somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু তুমি-৬

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টানা পনের মিনিট দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম বৃষ্টি থামার জন্য।কিন্তু থামার কোনো নাম-গন্ধও নেই।আজকের আবহাওয়াটা দারুণ সুন্দর।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি,হালকা ঠান্ডা বাতাস আর স্যাঁতস্যাঁতে একটা গন্ধ।মাথা নষ্ট করে দেয়ার মতো।ভালোই লাগছে।যাক,তাহলে অনুভূতিগুলো মরে যায়নি।গতকাল রাতের পর মনে হয়েছিল অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছি।ইশ্,রাতগুলো এতো ভয়ানক হয় কেনো!!!! হঠাৎ ব্যাগের ভেতর মোবাইলের তীব্র কম্পন ভাবনায় ছেদ ফেলল।মোবাইলটা বের করেই দেখি শুভ্রর ৫ মিসডকল।হায় ভগবান,আমি টেরই পেলাম না!!!ব্যাক করলাম।
"কই তুমি?বের হইসো?"
"হুম।বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়।"
"ভালো তো।আমি আরো তোমার জন্য বসে আছি।"
"আচ্ছা, ঠিক আছে আসছি।একটু অপেক্ষা করো।"
ছাতা নেই।তাই হাঁটা শুরু করলাম।লাইব্রেরী থেকে সোজা টিএসসিতে।এই বৃষ্টির মাঝে শুভ্র বসে আছে।ভিজছে আর সিগারেট টানছে।আজব,বৃষ্টির মাঝে সিগারেট খায় কিভাবে!!!! পাশে বসে বললাম,"কি হয়েছে?বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো?"
"মনটা খুব খারাপ।" সিগারেটটা ফেলে জুতার তলা দিয়ে পিষে ফেলল।
আমি ওর কথায় খানিকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম,"কেনো?"
"পুষ্পিতা আরেকজনের প্রেমে পড়েছে।এইটা কিছু হইলো বলো? প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার আগেই ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেলাম। আমার কিছুই ভালো লাগছে না গো তিলি।"
শুভ্র আচরণ কেমন যেনো লাগল।কারণ শুভ্রকে যতটুকু চিনি সে এতো সহজে ভেঙে পড়ার মতো ছেলে না।তবে এমন হওয়ার মানে কি সত্যি সত্যি সে পুষ্পিতারে পছন্দ করত?
"আহারে।মন খারাপ করো না।" বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
"আচ্ছা, মেয়েরা এমন কেন বলোতো?"
"তার আগে বলো ছেলেরা এমন কেন?"আমি উল্টা প্রশ্ন করলাম।
"মানে?" শুভ্র আমার দিকে ফিরে তাকালো।
"আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।আমি ওকে বলে দিয়েছি ভালো লাগার কথা।"
"বাহ্,এতো খুব ভালো কথা।ভুল কেনো হবে? সে কি উত্তর দিল?" খানিকটা উৎসুক কন্ঠে শুভ্র জানতে চাইল। "সে কনফিউজড।",একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
"ধুর।এইটা কেমন কথা?"
"হুম।কাল থেকে আমার সবকিছু বিরক্তিকর লাগছে।ভালো লাগছে না।"বলে মাথার চাদরটা টেনে দিলাম।বৃষ্টির ফোঁটাটা আমার জন্য খুব একটা সুবিধার না। "বুঝতে পারছি তিলি।আমারও একই অবস্থা। এজন্যই তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।গল্প করার জন্য।আচ্ছা, বাদ দাও এই ব্যাপারগুলো।" অনেকটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল শুভ্র। বাদ দিতে বললে তো বাদ দেয়া সম্ভব না।পোকার মতো মাথার ভিতর খালি পিলপিল করতেই থাকে।তবে শুভ্রর সামনে এখন আর এই ব্যাপার তোলা যাবে না।কারণ সে খুবই বিরক্ত হবে।আর ওকে বিরক্ত করার ইচ্ছে আমার নাই।
বৃষ্টি থেমে গেছে।শুভ্র বলল,"চলো উদ্যানের ভিতর যাই।" আমি মাথা দুদিকে ঘুরিয়ে মানা করলাম। "প্লিজ, চলো।সেদিন তো চাঁদ দেখা হয় নাই।আর এখন তো দিন।চলো।" আমি খানিকটা ইতস্তত করে বললাম,"আমার ভালো লাগে না।" দেখলাম শুভ্রর মনটা খারাপ হয়ে গেলো।তারপর বললাম,"আচ্ছা, চলো বেশি ভিতরে যাব না।" শুভ্র খুশি হয়ে বলল,"আচ্ছা, ঠিক আছে।" রাস্তা পার হয়ে ঢুকলাম।
খানিকটা হাঁটার পর আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে আর ভালো লাগছিল না।তাই শুভ্রকে তাড়া দিলাম বের হওয়ার জন্য।শুভ্র কথায় কান না দিয়ে একটা উঁচু জায়গায় এসে বলল,"চলো এখানে বসি।এই জায়গার বিশেষত্ব কি জানো?" " না।" "এখানে উঠতে হলে অবশ্যই হাত ধরতে হয় আরেকজনের। " বলেই একটা দুষ্টুমির হাসি দিল। আমিও মাথা নেড়ে বললাম,"আমি হাত ধরা ছাড়াই উঠতে পারব।" "হুম।সেটা তো বুঝতে পারছি।না মানে তোমার হাত ধরতে হলে তো আমার পকেটের ভেতর থেকে হাত দুটো বের করতে হবে।যেই ঠান্ডা আজকে।আমার তো হাত বের করতে ইচ্ছে করছে না।" বলেই হাসতে লাগল।আমিও হাসতে লাগলাম।
উদ্যান থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হতে হতে বললাম,"তোমার বউকে আমার কথা বলবে কিন্তু।তাকে এটাও বলবে যে আমার কখনো হাত ধরে রাস্তা পার হইনি,আমরা কখনো পাশাপাশি ঘেঁষে বসিনি।একটা দূরত্ব রেখে হেঁটেছি পাশাপাশি। " শুভ্র মুখ বাঁকিয়ে বলল,"জীবনেও তোমার কথা বলব না।বললে আমার সংসার ভেঙে যাবে।" আমি ওর কথা শুনে হাসতে লাগলাম।ভুলে গেলাম গতরাতের কথা।
লাইব্রেরীর পাশে বসে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ হঠাৎ।শুভ্র কিংবা আমাকে দেখে কে বলবে যে মন খারাপ? হঠাৎ মাথাটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরলাম। মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।শুধু পারছিলাম না চিৎকার দিতে।আমার এ অবস্থা দেখে শুভ্র ভয় পেয়ে গেল। "কি হয়েছে তিলি?"
"মাথা ব্যথা" ,বললাম।
"হঠাৎ!!!"
"না,গত কয়েকদিন ধরেই।আজকে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে আরো এমন হচ্ছে। "
"ভিজলে কেনো?"
মাথাটা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বললাম,"তোমার জন্য।"
"এই প্রেমিকার মতো ব্যবহার করবা না।বুঝছো?দশ হাত দূরে বসো আবার প্রেমিকার মতো ব্যবহার করো।চলো,বাসায় যাও।আজ আর আড্ডা দিতে হবে না।" শুভ্র উঠার জন্য তাগিদ দিতে লাগল। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছিল বসতে,আড্ডা দিতে।পারলাম না।শাহবাগ গেলাম দুজনে হাঁটতে হাঁটতে।শুভ্র বাস চলে এসেছে।সে দৌড়ে উঠে গেলো।কি খারাপ!!!! আমাকে একা ফেলে চলে গেলো!!! :-(
(চলবে)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×