somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল দংশন

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তুই এত বোকা রে! এত বোকাও হয় মানুষ!

খুব বৃষ্টির দিন ছিল সেদিন। চারদিক ঝাপসা করে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে অবিরাম। আমরা সব জবুথবু হয়ে বসে আছি ডিপার্টমেন্টের সামনের বারান্দায়, অপেক্ষায় আছি কখন দুপুর একটা বাজবে। সবার মধ্যেই মৃদু উত্তেজনা, সেই উত্তেজনার সাথে চাপা আনন্দে জ্বলজ্বল করছে তোর মুখ। পরনের হলুদ জামাটা আভা ছড়াচ্ছে মুখে, কপালের ছোট্ট পাথরটা ঝলসে দিচ্ছে চোখ। তুই সুন্দর, সবসময়েই তুই এমন চোখ ঝলসানো সুন্দর। ওইদিন যেন আরো অনেক বেশি সুন্দর দেখাচ্ছিল। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকা যায় না।

খুব খুশি ছিলি তুই। বেশ খানিকটা নার্ভাসও। ঘন ঘন ঘড়ি দেখছিস, হাত দিয়ে চুল ঠিকঠাক করে নিচ্ছিস, দেখে নিচ্ছিস কানের দুলটা জায়গামত আছে কিনা, প্রজাপতির ডানার মত নানা রঙের বুটি বুটি দেয়া হলদে ওড়নাটা উড়াল দেবার ঠিকঠাক তৈরি কিনা। আর সেইসাথে ক্রমাগত বলে যাচ্ছিস সেই মানুষটার কথা। যাকে ঘিরে তোর এই উচ্ছলতা। যাকে তুই একেবারেই চিনিস না, দেখিস নি কখনোই, নাম ছাড়া আর কিছুই জানা নেই যার সম্পর্কে। শুধু এক সপ্তাহের ফোনালাপেই তুই একেবারে মগ্ন হয়ে গেছিস তার প্রেমে। তুই! কিছুতেই বিশ্বাস হয় না। এত সহজেই প্রেমে পড়ে গেলি! তুইইতো বলতিস ভালবাসাটা এত সহজ নয়।

-'ভালবাসা বললেই হয়ে যায় নাকি? একটা মানুষকে দেখলাম না, জানলাম না, চিনলাম না তাকে ভালবেসে ফেলবো আর তাকে আজীবনের সাথী করে নিবো।' মুখ-চোখ শক্ত করে বলতো মিতু, যখনই তাকে ভালবাসার কথা বলা হতো, যখনই কেউ তার প্রেমে পড়েছে বা সে কারো প্রেমে পড়লো কিনা তাই নিয়ে ঠাট্টা করা হতো।
-'কিন্তু একসময় না একসময়তো কাউকে ভালবাসতেই হবে।'
-'দ্যাখ রাতুল তুই অন্তত এইসব আজগুবি কথা বলবি না আমার সাথে। তুই না আমার দোস্তো হ্যাঁ? ভালবাসতেই হবে আবার কি রে? আমার মধ্যে ওসব একদমই আসে না।'
ভালবাসা নিয়ে কথা বললেই মিতু কেমন অন্য মানুষ হয়ে যায়। এত সুন্দর একটা মেয়ে তুই। তোকে ভাল না বেসে উপায় আছে কোন পুরুষের? কিন্তু ভালবাসার কথা শুনলেই তুই কেমন শত হাত দূর দিয়ে হাঁটিস। কত ভাল বন্ধুর সাথে জন্মের মত আড়ি নিয়েছিস ভুল করে তোকে ভালবেসে ফেলেছিল বলে। সেই ভয়েইতো নিজের কথাটা মুখ ফুটে কোনদিন বলে উঠতে পারলাম না। তোর মধ্যে নাকি এসব অনুভূতি একেবারেই কাজ করে না। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই কেমন করে ভালবেসে ফেললি একটা অজানা অচেনা মানুষকে! যাকে এমন কি দেখিসও নি কখনো। আর তাকে নিয়ে কথা ফুলঝুড়ি ছোটাচ্ছিস গত সাতদিন ধরে অবিরত কানের কাছে। তটস্থ করে তুলেছিস আশেপাশের প্রতিটা মানুষকে। তার জন্য অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছিস কখন দুপুর একটা বাজবে ঘড়িতে।

দেখতে দেখতে কোথায় যেন ঢঙ করে বিশাল একটা ঘন্টাধ্বনি ঘড়ির কাঁটায় একটা বাজিয়ে দিল। আর কেউ শোনে নি নিশ্চিত, তবে আমি ঠিকই শুনেছি। আমার বুকের ভেতরটায় ভীষণ এক আঘাতে বিশাল এক গহবর তৈরি করে ঘড়ির কাঁটায় একটা বেজে গেল। আমরা সবাই উৎসুক হয়ে চেয়ে রইলাম গেটের দিকে। একটা বেজে এক, একটা বেজে দুই, একটা বেজে পাঁচ...তোর অস্থিরতা বাড়ছে তখন ক্রমাগত। ঠিক একটা বেজে যখন এগার মিনিট হল কোত্থেকে হুশ করে একটা ইয়েলো ক্যাব এসে থামল গেটের সামনে। আর 'গেলাম...' বলেই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তুই হুড়মুড়িয়ে নেমে গেলি সেই বৃষ্টির মধ্যেই। কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্যাক্সি ক্যাবের দরজার ভিতর হারিয়ে গেল হলুদ প্রজাপতির ডানার মত উড়তে থাকা তোর ওড়নাটা। এত বোকা তুই! চিনিস না, জানিস না, কখনো দেখিস নি এমন কারো সাথে এইভাবে চলে যেতে হয়! এত বিশ্বাস তাকে কিভাবে করলি?

খুব কষ্ট হয়েছিল তোর? নিশ্চয়ই হয়েছিল। কতটা কষ্ট জানোয়ারটা দিয়েছে তোকে? তোকে যখন ওই পোড়ো বাড়িটায় নিয়ে যাচ্ছিল প্রথমেই নিশ্চয়ই ভয় পাস নি তুই। খানিক লজ্জা, একটু আনন্দ, একটু বিহবলতা মিলে-মিশে অন্যরকম ভাললাগায় আচ্ছন্ন ছিলি তুই। গাড়িতে বসে কথাচ্ছলে যখন সে তোর হাতে হাত রাখল, লজ্জাবতী পাতার মত তিরতির করে চোখের পাঁপড়ি কেঁপে উঠেছিল তোর। জীবনে প্রথম কারো হাত ধরা, যাকে তুই সাতদিনেই ভালবেসে ফেলেছিস পাগলের মত। তার স্পর্শ তোকে আরক্ত করেছিল এটাই স্বাভাবিক। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই তোর গাল ছুঁয়ে দিতেই কেমন রাঙা হয়ে উঠেছিলি। তুই কাউকে না বললেও আমি টের পাই তোর কান গরম হয়ে উঠেছিল, বুকের ভিতর ধুকপুক। পুরনো সেই বাড়ির সামনে ট্যাক্সি ক্যাবটা থামতে একটু হয়তো থমকে গিয়েছিলি, তবে সে যখন তোকে হেসে আশ্বস্ত করল, হাত ধরে যত্নের সাথে গাড়ি থেকে নামাল তোর সব ভয়-শংকা কেটে গিয়েছিল নিশ্চয়ই। কি করে ভালবেসে ফেললি তুই এমন একজন মানুষকে? তোকে বুঝতে পারলাম না এই তিন বছরেও!

মিতুর প্রেমে আমি পড়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই। প্রথম দিনে ক্লাস শুরুর আগে সবাই সবার সাথে পরিচিত হচ্ছিল, ক্লাসের ভিতর তুমুল হই-হল্লা চলছে। শুধু মিতু এক পাশে চুপ করে বসেছিল, কারো সাথে কথা বলছিল না। শুধু গভীর মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সবাইকে। ক্লাসের একশ দশ জন স্টুডেন্টের মধ্যে ওকে আলাদা করা যাবে খুব সহজেই। আমি যেমন আলাদা করে ফেলেছিলাম মুহূর্তের মধ্যেই, এতটাই আলাদা যে ওকে আমার ভালবাসার মানবী করে নিতে হলো। তবে এটা ওকে বুঝতে দেই নি কখনো। খুব ধীরে ধীরে ওর কাছে গিয়েছি, ওর সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করেছি, ওর বিশ্বাস অর্জন করেছি, আস্থাভাজন হয়েছি। ওকে বুঝিয়েছি আর যাকেই হোক আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিজেকে লুকিয়ে রেখে স্বাভাবিকভাবে এসব কাজ করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে মানি, কিন্তু এছাড়া ওর কাছাকাছি থাকবার আর কোন উপায় আমার ছিল না। আমি ওর কাছাকাছি ছিলাম, অনেক কাছে, সবচেয়ে কাছে। আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব ছিল না। কখনো ভাবি নি এই নিশ্ছিদ্র দেয়ালের মাঝে অতি সূক্ষ্মভাবে কেউ প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু নীল নামের এই মূর্তিমান যন্ত্রণাটা সেই জায়গা তৈরি করে নিল। নীল, যাকে তুই ভালবেসে ফেললি সাত দিনের ব্যবধানেই।

জ্ঞান ফেরার পরে নিজেকে চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলি নিশ্চয়ই। তবে তারচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছিলি। তুই কখনো ভাবিস নি জীবনে প্রথম যাকে বিশ্বাস করেছিস সেই তোর বিশ্বাস ভাঙল! তোকে এইরকম বিপদের মুখে টেনে নিয়ে এসেছে। চিৎকার করে ডাকছিলি নীলকে। বারবার ডেকে চলেছিস, কিন্তু তার কোন সাড়া নেই। ডাকতে ডাকতে তোর গলা ভেঙে এলো, চোখের পানিতে ভেসে গেল মুখ, বুক, হৃদপিন্ডটা প্রচন্ড শক্তিতে ধুকপুক করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ল, তারপরও সেই পাষন্ডের দেখা মিলল না। শব্দহীন, বায়ুহীন, আলোহীন মহাকাশের কোন এক গ্রহে যেন তোকে নির্বাসন দিয়ে গেছে সে!

যেন অনন্তকাল পরে, বৃষ্টি থেমে গেছে আরো অনেক আগেই, দিনের আলো ফ্যাকাশে হতে শুরু করেছে তখন, তীব্র বিষাদের ঘ্রাণ বাতাসে, ক্লান্ত তোর মাথা ঝুলে পড়েছে বুকের উপরে এমন সময়ে ফিরে এলো সে। কোমল হাতে আস্তে করে ছুঁলো তোর হাত, একটা একটা করে আঙুল, থুতনি, নাক, গাল, চোখ, কপাল, ঠোঁট...তোর সেই কমলারঙা ঠোঁটজোড়া! কতদিন আমি তোর কথা শুনতে শুনতে আর ওই ঠোঁটের নড়াচড়া দেখতে দেখতে নেশাগ্রস্ত হয়েছি। কত অলস মূহুর্তে চোখ বুজে চিন্তা করেছি ওই ঠোঁটজোড়ার কথা, মনে মনে হাজারটা চুমু এঁকেছি। তোর সেই কমলারঙা ঠোঁট...সেখানে চুমু খেল নীল। প্রথমে সরে যেতে চাইছিলি এক ঝটকায়, বাঁধা থাকায় সেটা সম্ভব হল না। মুখ ঘুরিয়ে নিতে চেয়েও পারিস নি, তারপর ধীরে ধীরে তুই সমর্পণ করলি। সর্বশক্তিতে পরস্পর এঁটে থাকা ঠোঁটজোড়া খুলে গেল আস্তে আস্তে, সাড়া দিলি পাল্টা চুমুতে। খুব ইচ্ছে করে সেই চুমুটার স্বাদ নিতে, যেটার স্বপ্ন দেখে এসেছি গত তিনটে বছর। নিজের ঠোঁটে ঠোঁট বুলিয়ে আমি তোকে চুমু খাই।

সে তোকে চেয়ার থেকে মুক্ত করল তারপরে, কিন্তু হাত দুটো বেঁধে দিল পিছমোড়া করে। দড়ির শক্ত বাঁধন তোর নরম হাতে কেটে কেটে বসে গেল। তোর সেই নরম দুটো হাত...কতদিন কত অজুহাতে, অসাবধানতার ভান করে ছুঁয়ে দিয়েছি এই হাতে। প্রতিবার শিউড়ে উঠেছি তোর স্পর্শে। তোর হাত ছুঁয়ে দেয়া আমার হাতের সেই অংশটাকে সৌভাগ্যবান ভেবে আনন্দে উদ্বেল হয়েছি। তোর সেই হাতে বসে গেল দড়ির শক্ত বাঁধন, ছিলে যাওয়া চামড়া থেকে বেরিয়ে এলো দুই ফোঁটা রক্ত। বিশ্বাস কর, যদি এ দাগ চিরতরে বসে যায় তাতেও আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি তেমনি ভালবাসায় হাতে হাত রেখে চলবো বাকি জীবন!

তুই কি মিনতি করেছিলি তোকে ছেড়ে দিতে? খুব কেঁদেছিলি? সেই পাষন্ডের তাতে মন গলে নি। প্রজাপতির হলদে বুটি ডানা সে এক ঝটকায় উপড়ে নিল। লুটিয়ে পড়লো ডানা দুটো এক পাশে। তার লোভী চোখ চেটে নিতে লাগল তোকে। তোর সুগঠিত গলা, কন্ঠার হাড়, সুডৌল বুক। তার শক্ত হাত তোকে খাবলে ধরল। নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা তুই করেছিলি আমি জানি। নিজের ব্যাপারে কতটা সচেতন আমার মিতু সে আমি ছাড়া আর কেই বা ভাল জানবে! অসাবধানে সামান্য স্পর্শ যদি কখনো লেগে যেতো তোর গায়ে, ঝট করে সরে যেতি তুই। এইসব ছোঁয়াছুঁয়ির ব্যাপারে খুব সূঁচীবাই ছিল তোর। সূক্ষ্ম চোখে মেপে দেখতি এটা সত্যি অসাবধানে হয়েছে নাকি ইচ্ছাকৃত। লম্বা বড় ওড়না দিয়ে ঠিক মেপে মেপে ঢেকে রাখতি নিজেকে। আর ঘৃণা করতি সেইসব মেয়েদের যারা নিজেদের উন্মুক্ত করে ঘুরে বেড়াতে দ্বিধা করে না। আমার সেই প্রজাপতির ডানাদুটো ছিঁড়ে নেয়ায় তুই নিশ্চয়ই কুঁকড়ে মুকড়ে গিয়েছিলি। নিজেকে বাঁচাতে তুই যুদ্ধ করবি এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তুই যে ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছিলি। একবারও যদি বুঝতিস আগে!

তার হাতে একটা এন্টিকাটার ছিল। ভালবাসতে হলে অস্ত্রের কি প্রয়োজন হয় তুই জানতি না, তাই না? কিন্তু সেই এন্টিকাটার যখন তোর জামার সামনেটা ফেড়ে দিল তখন কি বুঝেছিলি? তুই নিশ্চয়ই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকিস নি সেখানে। উল্টোদিকে দৌঁড় দিয়েছিলি। তবে ক্লান্ত শরীর, বিহবল পা, পিছনের জানোয়ারটার তাড়া তোকে খুব বেশিদূর যেতে দেয় নি। হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলি কয়েক গজ এগুনোর পরেই। ব্যথা পেয়েছিলি তোর ছোট্ট টিকলো নাকটাতে, ছিলে গিয়েছিল নাক, থুতনি, কনুই। কিন্তু যে ফাঁদে তুই নিজেই পা দিয়েছিলি বেরুতে পারিস নি সেখান থেকে। বরং জানোয়ারটার ক্রোধ বেড়েছিল আরো বেশি। হ্যাচকা টানে দাঁড় করিয়ে নিল তোকে, টানতে টানতে নিয়ে এলো চেয়ারটার কাছে, এক ধাক্কায় চেয়ারে বসিয়ে হিংস্র হাসিতে ফেটে পড়ল সে। তারপর শিল্পীর তুলির মত এন্টিকাটারটা হাতে তুলে নিয়ে তোর ডান গালে সূক্ষ্ম আড়াআড়ি একটা রেখা টেনে দিল। তোর ফর্সা টুকটুকে গালে চিকন লাল একটা দাগ। ভয়ে ব্যথায় চিৎকার করে উঠেছিলি তুই। তোর সেই চিৎকার এখান থেকেও আমার বুকে ধকধক করে বাজে। তোর সুন্দর মুখটা নষ্ট হয়ে গেল বলে খুব কষ্ট পেয়েছিলি? তুই কি জানিস তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। আমি তোর সেই কাটা মুখের দিকেই অপলক মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকতে পারি ঘন্টার পর ঘন্টা। এতটাই ভাল আমি বাসি তোকে!

-'দ্যাখ রাতুল ওইসব ফালতু কথা আমাকে বলবি না। মানুষের বাইরের সৌন্দর্যটাই সব না যে কেউ দেখতে সুন্দর বলে তার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থাকতে হবে। তাহলেতো আমি রনবীর বা হিউ গ্র্যান্টের দিকে সারাদিন তাকিয়ে থাকতাম।'
-'তারাতো সব স্টার। তোর কি বাস্তবের কাউকে নিয়ে এমন মনে হয় না?'
-'হোক তারা স্টার, তারপরেওতো তারা মানুষ। আর বাস্তবের কাউকে নিয়ে এমন মনে হয় না সেতো তুই খুব ভাল করেই জানিস।'

তোর এমন মনে হয় নি কখনো মিতু, আমি জানি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে। কথা বলার ছলে, তোর অগোচরে কত সহস্র সেকেন্ড আমি তোকে অপলকে দেখেছি। তোর ছবিতে আমার পূজার নৈবেদ্য সাজিয়েছি। সেসব তোর কাছে খুব ঠুনকো মনে হয় আমি জানি। কিন্তু আমার জন্য এটা অনেক অনেক বড় একটা ব্যাপার, তুই বুঝিস নি কখনো।

তোর চিৎকারে নীলের মনে করুণা জন্মায় নি। বরং সে পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত হয়ে উঠেছে। তার পাশবিক দুই হাত তোর সরষে ক্ষেতের মত হলুদ জামাটা এক টানে ছিঁড়ে ফেলল। তার নিচে তোর ব্রাউন ব্রেসিয়ার, এন্টিকাটারের একটা সূক্ষ্ম খোঁচায় খুট করে নেমে এলো সেটা নিচে। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা বলে ঢাকতে পারিস নি নিজেকে। শুধু মাথাটা নামিয়ে এনেছিলি বুকের উপরে আরো অনেকটা নিজেকে লুকানোর চেষ্টায়। বাইরে তখন আবারো ঝুম ঝুম বৃষ্টি নেমেছে, অন্ধকার হয়ে এসেছে চারদিক। দরজার মুখে একটা চার্জার লাইট জ্বালানো। তাতেই আলো হয়ে আছে পুরো ঘর। চার্জার লাইটের সাদা আলোয় তোর ধবধবে সাদা বুক, সুগঠিত স্তন, খয়েরী বোঁটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অস্বীকার করি না বহু নির্ঘুম রাত তোকে বুকের মধ্যে নিয়ে দলিত মথিত করেছি আমি। তোর এই তুলতুলে নরম বুকে হাত বুলিয়েছি, ঠোঁট ছুঁইয়েছি স্তন বৃন্তে। আমার ১০০০ রাতের স্বপ্ন ওই ধবধবে সাদা দুটো বল আরেকজনের হাতে। খুব কষ্ট দিয়েছিল সে তোকে? জানি ব্যথা পেয়েছিস অনেক। যে ভালবাসায় আমি তোকে ছুঁতে চেয়েছিলাম তাতো তার ছিল না। সে শুধু শরীরই চেয়েছিল।

শরীর নিয়ে খুব সংস্কার ছিল তোর। সেই সংস্কার এক ঝটকায় ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিল জানোয়ারটা। এরপরে আর থাকতে পারিস নি তুই। চিৎকার করে তাকে গালি দিয়েছিলি। জানা অজানা যত শব্দ আছে সব মুখে খই ফুটিয়েছিল তোর। তোর সেই গালি জানোয়ারটাকে উদ্দেশ্য করে ছুটে গেলেও দোষী করে তুলেছিল তার বাবা-মাকেও। এটা হয়তো সহ্য হয় নি তার। আরো হিংস্র হয়ে উঠেছিল সে। হাতের এন্টিকাটারটার লক্ষ্য হয়েছিল তোর শরীরের উন্মুক্ত অংশ। কাঁধে, বুকে, পেটে কোথাও সে আঁচড় কাটতে বাদ রাখে নি। প্রতিটা আঁচড়ে তুই চিৎকার করে উঠেছিলি আরো জোরে। তোর চিৎকারে তার পাশবিক উল্লাস আরো বেড়ে গেল। একটু একটু করে তোর শরীরের চিড়ে দেয়া অংশগুলো সে ছুঁয়ে দেখতে লাগল। আঙ্গুলের ডগায় লেগে থাকা রক্তের স্বাদ নিল জিভে। তারপরে সে নেমে গেল আরো নিচে। তোর বুক, তারপরে পেট, সেখান থেকে আরো নিচে। সালোয়ারের দড়ি খুলবার কষ্ট সে করে নি। এন্টিকাটারের এক পোচেই সেটা খুলে নেমে এলো নিচে। তারপর সে প্রবিষ্ট হল তোর ভিতরে। যে সম্পদ এতদিন ধরে যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছিলি, আজ ছোট্ট একটা ভুলে তা চলে গেল রাক্ষসের অধিকারে। তোর চিৎকার বৃষ্টির শব্দের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। তীব্র চিৎকার একসময় মৃদু গোঙানিতে পরিণত হল। তারও অনেক অনেকক্ষণ পরে থেমে এলো তোর উপরে বয়ে চলা ঝড়।

শিথিল হয়ে পড়ে রইল জানোয়ারটা তোর উপরে। ধস্তাধস্তিতে কখন তোর হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেছে সেটা সে টের পায় নি। বুঝতে দিস নি তুইও। হাতের বাঁধন খুলে নিয়ে এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিয়েই তুই উঠে দাঁড়িয়েছিলি। পালানোর জন্য তৈরি। কিন্তু এত সহজে সে তোকে যেতে দিবে কেন! দ্বিতীয়বার ঝাপিয়ে পড়ে তোকে ভূলুন্ঠিত করল। ঝড়ে বিপর্যস্ত তোর পক্ষে প্রতিহত করা সম্ভব হল না। একবার, একবারই শুধু বিস্মিত, হতভম্ব, আতংকিত, ঘৃণাভরে চিৎকার দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলি। তারপরেই চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেল তোর গলা মাথায় ভারী পাথরের বাড়িতে। মাথার খুলি ফেটে গিয়েছিল তোর, রক্তে ভেসে গেছে পুরো ঘর, এক টুকরো হলদে মগজ ছিটকে বের হয়ে এসেছিল। তারপরেও জানোয়ারটার স্বস্তি হয় নি। এন্টিকাটার দিয়ে পরিপাটি করে কেটেছে তোর গলা, হাত আর পায়ের প্রতিটা রগ।

বিশ্বাস কর তোর মৃত্যু নিশ্চিত না করে আমার উপায় ছিল না। তোকে মারতে চাই নি আমি। এমনকি এত ভয়াবহ সব আঘাতও করতে চাই নি। আমার ভালবাসার ধনকে কষ্ট দেয়া কী করে সম্ভব আমার পক্ষে! শুধু চেয়েছিলাম যে সৌন্দর্য নিয়ে তোর এত গর্ব সেটা নষ্ট করে দিতে। শরীর নিয়ে যে সংস্কার তোকে এত অহংকারী করেছে সেটা দুরমুশ করে দিতে। তোকে ভাঙতে, মচকাতে। কেবলমাত্র তখনই তোকে পাওয়া আমার জন্য পানির মত সহজ ছিল। তোর সুন্দর চেহারা নষ্ট হয়ে গেলে কেউ যখন তোকে গ্রহণ করবে না, তোকে ধর্ষিতা কলংকিনী অপবাদ দিয়ে দূর দূর করবে তখন আমি তোকে আপন করে কাছে টেনে নিবো। তুই সুন্দর থাকিস আর নাই থাকিস, তোর শরীরে হাজারটা কাটা দাগ থাকুক, তবু তোকে আমি ভালবাসবো। তাই এ ফাঁদ পেতেছিলাম। আমার ছোট্টবেলার বন্ধু, যে কিনা বিদেশ-বিভূঁইয়ে জীবন পার করে দিয়েছে, অল্প ক'দিনের জন্য দেশে এসেছিল তাকে দিয়েই আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলাম। জানতাম না আমাদের পরিকল্পনামাফিক এত সহজে তোকে আয়ত্ত্ব করা সম্ভব হবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুই সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলি। সবকিছুই ঠিকঠাকমত হয়েছিল। বিশ্বাস কর, আমরা সুখে-শান্তিতে আজীবন বাস করতাম। সেই পথের থেকে আর মাত্র দুই পা দূরে ছিলাম। শুধু যদি না তোর হাতের বাঁধন খুলে যেতো, যদি না তুই আমার মুখ থেকে মুখোশটা খুলে না নিতি, আমাকে চিনে না ফেলতি। কিন্তু একবার আমাকে চিনে ফেলার পর তোর ঘৃণা বেঁচে থাকা, তোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। তাই আমাকে এই সিদ্ধান্তই নিতে হল।

তুই নিশ্চয়ই এখন বিশ্বাস করিস তোকে আমি কতটা ভালবাসি! কত তীব্র আমার এই ভালবাসা!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×