কথা বলতে বলতে শুভ্র হঠাৎ আঙুল উঁচিয়ে উপর দিকে কি যেনো দেখালো। আমি ওই দিকে তাকাতেই দেখি আকাশের চাঁদ দেখাচ্ছে। "হুম চাঁদ। দেখসি তো।" বলেই ওর কথায় আবার মনোযোগ দিলাম। আসলে ওর কথাগুলো সব সময় এতো ভালো লাগে যে একটা সাধারণ কথাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি। হঠাৎ কথার মাঝে দিয়ে একটা কথা মনে পড়লো। ওকে বললাম,"সেদিন একটা ঘটনা শুনলাম।" কথার মাঝখানে কথা বলা এই আমার একটা বদ অভ্যাস। শুভ্র কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল, " জানো, আমার আম্মা কি বলেন? কথার মাঝে কথা তারাই বলেন যারা ভুলে যান। আচ্ছা, বলো কি ঘটনা?" আমি বুঝতে পেরে খানিকটা লজ্জা পেলাম। বললাম,"না না। তুমি বলো।" শুভ্র মাথা ঝাকিয়ে বলল, " আমি ভুলে যাবো না। তুমি বলো।" শুভ্রর তেমন মনোযোগ নেই দেখে বললাম,"চল, হাঁটি। অনেকদিন শাহবাগ যাওয়া হয় না।" আমার প্রস্তাব শুনে শুভ্র বলল,"এত দূর!!! আগে কেনও বললে না? " "আচ্ছা, তোমার দেরী হলে দরকার নেই।" আমি সাথে সাথে বললাম। "না ঠিক আছে।চল।" হাঁটতে হাঁটতে আর শুভ্রর কথা শুনতে শুনতে কখন যে চলে এলাম শাহবাগ টের পাইনি। মনে হল খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়াতেই একটু ধাক্কা লাগতেই বলল, " আরে মিয়া, ভেবো না যে তোমার হাত ধরব। জীবনে যদি কোনো মেয়ের হাত ধরি তাইলে পুষ্পিতার হাতই ধরব।তাও আবার পারমিশন নিয়ে। সেদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবো ,দেখো।" আমি ওর কথা শুনে হেসে নিলাম। বিদায় নিয়ে হাঁটতে লাগলাম বাসের জন্য। শুভ্রর কথা ভাবতে ভাবতে। বেচারা, কি টেনশনের মাঝেই না আছে।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সাতটা বেজে গেছে। ইশ, আজও দেরী।
রাতের বেলা ঘুমানোর আগে বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখি পুরো দিনের আলোর মতো বারান্দায় আলোয় ভর্তি। ব্যাপার কি? আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি পূর্ণিমার চাঁদ। এইটা কোন কথা? আজ যে পূর্ণিমা আমার মনেই ছিল না। ধুর।
ঃ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বসে কখনো পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে দেখতে ঝালমুড়ি খেয়েছো?
ঃ না তো।
ঃ কি বলো? তাহলে তো তোমার লাইফটাই বৃথা।
ঃ তাই?
ঃ হুম। তুমি ভাবতেও পারবে না পূর্ণিমার আলো এতো সুন্দর হয়।
ঃ আমি তো গ্রামের বাড়িতে দেখেছি।
ঃ আরে এখানেরটা আরও বেশি সুন্দর।
ঃ তাহলে পরবর্তী পূর্ণিমা দেখবো আমরা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বসে আর ঝালমুড়ি খাবো। ঠিক আছে?
ঃ ঠিক আছে। আর তুমি চিনি ছাড়া চা আর আমি সিগারেট।সিগারেটের বিল তুমি দিবে।
ঃ চা ঠিক ছিল। আবার সিগারেট কেনো?
ঃ তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার সিগারেট টানতে ভালো লাগে তাই।
তারপর থেকেই অপেক্ষা করতে থাকি শুভ্রর সাথে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার জন্য।আর আজ নিজের বোকামির জন্য দেখাই হলো না পূর্ণিমার চাঁদ। এখন মনে পড়ছে কেনও শুভ্র চাঁদ দেখিয়েছিল তখন।ইশ, কেনও যে মনে পড়লো না!!!! যদিও খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে খারাপ লাগছিল না।হয়তো শুভ্রও দেখছে তার ঘরের জানালা দিয়ে। দুজন দুজায়গায় তাতে কি?একটা গান মাথায় ঘুরছিল," আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ........"
.............
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৭