বলাকা সিনেমা হলের সামনের ওভারব্রিজ পার হয়ে নিউমার্কেট ঢুকলাম।কেনাকাটার উদ্দেশ্যে নয়,সময়টা কাটানোর জন্য।কেনাকাটা করার উদ্দেশ্য না থাকলে মার্কেটের ভিতর হাঁটতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।কিন্তু কিছু করার নেই।শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করছি।সে আসবে ধানমন্ডি থেকে।বিশাল জ্যাম তাই হেঁটে আসছে।অনেকক্ষণ হয়ে গেল।হেঁটে আসতে কি এতক্ষণ লাগে নাকি?আসলে আমার অপেক্ষা করতে খুব বিরক্ত লাগে।তবে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করতে তেমন একটা খারাপ লাগে না।কিন্তু আজ লাগছে কেন?নিউমার্কেটের এক নাম্বার গেইট থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে ফুটপাতের একটা চায়ের দোকানের এসে বসলাম।এই দোকানটায় আগেও একবার এসেছি।একা একটা মেয়ে হয়ে দোকানের পাশে বসে থাকতে কেমন যেন লাগছে। মেয়ে এই শব্দটা শুনলে শুভ্র খোঁচা দেয় ,"রেখেছো মেয়ে করে,মানুষ করোনি।মিয়া,মানুষ হও।মেয়ে মানুষ না।"বুঝলাম না আজ এতো অস্বস্তি লাগছে কেনো?দিনটাই কি অস্বস্তির? যদিও আজকের ভোরটা শুরু হয়েছে ভয়ানক একটা স্বপ্ন দেখে।স্বপ্নের মাঝেই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছি।হঠাৎ টের পেলাম আমি সত্যি সত্যি কাঁদছি।চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে।এমন স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি আর কান্না করি।কেনো দেখি জানি না।
এখনো শুভ্রর দেখা নেই।এবার বিরক্তিটা রাগে রূপ নিচ্ছে। অথচ শুভ্র এমন একটা মানুষ যার সাথে রাগ করা যায় না।রাগ করলেন তো হেরে গেলেন টাইপের।নিজের জন্য চায়ের অর্ডার দিব তখনি শুভ্র হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির হয়ে বলল,"দুকাপ চায়ের অর্ডার দাও।" আমি অর্ডার দিয়ে ওর পাশে এসে বসলাম।একবার দেখে নিলাম।বড্ড হাঁপাচ্ছে।মনে হচ্ছে দৌড়ে দৌড়ে এসেছে।মামা চায়ের কাপ দুটো আমাদের হাতে দিয়ে গেলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে শুভ্র বলল,"তারপর কি অবস্থা?" এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।সাথে সাথে বলা শুরু করলাম আগা-গোড়া।বলার ফাঁকে একবার ওর দিকে তাকালাম।আমার কথাগুলো শুনছে তো? উফ্,আবার মেয়েমানুষের মতো ব্যবহার শুরু করলাম।ধুর।না এমন ব্যবহার করা যাবে না।যদিও শুভ্রকে দেখে মনে হচ্ছে সে মনোযোগ দিয়ে শোনার পরিবর্তে মনোযোগ দিয়ে চা খাচ্ছে। যাই হোক,আমার বলার বলে গেলাম।চা শেষ করে একটা সিগারেট ধরালো।শুভ্রর সাথে আমার একটা ডিল আছে।আমার চায়ের বিল শুভ্র দিবে আর আমি ওর সিগারেটের বিল দিব।যদিও সিগারেট খাওয়া আমার পছন্দ না তবুও মানা করি না।
আমি বলা শেষে চুপ করে রইলাম।তারপর শুভ্র কিছুটা বিরক্তিভাব নিয়ে বলল,"তুমি মিয়া একটা আজিব পাবলিক। তোমার মাথায় কি এইসব ছাড়া আর কিসু নাই?" আমি ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম।কেনো জানি ওর প্রতিটা কথা খুব মজা লাগে।যদিও ওর বলার ধারণাটাই এমন।"আরে,তুমি আমার কথা শুনো।কাল আমার স্টুডেন্ট আমার দিকে যে লুক দিসে।আমি তো পুরা ফিদা হয়ে তারে রাতে তিনবার স্বপ্নে দেখসি।" ওর কথা শুনে আমি মুহুর্তেই ভুলে গেলাম নিজের কথা।শুধু আফসোস সবার কথা ওকে বলতে পারলেও ওর কথা কাউকে বলতে পারি না।ছোট্ট একটা নিশ্বাস বেরিয়ে এলো এই ভেবে.........
(চলবে)