, কেন রাজ্য ওকে এতো ভালোবাসে, ওতো দেখতেও তেমন সুন্দর না, হয়তো এমন কিছু আছে ভালো লাগার যা রাজ্য ওর মাঝে খুঁজে পেয়েছে। দিনে দিনে রাজ্যের প্রতি ওর বিশ্বাস আর ভালোলাগা বাড়তে থাকে। রাজ্যের ভালোবাসায় ও অন্ধ হয়ে পড়ে। রাজ্য যা বলে তাই ও বিশ্বাস করতে শুরু করে। এমন কি আজ যা বলছে তাও।
৩.
বিকেল বেলায় অপা রাজ্যের বাসায় চলে আসে। আস্তে আস্তে রাজ্যের কিছু ছেলে বন্ধুও চলে আসে। আজ রাজ্যের বাসায় ওরা ওদের Anniversary পালন করবে। রাজ্য বলছে ওর জন্য একটা সারপাইজ আছে। কেক কাটার পর ওরা মজা করল। তারপর রাজ্য ওকে গ্লাস ভর্তি কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে বলল এটা খেয়ে তৈরি হয়ে নিতে সারপাইজের জন্য। খাওয়ার কিছুক্ষন পরেই অপার কেমন যেন তন্দ্রা শুরু হল। তারপর আর অপার কিছু মনে নেই। যখন ওর জ্ঞান ফিরল তখন ও অনুভব করলো তলপেটে প্রচণ্ড ব্যাথা করতেছে। ও ব্যাথায় চিৎকার করতে চাচ্ছিল কিন্তু পারলো না। অপা দেখলো তার মুখ, হাত , পা সব বাধা। তারপর চোখের সামনে যা হল তা দেখে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায়ই ছিলো না। অপা রাজ্যের পশুর মত চেহারাটা দেখে আবার জ্ঞান হারালো। তারপর অপার আর কিছু মনে নেই…………
৪.
খুব শখ করে অপার বাবা ওর নাম দিয়েছিলো অপরাজিতা। ঠিক করেছিলো মেয়েকে এমনভাবে তৈরি করবেন যেন সে কোন কিছুতেই পরাজিত না হয়। হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়তেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা জল। বাবার দেওয়া নামটা আজ ব্যর্থ হয়ে গেল।অপা মনে মনে রাজ্যের দেয়া সারপাইজ এর কথা ভাবল তারপর চোখ বন্ধ করলো শেষ বারের মতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪