somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোট্ট ভাইটি..............

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন আমার বয়স সাত। বহুদিন ধরেই জানতাম আমাদের বাসায় একটা নতুন বাবু আসছে। ছোটখালামনি এসে ছিল তখন আমাদের সাথে, মামনিকে দেখার জন্য। একদিন রাতে দেখলাম আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যরুমে। এতটুকু দেখেই আবার ঘুমিয়ে গেছি। পরদিন বৃহস্পতিবার, সকাল সকাল ছোটখালামনি ঘুম ভাঙিয়ে বলল, 'উঠো উঠো। তোমার তো একটা ভাই হইছে।' ধরমর করে উঠে বসে চোখ কচলাচ্ছি, 'কোথায়? কোথায়?' তারপর শুনলাম বাবুটা এখনো হাসপাতালেই আছে। একটু পরে আব্বু এসে আমাদের দুই বোনকে নিয়ে গেল হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কি হল, বাবুটা কেমন ছিল আর কিছু মনে নাই। পরের দিন বাসায় নিয়ে আসল বাবুটাকে। ওইদিন আমার জ্বর ছিল। কিন্তু সবাই দেখি আমাকে বাদ দিয়ে বাবুটাকে নিয়েই ব্যস্ত। এত হিংসা হয়েছিল তখন।

ইশতি, আমার ছোট্ট ভাইটি................টিন এজের না বড় না ছোট বয়সটা পার হয়ে আজ পা দিল বিশে। হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার ব্রাদার।

ছোটবেলায় একদম গুল্লু গুল্লু ছিল ওর চেহারাটা, বড় বড় অবাক দুটো চোখ আর খাড়া খাড়া চুল, চুল দেখেই বোঝা যায় কি প্রচন্ড জেদী। কিছু হলেই রেগে যেতো আর টেনে টেনে আলনার কাপড় সব ফেলে দিতো। আর আমার সাথে তো সারাক্ষণ ঝগড়া, মারামারি লেগেই থাকতো। মারামারি মানে হল ঝগড়া হলে ও আমাকে আক্রমণ করতো আর আমি শুধু কোনরকম ঠেকানোর চেষ্টা করতাম। আর কিছু হলেই মামনিকে আমার নামে নালিশ। একবার চিনিতে পিঁপড়া ধরায় মামনি একটা ট্রেতে চিনি নিয়ে রোদে দিয়েছিল। আমি বসে বসে বড় বড় দানাগুলো খুটে খাচ্ছিলাম। ইশতি চিৎকার করে মামনিকে ডাকছে, 'আম্মা, ছোটআপা হাজার হাজার চিনি খায়।' যত ঝগড়া, নালিশ সব ছোটআপার সাথে। বড়আপার সাথে কিন্তু অনেক খাতির ছিল। ছোটবেলায় ওকে বলতাম বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে আসবো আর বাসার সব কাজ ওর বউকে দিয়ে করাবো। কিছুতেই এটা তার সহ্য হতো না। বউয়ের দুঃখে চোখে পানি চলে আসতো। আমরা নিজেরা খুব ঝগড়া করলেও বাইরের কেউ যদি আমাদের একজনকে কিছু বলতো, আরেকজন কিছুতেই সহ্য করতাম না। জোর প্রতিবাদ করতাম।

কোত্থেকে যেন শিখেছিল, ও আমাদের দুইবোনকে আপনি করে বলতো। এখন অবশ্য আমাকে আপনি, তুমি, তুই সবই বলে। স্বাভাবিক কথা বলার সময় আপনি, বেশি মুডে থাকলে তুই, আর ঝগড়া হলে তুমি। তুমি মানে অনেক দূরের কেউ।

এক ছেলে, সবার ছোট, আদর অনেক বেশি ছিল। খুব জেদী হলেও সে হিসাবে আমার ভাইটা অনেক লক্ষ্মী কিন্তু। একা একাই গুট গুট করে খেলতো, দুই একটা অসুখ বিসুখ ছাড়া তেমন জ্বালাতো না। খুব ভুগতো ছোটবেলায়, পেটের সমস্যায় বেশি। একবার এমনকি হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। একবার ঈদের আগে আব্বু একটা ছো্ট্ট ট্রেন নিয়ে আসছে। কি খুশি...'ঈদের ট্রেন'...সারাসন্ধ্যা খেলল ওটা নিয়ে, রাতে মাথার কাছে নিয়ে ঘুমাল। আর ছিল বন্ধু সোহান । সারাদিন দুইজনে কত খেলা যে খেলতো।

বড়আপার বিয়ে হওয়ার পর আস্তে ধীরে একটু একটু করে ওর খাতির হয়েছে ছোটআপার সাথে। ছোট ছোট ছোট সব ঘটনা ছোটআপার সাথে শেয়ার না করলে ওর ভালই লাগে না। হয়তো আমি কোন কাজ করছি বা পড়ছি কিছু, এসে কানের কাছে বকবক বকবক করতে থাকে। সবসময় সব শুনিও না হয়তো, শুধু একটু হু, হা। ব্যস তাতেই হল।

ও যখন বুয়েটে চান্স পেল, আমি খুব হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। ওইদিনের পিচ্চিটা দেখতে দেখতে এত বড় হয়ে গেছে! ভার্সিটিতে পড়বে! ওইদিন অনেকদিন পর খুব ভাল করে দেখেছিলাম ওকে। গুল্লু গুল্লু পিচ্চিটা হাতে পায়ে লম্বা হয়েছে কত। মুখটাও কেমন লম্বাটে হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও চেহারার একটা পিচ্চি পিচ্চি ভাব রয়ে গেছে। দেখলেই একটু গাল টিপে দিতে, চুল টেনে দিতে ইচ্ছা করে। আমি করিও সেটা প্রায়ই। :)

আমার ব্লগে লেখা নিয়ে ওর খুব বিরক্তি। একদম পছন্দ করে না। একদিন অনেক অনুরোধ করে ওকে আমার একটা লেখা পড়ালাম। পাজি...অর্ধেক পড়েই বলছে, 'এইটা তুই কোত্থেকে মারছিস?' ভাবটা এমন আমি নিজে লিখতে পারি না। আরেকদিন একটা সিনেমা দেখছি বসে বসে যেখানে বেনজামিন নামটা আছে। তারমধ্যে ও কেমিস্ট্রি নিয়ে কি কথা বলতে আসছে। আমি ভুলে বেনজিন না বলে বেনজামিন বলে ফেলছি। আর কি ভেঙানো, 'ছি তুই ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারের বোন।' এইরকম খুনসুটি, একজন আরেকজনকে পচানো চলতেই থাকে সারাক্ষণ। কিন্তু ও যে আমাকে কতটা ভালবাসে বুঝতে পারি যখন আমার চলে যাওয়ার কথা শুনে ও বিচলিত হয়ে উঠে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে, 'চলে যাবি? তাইলেতো মুশকিল।' কি যে মুশকিল কে জানে। কিন্তু আমিও তখন খুব বিচলিত হয়ে যাই।

যদিও কখনো বলা হয়নি, কিন্তু আমরা দুজনই জানি কতটা ভালবাসা, স্নেহ আর মমতা দুজনের জন্য।

আমার ছোট্ট ভাইটা, জন্মদিনে অনেক ভালবাসা।

শুভ জন্মদিন ইশতি বুড়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১:১৯
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×