somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার তোমাকে খুঁজি

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তোমাকে পাওয়া হয় না আমার, তোমার তোমাকে। তোমাকে যত বেশি করে পেতে চাই ততই যেন তুমি আরো বেশি দূরে সরে যাও। আমি দূর থেকে দেখি তোমাকে। তুমি হয়ে ওঠো আরো বেশি অচেনা। সেই অচেনা তোমাকে বারে বারে নতুন করে চিনি। তারপরও তোমাকে চেনা হয় না আমার, তোমার তোমাকে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার চোখে। কতদিন ধরে তোমাকে আমি জেনেছি, তোমার চোখ, মুখ, চুল, হাসি, কথা সবকিছুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে, ভাঁজ খুলে খুলে দেখেছি। আর সবকিছুর পরে প্রতিবার তোমাকে আরো বেশি অজানা মনে হয় নিজের কাছে। কিছুতেই জানা হয় না তোমাকে আমার, তোমার তোমাকে।

আমি একটা অদ্ভুত গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে থাকি। তোমার মাঝে নিজেকে হারাই, ডুবে যাই, ভেসে উঠি...আর আরো আরো বেশি করে ভালবাসি...তোমাকে, তোমার তোমাকে।

তোমার এই ভালবাসার গোলকধাঁধায় ঘুরপাক আমার আদি-অন্তকাল থেকে। আমি যত পা এগিয়েছি তোমার দিকে, ততই পিছিয়েছি প্রতিবার। উদাসীন, নির্লিপ্ত তুমি আমার মাঝে ক্ষোভ জাগিয়েছো। খুব রাগে, অভিমানে আমি সরে গেছি দূরে। কিন্তু তোমার সেই উদাসীনতাই আমার মধ্যে তৈরি করেছে দূর্নিবার আকর্ষণ। চুম্বকের মত টেনে রেখেছে তোমার দিকে। খুব বেশি দূরে যেতে পারিনি কখনোই তোমাকে ছেড়ে।

মনে পড়ে বিয়ের দিনটার কথা। এই দিনটার অপেক্ষায় আমার কত বিনিদ্র রাত কেটেছে, কত ভয়, কত শংকা অননুমেয় তোমাকে নিয়ে। তুমি যে সত্যিই আমার হবে স্বপ্নেও ভাবি নি, এমনকি বিয়ের মঞ্চে বসেও আমার বুক ধুকপুক করেছে এই ভয়ে যে হুট করে বুঝি তুমি মত বদলে নিবে আর ছেড়ে চলে যাবে আমাকে। আর সেই ভয়েই খুব অভিমানে হাত জমে গেছে আমার, কলমের সামান্য একটা খোঁচায় যেখানে তুমি আমার হয়ে যাচ্ছো, যখন তোমাকে পাওয়ার কঠিন, দুর্গম পথ পার হয়ে আমি চৌকাঠে পৌঁছে গেছি, তখন যেন আমার আর পা চলছে না।

সে দিন, যখন তোমাকে প্রথমবার সামনাসামনি দেখলাম, যেন আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এই অসম্ভব রূপবান মানুষটি আজ থেকে আমার হল। আমার, শুধুই আমার! মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল আমার চারিপাশের সবকিছু, থমকে গিয়েছিল সময়, আমি ভুলে গিয়েছিলাম অসংখ্য চোখ চেয়ে আছে আমার দিকে। সবকিছু ভুলে আমি দেখছিলাম তোমাকে। তুমি, আমার তুমি!

কিন্তু সত্যিই কি আমি পেয়েছি তোমাকে? এখনও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছি আমি, নিজের কাছে, তোমার মাঝে। রাতের পর রাত ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে গেছি কম্পিউটারের সামনে কাজে মগ্ন তোমার পিঠের দিকে চেয়ে থেকে। মুগ্ধ আমি, হতভম্ব আমি শুধু দেখেছি গ্রীক দেবতার মত চওড়া কাঁধের, নীলনদের বাঁকের মত পিঠের সুঠাম একজন মানুষকে। হাত বাড়ালেই যাকে ছুঁতে পারি, কান পাতলেই যার নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যায়, ঠোঁট নাড়ালেই যাকে ডেকে নেয়া যায়। তবু আমার হাত বাড়ানো হয় না, ঠোঁট নাড়ানো হয় না। তুমি যেন কোন অদৃশ্য রকেটে চড়ে সাঁই সাঁই করে সরে যেতে থাকো দূরে, শত শত আলোকবর্ষ দূরে। আমার জানা হয় না যে মানুষটিকে দেখে প্রতি মূহুর্তে নতুন করে মুগ্ধতার জাল জড়ায় চোখে, সে কি সত্যিই আমার? তার কতখানি পেয়েছি আমি? আমার যে সবটুকু চাই, সামান্যতে আমার পোষাবে না, কোন ভাগাভাগি আমি করতে পারবো না। কতভাবেই না চাই আমি তোমাকে। তার সবটুকু তুমি বুঝে নিতে পারো না। সবটুকু তুমি দিতেও পারো না। তাই যতটা তোমাকে পাই, তারচেয়ে বেশি কল্পনা করে নিই। আমার কল্পনায় তোমাকে সাজাই আমার মনের মত করে। আর প্রতিনিয়ত তোমার প্রতি বেড়ে চলে আমার ভালবাসা।

বারবার মনে হয় তোমার ভিতরে ঢুকে গিয়ে, ডুবে গিয়ে, হৃৎপিন্ডের সবগুলো প্রকোষ্ঠ, দেহের সমস্ত শিরা-উপশিরা, রক্তকণিকা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ, কোষ-অঙ্গাণু খুলে খুলে দেখি...কি আছে তোমার মাঝে যা আমাকে আমৃত্যু যন্ত্রণা দিয়ে যায়। কি মায়ার জাল ছড়িয়েছো বুকের গভীরে, যা থেকে আমার নিস্তার নেই। কি দিয়ে গড়া তুমি, যে তোমার সশরীর উপস্থিতি অথবা কাছে না থেকেও আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা তুমি একইরকম আকর্ষণীয়। আমি প্রতিদিন তোমাকে নতুন করে ভালবাসি, অনেক বেশি, আরো অনেক বেশি। ভালবাসতে বাসতে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে, ছটফট করি, অস্থির হয়ে উঠি, পাগলামিতে পেয়ে বসে, মাতাল, নেশাগ্রস্ত হয়ে যাই। বারে বারে সে ভালবাসার পেয়ালায় চুমুক দেই আমি, তবু আমার তৃষ্ণা মেটে না, তৃপ্তি হয় না।

তোমাকে বুঝে ওঠা খুব কঠিন হয় নি কখনো, নিজের হাতের রেখার মতই পরিষ্কার পড়ে নিয়েছি সবসময়ে। আমি জানি তোমার চোখের ভাষা, তোমার নিঃশ্বাসের গন্ধ, তোমার ঠোঁটের, হাতের স্পর্শ...সব, সবকিছুই মুখস্থ আমার, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ। তবু যেন তোমাকে বুঝে ওঠা শেষ হয় না আমার। বুঝতে পারি না কেন ভালবাসলে তুমি আমাকে, কাছে টেনে নিলে গভীর আবেগে, বেঁধে নিলে নিজের জীবনের সাথে। আমাকে, আমাকেই কেন? আমিতো তেমন নই যেমন তুমি কল্পনায় এঁকেছো সবসময়। তোমার সাথে আমার কাজের, ভাবনার, পছন্দের মিলের চেয়ে অমিলই বরং বেশি। তবে কিসে তুমি ভালবাসলে আমাকে? কি পেলে তুমি আমার মাঝে? প্রশ্নটার জবাব খুঁজে ফিরি বারবার। এ শঙ্কায় কুঁকড়ে যাই যে হয়তো তুমি, বেখেয়াল উদাসীন তুমি হুট করেই একদিন সব আকর্ষণ হারাবে আমার ওপর থেকে। যেমন ঝড়ের মত, ঘূর্ণির মত, মাতাল হাওয়ার মত এসেছিলে আমার জীবনে তেমনি দমকা বাতাসে মিলিয়ে যাবে।

তাই বারবার ভেঙে-চুড়ে নতুন করে নিজেকে তৈরি করে নেই, বদলে নেই, সাজিয়ে নেই। আমার আমি বলে আর কেউ থাকে না, আমার নিজের চাওয়া, পছন্দ, ভালবাসা কিছুই আর তখন নিজের নয়। নিজেকে আমি তোমার চোখে দেখি, তোমার স্বপ্নের মত গড়ি। তোমার ভালবাসা পেতে আমি কখনো হই 'মিলি', কখনো 'রেমি', কখনো 'রাই', কিংবা 'কুসুম', আবার কখনো 'আনন্দ'।

আমি অভিমানে ঠোঁট ফুলাই, দুচোখ ছাপিয়ে আমার জল নেমে আসে তোমার খুব সামান্য অবহেলায়, কটু কথায়, রূঢ় আচরণে। আমি জানি আমার এই ছেলেমানুষিতে তুমি হেসে উঠবে খুব, ভালবাসায় কাছে টেনে নিবে, আদরে আদরে ভরিয়ে তুলবে। তাই বলে সবসময় মোমের মত গলে পড়ে যাই না আমি। আমি ফুসে উঠি, ফুলে উঠি, ক্ষেপে উঠি, প্রতিবাদে মুখর হই। উল্টে তোমাকেও কত কি না জানি শুনিয়ে দেই। তুমি কি ভয় পাও তখন আমাকে? নাকি সেটাও তোমার কাছে ভীষণ ছেলেমানুষি? নিজেকে ভেঙে-চুড়ে নতুন কত রূপ দেই শুধু পেতেই নয়। তোমার ভালবাসায় আকন্ঠ নিমজ্জিত আমি একবার হাত বাড়ালে আগুনেও ঝাপ দিতে পারি, ডুবে মরতে পারি সমুদ্রে।

কিভাবে চাও তুমি আমাকে? কতখানি চাও? পেয়েছো কি?

আমাকে, আমার আমাকে!

মনে অসংখ্য, কিংবা শুধু একটাই জ্বলজ্বলে প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকি তোমার, খুব খুব কাছে। তোমার চোখের মণির ভেতর আমার ছায়া দেখি, তোমার গালের নিচের হালকা নীল শিরাটাও স্পষ্ট দেখা যায়, তোমার চুলের ডগায় আলোর ঝলক, ঠোঁটের কোণে সদ্য তৈরি ছোট্ট, লালচে কাটা দাগ। আমার মুখে তোমার গরম শ্বাসের স্পর্শ, আমার মুঠোয় তোমার হাত, আমার চোখে তোমার চোখ। তোমাকে দেখি, ধীরে ধীরে তুমি দূরে সরে যাও, ঝাপসা হতে থাকে তোমার চুল, চোখ, ঠোঁট, মুখ। একসময় তুমি শুধুই একটা অবয়ব হয়ে ওঠো।

এত কাছে তুমি, তারপরও কত দূরে! যত বেশি করে তোমাকে পাই, তত বেশি যেন হারাই। যত বেশি নিজেকে বিলিয়ে দেই তোমার কাছে, ততই যেন গুটিয়ে নেই বারবার। অনুভবে যখন তুমি সবচেয়ে বেশি নিজের, তখনই যেন খুব দূরের কেউ। এই অনিশ্চয়তা তোমাকে পর করে দেবার বদলে তোমার প্রতি তৈরি করে দূর্বার আকর্ষণ, তুমি জালের মত জড়িয়ে রাখো আমাকে। তোমাকে আরো বেশি বেশি করে ভালবাসি। ডুবে যাই তোমার মাঝে, হারিয়ে যাই।

তোমাকে পাওয়া হয় না আমার...তোমার তোমাকে। তুমি আর আমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×