somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেলে আসা দিনগুলি

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেলে আসা দিনগুলি
লোকালয়ে একটা প্রবাদ আছে, ঘরের প্রথম আগত সন্তান বাবা-মায়ের আদর, যত্ন,ভালোবাসা একটু বেশিই পেয়ে থাকে।প্রথম সন্তান
বলে বাবা মা থেকে শুরু করে আত্ত্বীয় স্বজন কারোই আহ্লাদের শেষ থাকে না।ঠিক আমারাও ২০০৯-২০১০ সেশনের শিক্ষার্থীরা ছিলাম এই বিভাগের আগত প্রথম সন্তানের মতোই,যদিও আমাদের আগে আরো এক সেশন চলমান ছিলো তথাপি সব মিলিয়ে আমাদের পদচারনাই ছিলো সবচাইতে বেশি সে কথা হলফ করে বলতে পারি।আর তাই তো এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের মধুর সৃতির কমতি নেই।আর এই মধুর সৃতিগুলোর সাথে দীর্ঘ সময়ের কিছু মান-অভিমান মিশিয়ে আমাদের প্রতি স্যারদের মায়া মমতাকে করে তুলেছিলো আরো গাঢ় আরো প্রগাঢ়। অনেক সৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভাগের কালো বোর্ড থেকে ব্রেঞ্চ,সেমিনার,অফিস রুমের চায়ের কাপ,পানির গ্লাস,ইট পাথরের সিড়ি,কলেজ ক্যন্টিনের রহীম ভাইয়ের ৩ টাকার আলুর সিংগারা,পুরি,২ টাকা দামের পিয়াজু, এককাপ রঙ চা ছাপিয়ে সবুজ চত্ত্বর পর্যন্ত।সেসব সৃতির পাতা এতোই বিশাল যে, এই চার বছরের সৃতি চার পৃষ্ঠা থেকে শুরু করে চার হাজার পৃষ্ঠায় আবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়।সৃতির পাতার সুখ-দু:খ নিয়েই তো আমাদের পথচলা।
যাই হোক, সময়টা ২০০৯ সালের, যখন আমি এই কলেজে অনার্সে ভর্তির জন্য রিলিজ স্লিপ নামক একটি কাগজ জমা দেই নির্ধারিত টেবিলে।তাও ইসলামের ইতিহাসে ভর্তির জন্য নয় বরং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হবো বলে রিলিজ স্লিপের এককোনে কাগজ জমার আগে আবু নছর স্যারের একটু সুপারিশ ও নেয়া হলো।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে যেদিন ভাইভার জন্য ডাকা হলো, রাসেল সারের সোজা উত্তর ভর্তি হলে ইসলামের ইতিহাসেই ভর্তি হতে হবে।অন্য ডিপার্টমেন্ট এ সিট খালি নাই।কিন্তু আমার প্রচন্ড ইচ্ছা রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ ভর্তির কিন্তু তার ঐ এক উত্তর ইসলামের ইতিহাসে ভর্তি না হলে রিলিজ ফেরত নিয়ে চলে যেতে পারো।অগত্যা আশায় গুড়ে বালি দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম ইসলামের ইতিহাসে।যখন ভর্তির সব কাগজপত্র রাসেল স্যারের কাছে জমা দিচ্ছিলাম, শুধু চেয়ারম্যানের নাগরিকত্ব সনদ নেই বলে স্যার সব কাগজ আমার মুখের উপড় ছুড়ে দিলেন।আমি প্রচন্ড ভয়ে কাপছিলাম এই ভেবে যে এখন যদি আমার কাগজ জমা না নেয় তাইলে তো আর ভর্তি হওয়া হবে না আমার।এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। স্যার কে অনুরোধ করি স্যার কালকেই আমি চেয়ারম্যানের কাগজ এনে জমা দিবো, কিন্তু তিনি আমার অনুরোধে কোনরূপ কর্ণপাত করছেন না সেটা দিব্যি বুঝতে পারছি।অবশেষে বাকী বিল্লাহ স্যার "নেও তো বারে, ইল্লে চেংড়া পেংড়া মানুষ,ওতো কি মনে থাকে।ভূল হছে কাল দিবিনি কাগজ।তুমি জমা নেও তো" আর আমার দিকে চোখ বড়বড় করে " এ বাপু কাল কলে কাগজ জমা দিবে, কোন মিছ যেন না হয়,এই তোমার জন্য কল হামি সুপারিশ করলেম,ফের হামাক ডুবোইয়ো না।আর ক্লাস কল রেগুলার করা লাগবি,উল্লে ভকিচকি ইটি কলেম খাটপি নে।" আমি জি স্যার বলে সব কাগজ গুছিয়ে পুনরায় রাসেল স্যারের হাতে দিয়ে কাপা পায়ে রাসেল স্যারের উপর একরাশ ক্ষোভ আর বিরক্তি নিয়ে দরজার এপারে চলে এলাম।তখন মনে হচ্ছিলো এমন খারাপ একটা স্যার আমার কপালে পড়লো যে কিনা কথায় কথায় এমন রাগ দেখায়।কিন্তু কে জানতো আমার মনে করা,আমার ভাবনায় খারাপ,রাগী,কঠিন মেজাজের স্যারই একসময় অধিক প্রিয় হয়ে উঠবেন তাদের স্নেহ, মমতা আর নিগূঢ় ভালোভাসার গুনে।হয়েছেন ও তাই, একজন শিক্ষকের কাছে ঠিক যতোটুকু ছাত্রের প্রাপ্য থাকে, যতোটুকু হলে বলা যায় ঢের হয়েছে ঠিক তার চাইতেও শত শত গুন অধিক ভালোবাসা আর স্নেহ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমাদের।স্যারদের আন্তরিকতা আর স্নেহ এতোটাই পেয়েছিলাম যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হতে না পারার যে আক্ষেপ, যে বেদনা মনে পুষছিলাম তা ধীরে ধীরে ম্লান হতে হতে একসময় শূণ্য মিলিয়ে যায়।আমরা প্রায়ই বন্ধুরা গল্প করতাম যে, কলেজের ছাত্র -শিক্ষকের এক মধুর মিলন ক্ষেত্র হিসেবে যদি কোন বিভাগ নির্বাচন করা হয় তবে নি:সন্দেহে আমাদের বিভাগ প্রথম হবেই না ,বরং অন্যান্য বিভাগ তার ধারের কাছেও আসতে পারবে না। প্রিয় শিক্ষক অনেকেই থাকেন, তবে প্রিয় শব্দের পাশে অধিক প্রিয় বলেও একটা শব্দ থাকে। আর আমাদের সেশনের অধিক প্রিয় শিক্ষক হিসেবে আনোয়ার স্যার কেই জানি মানি গন্য করি।তাই বলে বাকী বিল্লাহ স্যার,রাসেল স্যার বা শাপলা ম্যাম যে প্রিয় শব্দের মধ্যে পড়ে না তা কিন্তু নয়।ঐ যে প্রিয় শব্দের পাশে অধিক প্রিয়।তাই আনোয়ার স্যারের সম্পর্কে কিছুই বলছি না।তার সম্পর্কে দু এক কথায় বলে শেষ করতে পারবো না হয়তো।
প্রথম বর্ষের শিক্ষক বলতে বাকী বিল্লাহ স্যার,রাসেল স্যার,আর আনোয়ার স্যার।ততোটা স্যারদের সানিধ্য তখনো আমরা পৌছাই নি এক আনোয়ার স্যার ছাড়া,কিন্তু বছরের শেষে হঠাৎ আনোয়ার স্যার অনত্র চলে গেলেন।আমরা একধরনের অনিশ্চয়তা থেকে বাচতে রাসেল স্যার কে বলি যে, আনোয়ার স্যার কে কি কোনভাবেই ফিরিয়ে আনা যায় না।প্রতিদিন না হোক অন্তত সপ্তাহে দুই বা একদিন যদি আমাদের ক্লাস নিতে আসেন তবে আমাদের খুব উপকার হয়। স্যার বলেন সেও চায় আনোয়ার স্যার আবার ক্লাসে ফিরে আসুক, তিনি চেষ্টা করছেন স্যার কে ফিরিয়ে আনতে।অবশেষে আমাদের অনুরোধে আবার ফিরে এলেন আনোয়ার স্যার ক্লাসে।এরই মাঝে আগন্তুক হিসেবে বিভাগে যোগ দিয়েছেন শাপলা ম্যাম।একদিন ম্যাম ক্লাস নিচ্ছেন আর আমি জান্নাতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুন গুন করে গান গাচ্ছি।হঠাৎ ম্যাম ক্লাস থেকে বাইরে এসে " এই তোমাদের কি আর কোন কাজ নাই, কলেজে এসে হা হা করে গান গাইছো কেন।দেখতে পাচ্ছোনা ক্লাস নিচ্ছি।গলায় যদি একটু সুর বলে কিছু থাকতো তাও হয়।আর এটা কি সঙ্গীত চর্চার জায়গা নাকি? নেক্সট টাইমে আমি যেন আর এভাবে গান গাইতে না দেখি।সঙ্গীত শিল্পী হবে একেকটা।" তার এমন কড়া ধমকে ভয়ে আর বেসুরে গলার লজ্জায় কুকড়ে যাই।
আর মনে মনে ভাবী ম্যাডাম এভাবে বলতে পারলো?
ম্যাডাম ক্লাসে যাওয়ার পর জান্নাতিকে বলি এরে কোত্থেকে ধরে আনছে রে? কি খাট্টাস দেখছিস, কেমন ধমক দিলো, গান টান গাইতে দিবেনা কি জন্য,আমি তো তো আস্তে আস্তে গান গাইছিলাম তাও এনার সহ্য হলো না।এমন রস কস হীন মানুষ কপালে পড়লো আমাদের।এমন মানুষ আমি জিবনে দেখি নাইরে---।
আরে বাহ?--
সেই বেরসিক, সেই খাট্টাস প্রকৃতির শাপলা ম্যাম যখন আনন্দ নগরে আমাদের শিক্ষা সফরে প্রচন্ড সু-উচ্চ সাউন্ডে গানের তালে তালে ঠিক আমার হাত ধরে নাচতে শুরু করলেন তখন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।এমন রসহীন মানুষ ক্লাসের বাইরে,কলেজের বাইরে এতোটা মিশুক প্রকৃতির হতে পারে,এমন রসিক হতে পারে? ব্যাস সেদিন থেকে শাপলা ম্যাডাম সম্পর্কে মনের মধ্যে রসহীন ধারনা ঝেটিয়ে বিদেই করি।আরো ভালো লাগা শুরু করে যখন ম্যাডামের হাতে প্রতিদিন ভাজা সুপারি খাওয়া শুরু করি।একপ্রকার অভ্যাস হয়ে যেতে থাকে।প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার আগে আমি,তানি,হারুন ম্যাডামের কাছে থেকে ভাজা সুপারি চেয়ে খাওয়া শুরু করি।আনোয়ার স্যার তো এই ভাজা সুপারির এক প্রকার কঠিন ভক্ত হয়েই গেলো,কিছুদিন পর বাকীবিল্লাহ স্যার ও বলা শুরু করলেন "এ বারে সুপারি আনছো নাকি, দেও তো? ম্যাডাম ও হাস্য মুখে জী স্যার, এই নেন বলেই সুপারি রাখার সাদা স্টিলের বাক্সটি এগিয়ে দিতেন স্যারের সামনে।তবে আমরা সবাই ম্যাডামের সুপারির ভক্ত হলেও একমাত্র রাসেল স্যারকে কখনো সুপারি চেয়ে খাওয়ার দৃশ্যটি দেখা কপালে জোটে নি।হয়তো তিনিও ম্যাডামের সুপারির ভক্ত হয়ে থাকতে পারেন আবার নাও পারেন।তিনি মানুষটি ওমনই, বাইরে কঠিন থেকে কঠিন প্রকৃতির,আর ভীতর টা একদম বগুড়ার দইয়ের মতো নরম,রসালো আর সুস্বাদু। বাকীবিল্লাহ স্যার কেও যেন আমরা সঠিক বুঝতে পারি না।তিনি কখনোই সময় মতো কলেজে আসেন না আবার আসলেও ক্লাস নেয়ার কথা বেমালুম ভূলে যান।ডিপার্টমেন্ট এ এসেই "কে বাবা আনোয়ার ক্লাস নিচ্ছো,হামার কি আজ কোন ক্লাস আছে বারে?" জী স্যার ক্লাস ছিলো আপনে দেরি করে আসতিছেন দেখে আমি ক্লাস নিয়ে নিয়েছি, আনোয়ার স্যারের উত্তর।" তা ভালো করছো বাবা, হামি বুড়ো থুরো মানুষ বারে ওতো মনে থাকে না, তা রাসেল কুন্টি?" রাসেল ভাই তো একটু আগে নিচে গেলো, আবার ও আনোয়ার স্যারের উত্তর।"ও তা সব ঠিকঠাক চলতিছে তো নাকি" হুম স্যার সমস্যা নাই, আবার উত্তর আনোয়ার স্যারের।" এক কাম করো, তোমরা এদিক সামলাও হামি এনা কেন্টিন থেকে চা খায়া আসি" বলেই বাকী বিল্লাহ স্যার চলে যান।সেই যে চা খেতে যান আর ফিরে আসার নাম নেই। এমন প্রায় প্রতিদিনই করতেন বাকী বিল্লাহ স্যার।স্যারের কেন্টিনে গিয়ে চা খায়ার এই ডায়ালগ আমাদের প্রায় মুখস্ত, কেননা স্যার ডিপার্টমেন্ট এ আসেন ঠিকই কিন্তু ঐ চা খাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান।কিন্তু যেদিন ক্লাস নিতে শুরু করেন সেদি ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায় স্যারের ক্লাসের সময় যেন আর ফুরাতে চায় না।তিনি অনেক কঠিন কঠিন বিষয়গুলো এতো সহজ সরল আর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে বাকী দিন ক্লাস না নেয়ার যে ঘাড়তি তা দিব্যি পুষে যায়।স্যার বক্তা হিসেবে অত্যন্ত সুমিষ্ট ভাষী,ক্লাসে যেমন উচুতে তার গলা ঠিক মানুষকে সম্মোহনী ক্ষমতাও প্রখর।আমরা স্যারের কথার মাধুর্য্য গিলতে গিলতে কখন যে দুই তিন ঘন্টা ক্লাসে কাটিয়ে দেই তা আচ করতেই পারি না।মনে হয় এই তো কেবল ক্লাস শুরু হলো।একজন সুবক্তা হিসেবে কলেজের যে কোন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য দেয়াটা যেন সাংবিধানিক নিয়ম হয়ে গিয়েছিলো।হবেই না কেন, তার মতো অমন দরাজ গলা আর শব্দের ভান্ডার আর কারো আছে নাকি? ।স্যার যখন বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠে ডাইসে দাড়ান তখন নিজের অজান্তেই পাশে বসা বন্ধুটিকে বলি দেখ আমার স্যার এবার কি বক্তব্য টাই না দেয়।আর বক্তব্য শুরু করলে হা হয়ে তার প্রতিটি কথা,প্রতিটি শব্দ গিলতে থাকি।হঠাৎ হঠাৎ স্যার আমাদের ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে তার কক্ষে সামনে বসিয়ে গল্প করা শুরু করতেন।আর তানির ডিউটি হচ্ছে গল্পের তালে তালে স্যার কে এককাপ চা বানিয়ে খাওয়ানো। স্যারের চায়ের উপর যে প্রচন্ড আসক্তি সেতো আমাদের অজানা নয় তাই স্যার যেন নিচে যেতে না পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা।মাঝে মাঝে স্যার বলতেন বুড়ো মানুষ বাড়ে এই চার তলা সিড়ি দিয়ে হামি উঠপের পাইনে।আমরা হেসে হেসে বলতাম স্যার তাইলে আপনার জন্য লিফটের ব্যাবস্থা করতে বলি-- স্যার হেসে উড়িয়ে দিতেন।
আমাদের বন্ধুদের মাঝে একটা ডায়ালগ প্রচলন ছিলো যে, ডিপার্টমেন্ট হলো আমাদের।এখানকার যা কিছু আছে সবই আমাদের ,আর তাই যে যতোপারো চুরি করো। আর বই চুরি করলে কোন পাপ হয় না। তাই আমি সোহেল আর জান্নাতি মিলে স্যারদের অজান্তেই সেমিনার কক্ষের লাইব্রেরী থেকে বই চুরির উদ্যাগ নেই। জান্নাতিকে বারান্দায় পাহাড়ার দায়িত্ব দিয়ে আমি আর সোহেল সেমিনার কক্ষের বসে চিন্তা করতে থাকি কিভাবে দরজা দিয়ে লাইব্রেরীর আলমেরি থেকে বই চুরি করা যায়।অবশেষে একটা বুদ্ধি পেয়ে যাই আমরা। ব্রেঞ্চ গুলো আলমেরির সাথে ঠেলে লাগোয়া করে কিছুটা উচু হলে আমি সোহেল কে নিচে রেখে ব্রেঞ্চ দিয়ে তরতর করে আলমেরি পেরিয়ে জানালার গ্রিল ধরে চলে যাই ঠিক লাইব্রেরীর মেঝেতে।আলো অফ থাকায় পুরো ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার।কিছুই দেখা যাচ্ছে না কোথায় কি আছে।ওদিকে মনে প্রচন্ড ভয়ের আনাগোনা চলছে, যে কখন না স্যারদের কেউ চলে আসে! অন্ধকারে হাতাতে থাকি আলমেরির কাচের গ্লাস।পেয়েও যাই কিন্তু অন্ধকারে কোনটা কোন বই আর আমাদের ক্লাসের বই কোন আলমেরিতে আছে সেটাও তো ঠিকমত ঠাওর করতে পারছি না। ওদিকে সোহেল বারবার তাড়া দিচ্ছে ।অবশেষে যেই কিনা আস্তে আস্তে আলমেরির গ্লাস খুলে তিনটে বই উপর দিয়ে সোহেলের কাছে চালান করেছি ঠিক তখনই জান্নাতি চেচিয়ে “ওই ছেড়া তারাতারি বের হ,স্যার আসছে,সোহেল কোন স্যার ,আরে রাসেল স্যার।আমার তো হাত পা আর আসে না।ভয়ে কলিজা আর কলিজার জায়গাতে নেই ,অন্য কোথাও হাও্ইয়া হয়ে গেছে।এখন উপায়? এসব ভাবতে ভাবতে দেখি অফিস কক্ষের দরজার তালা খোলার শব্দ।আমি তো আর নাই ,কারন অফিসের সাথেই হার্ডবোর্ড দিয়ে আলাদা করা লাইব্রেরি।এ পাশে একটু টুং শব্দ হলে ওপাশে তা দিব্যি শোনা যাবে।আমি একেবারেই ভয়ে চুপ হয়ে গেলাম।পিনপতন নিরবতা পালন করছি।নিশ্বাস ও নিচ্ছি আস্তে আস্তে যেন জোড়ে নিশ্বাস নিতে গেলেই স্যার বুঝতে পারবে এখানে কেউ আছে।শুধু বুকের মধ্যে ধুকপুক শব্দ নিজের কানে শুনতে পাচ্ছি।অবশেষে আমাদের অবাক করে দিয়ে স্যার একটু পরেই অফিস বন্ধ করে সেমিনার রুমের তালা খুলে বাইর থেকে শুধু জান্নাতিরে বলে গেলেন যে, তালা খুলে রেখে দিলাম ,যাও্যার সময় বন্ধ করে যেও।কথাটা শুনে ধরে প্রান ফিরে এলো।কেননা স্যার যদি নিজেই তালা লাগিয়ে যেতেন তাহলে আমি নির্ঘাত বন্দি হয়ে পড়ে থাকতাম লাইব্রেরিতে।ওরাও হয়তো স্যার কে কিছুই বলতে পারতো না,আর যদি আমার দুখের কথা ভেবে বলেও দিতো তাইলে তো নির্ঘাত চোরের অপবাদ।তাও বই চুরির । অবশ্য বই চুরির অভ্যাস আমার আগে থেকেই আছে,কিন্তু বই চুরিকে আমি কোনভাবেই চুরির পর্যায়ে ফেলতে নারাজ। এমনই মধুর সৃতি বিজড়িত ছিলো আমাদের ৫/৬ টা বছর। কি ছিলো না আমাদের সৃতিতে ক্লাসে সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা মারা,ক্যান্টিনে গিয়ে পুরি,পেয়াজু,সিংগারা খাওয়া,সবুজ মাঠে বসে থাকা,নিজের ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে অন্যর ডিপার্টমেন্ট এ গিয়ে আড্ডা দেয়া সময় কাটানো,স্যারদের সাথে অফিসে বসে রাজ্যির গল্প আর পেয়াজু, সিংগারা, চা বানিয়ে খাওয়া,কার কবে জন্মদিন বন্ধুদের থেকে শুরু করে স্যারদের পর্যন্ত সেসব কেক কেটে ঘটা করে পালন, কি ছিলোনা সৃতিতে।সবই ছিলো, স্যারদের ভালোবাসা,আনন্তরিকতা,স্নেহের যেমন কোন কমতি ছিলো না ঠিক তেমনি আমাদের ও স্যারদের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গাতে কোন ঘাড়তি নেই।সময়ের বিবর্তনে আমরা চলে এসেছি আর আমাদের জায়গায় এসেছে নতুন মুখ।এভাবেই হয়তো চলবে সব,চলতে থাকবে অনন্তকাল জুড়ে।শুধু সৃতির মনিকোঠায় মধুর,বিধুর,বেদনার কথামালা গুলো প্রতিনিয়ত ভিজিয়ে দেবে হৃদয় মানসপট।তবুও বলি ভালো থাক সব কিছু ভালো থাক চেনা মুখগুলো অতীতকে বুকে নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×