somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চূড়ান্ত খসড়া)’ সম্পর্কে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর পর্যালোচনা

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৩ সেপ্টেম্বর ’০৯ তারিখে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি শিক্ষামন্ত্রী কাছে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চূড়ান্ত খসড়া)’ পেশ করেছে। চূড়ান্ত খসড়ার ওপর ১৫ অক্টোবর এর মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য সকল মহলের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়টি অত্যন্ত প্রত্যাশিত ছিল যে, শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-রাজনৈতিক কর্মী ও অভিভাবকদের মতামত নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষানীতির খসড়া প্রস্তাব তৈরি করবেন। কমিটি তার রিপোর্টের ভূমিকায় ‘৫৬টি সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধি’ এবং ‘৬টি বিভাগে সকল স্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে’ মতবিনিময় করার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, প্রধানত যাদের জন্য শিক্ষানীতি সেই মূলশক্তি ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে গণতান্ত্রিক ধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে তাঁরা মতবিনিময়ের প্রয়োজন বোধ করেননি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই এদেশের সংগ্রামী ছাত্রসমাজ সর্বপ্রথম একটি ‘সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি’ প্রণয়নের দাবি করেছে এবং বারে বারে শহীদী আত্মদানের বিনিময়ে বিভিন্ন শাসক সরকারের প্রণীত সংকোচনমূলক গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রতিহত করেছে। ৬২’র শরীফ কমিশনের প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৯ এর নূর খান কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৮৩’র মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রণীত হয়েছিল সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফা। ’৯০ পরবর্তী কালেও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনসমূহ শিক্ষার আন্দোলন অব্যহত রেখেছে। বিশেষত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ‘শিক্ষানীতি ও শিক্ষা সংকট প্রসঙ্গে’ পুস্তিকার মাধ্যমে এবং পরে ৬ দিনব্যাপী শিক্ষা সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। এসকল প্রস্তাবনা ও দাবিনামা বিবেচনায় না এনে, ছাত্রসমাজের সাথে মতবিনিময় না করে শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়া প্রতিনিধিত্বমূলক ও গণতান্ত্রিক হতে পারে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা’কে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু স্বাধীনতার পর গত ৩৮ বছরে সেই চেতনার বিপরীতে দেশের রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য আরও তীব্রতর হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতা নতুন নতুনরূপে বিকশিত হচ্ছে। সংবিধানকে বারবার সংশোধন করে কালো আইন চালু, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা, সামরিক এবং বেসামরিক উভয় শাসনামলে নানা অগণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার গণতান্ত্রিক অঙ্গিকার ভঙ্গ করে চলেছে। বছর বছর সরকারের পক্ষ থেকে আশা জাগানো প্রবৃদ্ধির হিসাব এবং জাতীয় আয় ঘোষণার পরও ন্যূনতম পুষ্টি প্রাপ্তির বিচারে জনগণের দারিদ্র তেমন কমছে না, বরঞ্চ ক্ষুদ্র এক অংশের কাছে টাকার পাহাড় জমছে। দেশে কালোবাজারি, মজুদদার, ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট, দুর্নীতিবাজদের দাপট এতো বেশি যে জনগণ তাদের কাছে সম্পূর্ণ অসহায়। কমিটি শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করাসহ নানা প্রগতিশীল কথা বলেছে। বলা হয়েছে, “বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা।” “গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।” (পৃষ্ঠা-৮)
“••• শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের সহায়তা প্রদান করা।” (পৃষ্ঠা-৭) ইত্যাদি। কিন্তু মূল প্রস্তাবনায় অনেক স্ববিরোধী ও বিভ্রান্তিকর প্রস্তাব এবং সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদবিরোধী প্রস্তাব করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর বিভিন্ন আন্দোলনে উত্থাপিত দাবিনামা যার মাধ্যমে এদেশের জনগণের শিক্ষা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি মূর্ত হয়েছে তা আরও মূর্তভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য প্রণীত ১০ দফায়। সেসময়ে আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দ ৩ জোটের নেতৃবৃন্দ অঙ্গিকার করেছিল যে, আন্দোলনে বিজয়ের পর যারাই সরকার গঠন করবে তারা এই ১০ দফা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু ’৯০ পরবর্তী কোন সরকারই এই ১০ দফা বাস্তবায়ন করেনি। তাই এদেশে ছাত্র সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি এই ১০ দফাকে ভিত্তি ধরে এবং তৎপরবর্তীতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষানুরাগী নানা মহলের আরও বিকশিত মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু কমিটি এই দাবিকে বিবেচনায় নেয়নি। কমিটি বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়েছে কুদরত-ই খুদা (১৯৭৪), শামসুল হক (১৯৯৭) কমিটির প্রতিবেদন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্রত্যেকটি শিক্ষানীতির প্রতিবেদনের মধ্যে গণআন্দোলনের দাবি ও গণআকাঙ্ক্ষার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সুপারিশগুলোকে স্মারকলিপি, প্রচারপত্র ও প্রকাশনাসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারসহ জনগণের কাছে তুলে ধরেছে।
এখানে বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ সম্পর্কে সংগঠনের পর্যালোচনা তুলে ধরা হলো।
প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৮ বছর অর্থাৎ ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে। নিয়মশাসিত এই জগতের নিয়ম অধ্যয়নের মাধ্যমে মানব সমাজের সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে কর্তৃত্ব অর্জন এবং প্রকৃতির দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রত্যেক মানুষেরই জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌল শাখাসমূহের নূন্যতম জ্ঞান অর্জন বাধ্যতামূলক। এই বাধ্যতামূক শিক্ষার স্তর নির্ধারিত হবে কোন নির্দিষ্ট সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশের মাত্রানুযায়ী। আজকের সময়ের প্রয়োজন অনুসারে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা কোনোমতেই যথেষ্ট নয়। ’৯০ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উত্থাপিত ১০ দফায় ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার দাবি করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ২০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রয়োজন অনুসারে এই বাধ্যতামূলক শিক্ষার স্তর স্নাতক পর্যন্ত হওয়া দরকার।
কমিশনের স্ববিরোধী বক্তব্যের আরেকটি নিদর্শন হলো প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে এর দায়িত্ব বেসরকারি বা এনজিও খাতে হস্তান্তর করা যাবে না। কিন্তু এরপরই বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোন এনজিও প্রাথমিক শিক্ষাদানকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে চাইলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান পালন করে করতে পারবে। এর বাস্তবে বাস্তবে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলেও শিক্ষার বেসরকারিকরণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ঝরে পড়া সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে উপবৃত্তি সম্প্রসারণ, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে চালু, বিদ্যালয়ে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা এবং স্কুলের পরিবেশ আকর্ষণীয় ও আনন্দময় করতে খেলাধুলার ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড টয়লেট ইত্যাদির ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। (পৃষ্ঠা ১৩-১৪) এটি খুব আশাব্যঞ্জক প্রস্তাব হলেও এর জন্য অর্থায়ন, সময়সীমাসহ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা নেই। এর পাশাপাশি বিনামূল্যে বছরে ২ সেট ইউনিফর্ম সরবরাহ এবং বিনামূল্যে বইয়ের সাথে খাতা, কাগজ, কলম, পেন্সিলসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণও সরবরাহ করা জরুরি। ললিতকলা বিষয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শুধু সাধারণ শিক্ষায় নয় মাদ্রাসা শিক্ষাতেও চালু করা উচিৎ।
মানব জীবনের প্রাথমিক ভিত্তি নির্মাণের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে শিক্ষা সম্পর্কিত আলোচনায় আমাদের সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টই প্রথম ১৯৯৯ সালে ‘শিক্ষানীতি ও শিক্ষা সংকট প্রসঙ্গে’ পুস্তিকায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও দাবি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শিশুদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য ২ থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার আয়োজন করতে হবে। এতে শিশুর মধ্যে বন্ধুবাৎসল্য, সামাজিকতা, সৃষ্টিশীলতা, ধর্ম-বর্ণ-আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে পরস্পরের প্রতি সমমনোভাব তৈরি হবে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির শিশুদের জন্য রাষ্ট্রীয় পরিচর্যায় খাদ্য, পোষাক, খেলনা, শিক্ষার অন্যান্য উপকরণসহ স্বাস্থ্য সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ এই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়া তাদের সুস্থ এবং স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব নয়। কিন্তু এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও অর্থায়নের কোন দিকনির্দেশনা নেই। শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষ এবং প্রতি বিদ্যালয়ে ১ জন করে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়ামে উচ্চমূল্যের যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলিত আছে, তাকে কিভাবে সমন্বয় করা যাবে তার কোন প্রস্তাবনা শিক্ষানীতিতে নেই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় কৌশল-৪ এ বলা হয়েছে, “মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সকল ধর্মের শিশুদেরকে ধর্মীয়জ্ঞান, অক্ষরজ্ঞানসহ আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে ধরা হবে।” এই ব্যবস্থা শিশুর মনন গড়ে ওঠার শুরুর পর্যায়ে তার মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনের এবং কূপমণ্ডুক চিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করবে।
প্রাথমিক শিক্ষার ১৬ নং প্রস্তাবে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার মাধ্যম কোন ভাষায় হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আদিবাসী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহের শিশুদের একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে তাদের প্রতি অহেতুক কৌতুহলের পরিবর্তে শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য “মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে ৩টি ধারা থাকবে- সাধারণ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা ধারা, ••• সব ধারাতেই জনসমতাভিত্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক থাকবে।” (পৃষ্ঠা-২১) এই বক্তব্যে দেশে দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা ইংলিশ মিডিয়াম, ক্যাডেট কলেজ প্রভৃতি সম্পর্কে কোন কথা নেই।
মাদ্রাসা শিক্ষা এবং নৈতিক ও ধর্ম শিক্ষা
কমিশনের প্রস্তাবনার একটি বড় স্ববিরোধিতা প্রকাশ পায় মাদ্রাসা শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সমগ্র শিক্ষানীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং বিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে যেখানে “ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মনে সর্বশক্তিমান আলস্নাহতায়ালা ও তাঁর রাসুল (স) এর প্রতি অটল বিশ্বাস গড়ে তোলা •••” (পৃষ্ঠা-১৭) -ই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেখানে বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা, স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ও প্রশ্ন করার প্রবণতাকেই উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রথম ক্ষেত্রে যেখানে বস্তুজগতের সমস্ত বিষয়ের সাথে পরজাগতিক সম্পর্কের কথা বলা হয় দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সেখানে বস্তুজগতের সমস্ত রহস্যের উৎসকেই ইহজাগতিক ঘটনাবলী বলে প্রমাণ করা হয়। উভয়ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি কখনো এক হতে পারে না। ফলে এতে শিক্ষার্থীর মধ্যে তৈরী হবে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবিশ্বাস, দোদুল্যমানতা, হতাশা। শিশুর সৃষ্টিশীল মনোভাব ও জানার কৌতুহল নষ্ট হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে- ‘বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় একটি অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে প্রতিষ্ঠিত। এই শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রেখে একে আরও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে যাতে এ শিক্ষাব্যবস্থা নতুন প্রাণরসে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে।’ (পৃষ্ঠা-২৭) যখন সরকারের পক্ষ থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর শ্লোগান দেয়া হচ্ছে তখন এই পশ্চাৎমুখী, অদৃষ্টবাদী শিক্ষা ধারাকে ‘নতুন প্রাণরসে সঞ্জীবিত করা’ কেন? মাদ্রাসা শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে ঘোষণা করে এই পদ্ধতির শিক্ষা চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয় বলে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে বৃটিশ আমলে এমনকি আশির দশকেও মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচিতে বারে বারে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। কিন্তু এই সংস্কার ও পরিবর্তনে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রাপ্তদের চিন্তা চেতনায় আধুনিকতার লেশমাত্র ছোঁয়া লাগেনি বরং শিক্ষার্থীদের মনে ধর্মীয় চেতনা এবং বিজ্ঞানের মিশ্রণে এক জগাখিচুড়ি ফ্যাসিবাদী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাধীনতার পূর্বাপর সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাদ্রাসা ছাত্ররা সবসময়ই শাসকগোষ্ঠির অন্যায়ের পক্ষালম্বন করেছে। সম্প্রতি দেশে জেএমবিসহ জঙ্গীবাদের ঊত্থান, ফতোয়াবাজির বিস্তার, লালন ভাস্কর্য ভাঙ্গা, মুরতাদ ঘোষণা ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রসারে মাদ্রাসা শিক্ষার ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মাদ্রাসা শিক্ষার পিছনে একটা নির্দিষ্ট দর্শন রয়েছে যার মূল কথা হলো ঈশ্বরবাদিতা, পরকালমুখিনতা ও নিয়তি নির্ভরতা। এ দর্শনকে টিকিয়ে রেখে শুধু কয়েকটি বিষয় পাল্টে দিলেই এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রগতিশীলতা লাভ করবে না। এখানে বিজ্ঞান-ইতিহাস যাই পড়ানো হোক না কেন তা ওই নির্দিষ্ট দর্শনের ছাঁচে ঢালাই হতে বাধ্য।
এটা ভুলে যাওয়ার কারণ নেই যে মাদ্রাসা শিক্ষা একটি বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচলিত ধর্মভিত্তিক শিক্ষাদানের একটি বিশেষ ধারা। তাই এ শিক্ষাধারায় শিক্ষার সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।
কমিশন আরো প্রস্তাব করেছে “••• মাদ্রাসা বোর্ডকে অনুমোদনকারী (অ্যাফিলিয়েটিং) ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে এ দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। বর্তমানে মাদ্রাসা বোর্ড যে দায়িত্ব পালন করছে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা সে সকল দায়িত্বও পালন করবে।” (পৃষ্ঠা ২৮) একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়- এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে কখনোই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আরও দৃঢ় হবে।
কমিশন আরো প্রস্তাব করেছে “মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চপর্যায়ে এবং সাধারণ শিক্ষার উচ্চপর্যায়ের মধ্যে ডিগ্রির সমতা সরকার নির্ণয় করবে।’ (পৃষ্ঠা ২৮) বিগত জোট সরকারের আমলে মাদ্রাসার ফাজিল ও কামিল স্তরকে অনার্স ও মাস্টার্স সমমান ঘোষণা করা হয়েছিল। সেসময় দেশের প্রগতিশীল গণতন্ত্রমনা ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদের মুখে সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান কমিটির সুপারিশে সেই একই সিদ্ধান্ত ভিন্ন কৌশলে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে।
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশ দরিদ্রতা এবং সুযোগের অভাবের কারণে তাদের সন্তানদের সাধারণ শিক্ষায় ভর্তি করাতে পারে না। তারা তাদের সন্তানদের মাদ্রাসা শিক্ষায় ভর্তি করাতে বাধ্য হয়। এই শিক্ষাব্যবস্থা আজকের যুগের বিচারে পশ্চাৎপদ। ফলে এতো বড় জনগোষ্ঠিকে পিছিয়ে রেখে অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রেখে জাতি কখনোই শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারবে না। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে সাধারণ শিক্ষায় রূপান্তর করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
৩য় শ্রেণী থেকে নৈতিক শিক্ষার নামে ধর্ম শিক্ষা চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যায় সামরিক স্বৈরশাসনামলে এরশাদ জান্তা কর্তৃক গঠিত মজিদ খান কমিশনের প্রস্তাবেও ‘৩য় শ্রেণী থেকে ধর্ম ও ইংরেজি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা’র কথা বলা হয়েছিল। সেদিন ছাত্র সমাজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল ও তা প্রতিহত করেছিল। ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়। বিচারবোধ তৈরি হওয়ার পূর্বেই কিছু আচারসর্বস্ব কর্মকাণ্ড কোমলমতি শিশুদের মনকে অহেতুক ভারাক্রান্ত ও সাম্প্রদায়িক করবে। পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজমুখী মনোভাব তৈরি, মহৎ মানুষের জীবনী পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্ম শিক্ষা ছাড়াই নৈতিকশিক্ষা সম্ভব । ধর্মের উদ্‌ভব ও তার বিকাশ, সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা- এসব বিষয়ে ইহিতাস ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা অর্জন করাই হলো ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন। শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এই তুলনামূলক ধর্মশিক্ষা চালু করা উচিৎ।
কারিগরি-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা
কমিটির প্রস্তাবনায় সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে কারিগরি-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা। এই শিক্ষা সমগ্র শিক্ষা কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তা সাধারণ শিক্ষার বিকল্প হতে পারে না। কারণ বস্তুজগতের এবং পারিপার্শ্বিক সমাজের গতিপ্রকৃতি ও পরিবর্তন এবং তার সাথে মানুষের সম্পর্ক-সম্বন্ধের বিজ্ঞানভিত্তিক উপলদ্ধি গড়ে তোলাই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়সমূহ অধ্যয়ন ছাড়া সম্ভব নয়। কারিগরি শিক্ষা মূল শিক্ষার সহশিক্ষা হিসেবে অবশ্যই চালু থাকতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বইপড়া জ্ঞানের পাশাপাশি বস্তুজগতের সাথে হাতে-কলমেও পরিচয় ঘটে। প্রকৃত শিক্ষা কখনোই প্রয়োগ বিমুখ হতে পারে না। তাই কারিগরি শিক্ষাকেই একমাত্র প্রয়োগমুখী শিক্ষা বললে শিক্ষা সম্পর্কে যথার্থ দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যিনি যত বেশী শিক্ষিত তিনি তত দ্রুতই কর্মক্ষেত্রে একটি নতুন শিক্ষা আয়ত্ত করতে পারেন।
রিপোর্টের শুরুতেই বলা হয়েছে - “শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়নে ও প্রগতিতে নেতৃত্ব দানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা।” (পৃষ্ঠা-৭) কিন্তু শিক্ষানীতির ছত্রে ছত্রে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার উপর এত বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যাতে মনে হতে পারে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুসারে দক্ষতা অর্জন।
কমিশন বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছে তা হলো- ‘••• দেশের ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’ (পৃষ্টা-২৪) “••• তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহসহ সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হিসেবে সফ্‌টওয়ার, ডাটা প্রোসেসিং বা কল সেন্টার জাতীয় Service Industry বিকাশে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে।” (পৃষ্ঠা-৪০)
পুঁজিবাদী বিশ্বে দ্রুত প্রসারমান সার্ভিস সেক্টরে অংশগ্রহণ করার তাগিদে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তা দেশের অর্থনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে না। যেকোন বিষয়ে বিস্তৃত ও গভীরভাবে অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন। তাছাড়া আউট সোর্সিং এর বাজার ধরার চেয়েও তথ্যপ্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ দেশীয় সম্পদের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিল্প ও প্রযুক্তির সহায়ক হওয়া।
কমিটি শুরু থেকেই ধরে নিচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর পর অনেকেই আর শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে কিভাবে মূল শিক্ষাতে ধরে রাখা যায় সে ব্যাপারে কোন প্রস্তাব না করে কমিটি তাদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করার প্রস্তাব করেছে। (পৃষ্ঠা-২৬) উপরন্তু যারা এই বৃত্তিমূলক শিক্ষাতেও আসতে পারবে না তারা যাতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে তার জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাক-বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কমিটি প্রকারান্তরে শিশুশ্রমের বৈধতা দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
কমিশন ভবিষ্যতে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব করছে তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। খণ্ডিতভাবে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না, বরং বিশেষায়িত জ্ঞানের সমাহারই বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে কারিগরি, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তির বিষয় বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ বা বিভাগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
উচ্চশিক্ষা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কমিটি তার প্রস্তাবনায় বলেছে “••• এইসব বিশ্ববিদ্যালয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নির্বিশেষে কোন কারণেই বৈষম্যমূলক হতে পারবে না, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করা যাবে না এবং স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাঙালী সংস্কৃতির বিরোধী হতে পারবে না।” (পৃষ্ঠা-৩৩)। ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়নের সময় একইভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রসারের মহৎ উদ্দেশ্য ভিন্ন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালনা না করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘোষণা রক্ষিত হয়নি। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের কাছে শিক্ষা একটি লাভজনক পণ্য হিসেবেই বিবেচিত।
ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা ছিল কমিটি শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করার সুপারিশ করবে। কিন্তু তাঁরা সুপারিশ করেছেন-
“শিক্ষাখাতে বেসরকারি উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে। কলেজ ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে (অর্থাৎ তাদের পরিবারসমূহকে) তাদের পড়াশুনার খরচ সংকুলানে নিজেদের দায়িত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করিতে হবে। যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।” (পৃষ্ঠা-৭৯)
“•••সরকারি অনুদান ছাড়াও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় নির্বাহের জন্য শিক্ষার্থীর বেতন ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যক্তিগত অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ভর্তি ফি ও বেতন খুবই সামান্য। অভিভাবকদের আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হবে।” (পৃষ্ঠা-৩২)
অথচ এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বিভাগভেদে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ হাজার ২০০ টাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেতন ও ভর্তি ফি’র কথা বলাই বাহুল্য। উপরের এই তথ্য থেকে বুঝা যায় ‘বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ভর্তি ফি ও বেতন খুবই সামান্য’- কমিটির এই বক্তব্যে একদিকে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করা হয়েছে অন্যদিকে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। শিক্ষাঋণ চালু করার প্রস্তাব করার মাধ্যমে বাস্তবে ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রমের বিস্তৃতির নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।
অভিভাবকদের আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারণ করার প্রস্তাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিরাজমান বৈষম্য বৃদ্ধি করবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সুস্থ্য মানসিক বিকাশ এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ-সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠবে না।
শিক্ষার সম্পূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। শিক্ষাকে ব্যবসার পণ্যে পরিণত করা হলে একদিকে শিক্ষার অধিকার সংকুচিত হয় অন্যদিকে শিক্ষার মূল্যবোধ নষ্ট হয়। মেধা ও প্রবণতা যাচাইয়ের যত সৎ উদ্দেশ্যের কথাই বলা হোক না কেন শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব রাষ্ট্র নেয়া ছাড়া কোনভাবেই মেধা ও প্রবণতার সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষানীতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভাগীয় পর্যায়ে ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে খোলা চিঠির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কমিটির কাছে সংগঠনের মতামত জানানো হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসমূহের বিরাজমান পরীক্ষাহল, ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকটসহ প্রয়োজনীয় একাডেমিক অবকাঠামোর ব্যাপক সংকট নিরসনে কোনো বক্তব্য এ শিক্ষানীতিতে নেই। শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, “••• ডিগ্রী কলেজগুলোতে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া হবে।” (পৃষ্ঠা-৩২) কিন্তু পদক্ষেপগুলো কি হবে এ বিষয়ে কোন আলোচনা নেই।
সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সমস্ত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে তা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চলছে। অন্যদিকে দেশের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির স্বার্থে এবং ১৮০০ কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করার দাবি তোলা হয়েছে। আপাত সমাধান হিসেবে দেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তর ১৯টি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে সেগুলির অধিভুক্ত করে কলেজসমূহকে পরিচালনা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তা না করে শুধুমাত্র ৬টি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে কলেজসমূহের একাডেমিক সংকট যেমন সমাধান অসম্ভব তেমনি প্রশাসনিক সংকটও সমাধান হবে না বরং সংকট বাড়বে। এবং এ বিষয়ে আশঙ্কা করার যথেষ্ট অবকাশ আছে যে উল্লেখিত ৬টি কেন্দ্র করার মধ্য দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্র হলেও প্রত্যেকটি নিশ্চয় স্বাধীন নয়। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে গাজীপুরস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। ফলে কোন একটি সিদ্ধান্তের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও আঞ্চলিক কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যা হতে পারে। এতে প্রশাসনিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে। ৬ টি আঞ্চলিক কেন্দ্রে ৬ জন প্রো-ভিসি ও তার সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে যা মাথাভারি প্রশাসন তৈরী করবে।
নারী শিক্ষা
নারীশিক্ষার প্রস্তাবনায় বিজ্ঞান শিক্ষার অধ্যায়ে কমিটি প্রাথমিক স্তরে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীতে স্বাস্থ্য ও প্রজনন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সুপারিশ করেছে। মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রমে জেন্ডার স্টাডিজ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য অন্তর্ভূক্ত করারও সুপারিশ করেছে কমিটি। কিন্তু প্রজনন স্বাস্থ্য স্কুলে পড়ানোর সুপারিশ কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। এতে বিদ্যমান সামাজিক ব্যবস্থায় প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা তৈরি হবার বদলে যৌনতাবিষয়ক অতিরিক্ত কৌতুহল তৈরি হওয়ার যথেষ্ট আশংকা আছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যতটুকু সহজ সম্পর্ক আছে তা-ও নষ্ট হবে।
ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার পরিবেশ
কমিশনের সুপারিশে ছাত্র রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব করা হয়েছে- “ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে শিক্ষার্থী রাজনীতির একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরী যার ভিত্তি হবে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়।”(পৃষ্টা-৬৩)। রাজনীতি একটা মহৎ বৃত্তি। রাজনীতি বর্জিত মানুষ সমাজচেতনা বর্জিত মানুষ হয় বলে আমরা জানি। সমাজচেতনা, জীবনদর্শন, রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনা, অন্যায়-অসত্য-অমঙ্গল ও শোষণ-নিপীড়নবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ, সামাজিক-রাজনৈতিক দার্শনিক পথনির্দেশ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সবই রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে কার্যকর হয়। এর বাইরে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক ও কৃষকসহ সমাজের কোন অংশের মানুষেরই থাকা সঙ্গত নয়। কাজেই ছাত্রসমাজকে শুধু শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ কোন অর্থেই সঙ্গত নয় বরং তা অগণতান্ত্রিক। ছাত্রসমাজ দেশের নাগরিক- রাজনীতি করার অধিকার তার সাংবিধানিক অধিকার, কোন অজুহাতে এ অধিকার হরণ করা সংবিধান লঙ্ঘন। গণমানুষের অধিকার, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে এদেশের ছাত্রসমাজ সব সময়ই সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ যেকোন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমাদের ছাত্রসমাজ গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। যতটুকু গণতান্ত্রিক অর্জন আমরা করেছি তা প্রধানত এদেশের ছাত্রসমাজের আন্দোলনের ফসল। বর্তমান সময়ে গণমানুষের অধিকার আদায়, স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন বা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ কি অংশগ্রহণ করবে না? তাই কমিটির এই অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবিরোধী সুপরিশকে ছাত্রসমাজ প্রতাখ্যান করছে।
“শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে দলভিত্তিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা জরুরী। এই লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।” (পৃষ্টা-৭৮) দলবিহীন বা সুনির্দিষ্ট মতাদর্শবিহীন রাজনীতি হয় না। কমিটি ‘শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা’র অজুহাতে নাগরিক হিসেবে ছাত্রসমাজের দল করার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। অতীতের সকল গণবিরোধী সরকারও এই চেষ্টা করেছে। কমিটি শিক্ষানীতিতে এই সুপারিশ করার মধ্য দিয়ে সে ধারাবাহিকতকাই রক্ষা করেছেন। ক্ষমতাসীন দলসমূহের সাথে যুক্ত ছাত্র নামধারী যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্বসহ শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে ধ্বংস করছে, সে কর্মকাণ্ডকে রাজনীতি বললে এ সংক্রান্ত ধারণার উপর কলিমা লেপন করা হয়। এরা যে সমস্ত অধপতিত ও দুর্বৃত্তায়িত বুর্জোয়া দলের সাথে যুক্ত শিক্ষাঙ্গনের বাইরেও তারা একই ধরণের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে।
পক্ষান্তরে, ছাত্রসমাজ এখনও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ববিরোধী আন্দোলন, শিক্ষাসহ যেকোন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করছে- তা আদর্শবাদী ও নৈতিক রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ততার ফসল। সুতরাং, অধঃপতিত ও দুবৃêত্তায়িত রাজনৈতিক দলকে সনাক্ত করে তাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার প্রচার ও প্রয়াসের বদলে ছাত্রসমাজের সচেতন সংগ্রামী ঐক্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের শক্তিকে দুর্বল করার এবং আদর্শবাদী রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোন পদক্ষেপই গণতান্ত্রিক হতে পারে ন
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×