ঘুম থেকে উঠে ঢুলুঢুলু চোখে নিজের ঘর থেকে বাবা-মায়ের ঘরে চলে এলাম।নুজের ঘর বললে ভুল হবে।আসলে একান্নবর্তী পরিবারে নিজের ঘর বলতে কিছু থাকে না।বলতে হয় আমাদের ঘর।যাই হোক,আমার একটা বদঅভ্যাস হলো সকালবেলা ক্লাশ,পরীক্ষার ঝামেলা না থাকালে নিজেদের ঘর থেকে উঠে এসে মা-বাবার ঘরে এসে আরেকবার ঘুমানো।খাটে বসতেই ঘড়ির দিকে চোখ গেল ১১:৩০টা বাজে।হায় হায় এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি!!!! এক মূহুর্তেই ঘুম পালালো।কারণ এখন আবার ঘুমানো মানে নির্ঘাত মায়ের বকুনি খাওয়া।যেটা মোটেও সহ্য হয় না।দিনদিন মনে হচ্ছে সহ্য ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। খবরেরকাগজ নিয়ে বসলাম।হঠাৎ শুভ্রর ছোট্ট একটা মিসডকল। সাথে সাথে ব্যাক করলাম।রিসিভ করেই,
"আরে আমি তো এমনেই দেখছিলাম তুমি জেগেছো কিনা।এতোবেলা হলো কোনো খোঁজ নাই।"
"মাত্র জেগেছি।"
"হুম।ওগো তোমারে যে দেখতে মন চায়।একটু আসো দেখা দিয়ে যাও।গল্পগুজব করব,চা খাব।তারপর তোমারে বাস ভাড়াসহ বাসে উঠায় দিয়ে আমি বাসার দিকে যাব।",শুভ্রর কন্ঠে আহ্লাদ।
খানিকটা হেসে বললাম,"কিন্তু বাসায় তো জানে যে আমার ক্লাশ নাই"
"কতদিন তোমারে দেখি না।"
"আচ্ছা, ঠিক আছে আসব।"
ফোনটা রেখেই তাড়াহুড়ো শুরু করে দিলাম।ঘরের কাজে কিছুটা সাহায্য না করলে সমস্যা।এমনেই কোনো কাজ করি না।সারাদিন বাইরে থাকি।আজ একটু বাসায় থাকব ভাবছি তাও শুভ্রর জন্য থাকা হলো না।খানিকটা কাজ করে বেরিয়ে পড়লাম।
হাকিম চত্বরে বসে দুকাপ চা নিয়ে বসলাম।শুভ্র সাথে একটা সিগারেট ধরালো।সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে,"মাথাটা ভীষণ ধরেছে।ঘুম ঘুমও পাচ্ছে। তুমি একটা বালিশ নিয়ে আসলে তোমার কোলে বালিশ রেখেই ঘুমিয়ে পড়তাম",বলেই হেসে দিল।"তারপর কি অবস্থা? " আমি ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে ছোট্ট একটা হাসি দিলাম।শুভ্র ভালো করেই জানে এই হাসির মানে।"এই তুমি এমন কেন?দুনিয়াতে মানুষ ভালো থাকার কারণ খোঁজে আর তুমি তার উল্টা।দুঃখে থাকার কারণ খুঁজো।তোমার এই সেন্টিমেন্টগুলা ভাঙার কতো চেষ্টা করলাম।পারলাম।তুমি মিয়া মানুষ হবা না।" এবার সত্যি সত্যি হেসে দিলাম। খানিকটা বিরক্তিভাব ভাব নিয়ে বলল,"হাসো কেন? ভাবসিলাম আজকে দুজন মিলে গল্পগুজব করব।তোমার-আমার গল্প।" "হুম।" "দাঁড়াও,আরেকটা সিগারেট নিয়ে আসি।" ও উঠে যেতেই আমি ওকে খেয়াল করলাম ভালো করে।পিচ্চিদের মতো দেখতে,খাড়া চুল,চোখে চশমা।দেখে অত্যন্ত শান্ত বলে মনে হয়।তবে চশমা পড়ায় একটা জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব আছে। একটা সময় চশমা পড়া ছেলেদের খুব ভালো লাগত।কেমন যেনো আলাদা একটা ভাব।মেয়েদের চশমা পড়লে মনে হয় মেয়েরা স্টাইলের জন্যই চশমা পড়ে।ভাবতে নিজের চশমাটা ঠিক করে মনে মনে হাসলাম।হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পাশে দুইহাত দূরে একটা ছেলে বসেছে।চোখ চোখ পড়তেই সামনে ফিরে তাকালাম।দেখি শুভ্র চলে এসেছে সিগারেট নিয়ে।শুভ্র বসতেই ছেলেটা উঠে গেলো।ব্যাপারটা শুভ্র খেয়াল করে জানতে চাইল,"চেনো নাকি?" "না তো।" "তাইলে কি এতোক্ষণ তোমার পাশে বসে লাইন মারছিল?" "কেমনে বলব?আমি তো খেয়ালই করিনি।" আজকাল এসব খেয়াল করি না।ভালো লাগে না।একটা সময় আসে যখন আমরা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মনোযোগ চাই।আমার হয়তো সে সময়টা এসে গেছে।সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসের জন্য আমার দিকে চলে আসছিল।খারাপ লাগছিল।কিন্তু কিছু বললাম না।হঠাৎ মায়ের কল।রিসিভ করতেই বলল,"তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসিস।" "আচ্ছা ", বলে রেখে দিলাম। "কি বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেসে না?" "হুম।" "আমি জানতাম।চলো।" হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম শাহবাগ। রিকশা নিলাম।বাসার কাছে আসতেই দেখলাম শুভ্রর মেসেজ। "আজ পকেটে মাত্র ২০০টাকা ছিল।অলরেডি ১০০টাকা শেষ।বাস ভাড়া দিতে পারলাম না।সরি।তোমার ব্যাগের ছোট পকেটে একটা ৫০টাকার নোট দিয়ে দিয়েছি।ধরে নাও এটা আজকে দেখা করার জন্য উপহার। :-) "
মেজাজটা কি খারাপ হলো .....
(চলবে)