somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

তালেবানের পুনরুত্থান এবং আফগানিস্তানের অনিশ্চিৎ ভবিষ্যৎ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের আগে যে কথা দিয়েছিল সেটা তারা রাখেনি। কথা দিয়েছিল আফগানিস্তানের সকল জাতিগোষ্ঠী ও দলমত নির্বিশেষে একটি ইনক্লুসিভ সরকার তারা গঠন করবে। খুব সম্ভবত তালেবানরা আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরান, চীন ও রাশিয়াকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলেই তারা আমেরিকার বিদায়ের পর তালেবানের ক্ষমতারোহনে নীরব সম্মতি দিয়েছিল আর তালেবানরা দ্রুত ও অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল। তালেবানরা কথা দিয়েছিল আমেরিকার বিদায়ের পর আফগানিস্তানের মাটিতে আর কোন রক্তপাত হবে না। তারা সে কথাও রাখেনি। পাঞ্জশিরে অভিযান ও নির্বিচারে হত্যাকান্ড ঘটেছে। খবরে প্রকাশ সারা আফগানিস্তান জুড়ে ঘরে ঘরে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে তালেবানরা। তালেবানরা কথা দিয়েছিল কোন সন্ত্রাসী গ্রুপকে তারা আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিবে না। কিন্তু জানা গেছে আল কায়েদার নেতারা গোপন আস্তানা থেকে আফগানিস্তানে ফিরতে শুরু করেছে!!!

কিন্তু ক্ষমতা দখল, সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনা এক বিষয় নয়। তালেবানরা পঁচিশ বছর আগেও ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু সেই সময়ের তালেবানী শাসন সারা বিশ্ব দেখেছে। সেই সময় মাত্র তিনটি দেশ তালেবানদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সৌদি আরব, পাকিস্তান ও আরব আমিরাত। সেই সময় পাকিস্তান বাদে কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে তালেবানদের সুসম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন দেশ নব্য তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। সবাই তালেবানদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। কারণ ৯০'র দশকে ক্ষমতা দখল করেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস ও বন্ধ করা, নারীদের পুরোপুরি ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করা, আল কায়েদার সাথে সখ্যতা ও মিত্রতা এবং আল কায়েদা নেতাদের আশ্রয় প্রদান, প্রতিবেশী দেশের সাথে শত্রুতা, বামিয়ানে বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস ছাড়াও নিজ দেশের হাজারা ও তাজিক সম্প্রদায়ের উপর হত্যা, গণহত্যা ও অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানো ছিল তালেবানদের দুঃশাসনের উল্লেখযোগ্য দিক।

তাই নাইন ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানে আমেরিকার আগ্রাসন বিশ্ববাসী নীরব দর্শকের মতই মেনে নিয়েছিল যদিও আমেরিকার সেই আগ্রাসন ছিল মস্ত বড় অপরাধ ও ভুল। আমেরিকার এই ভুলের কারণে এর মাশুল দিতে হচ্ছে আফগানিস্তানের জনগণকে। আফগানিস্তান দখলের ২০ বছর পর আমেরিকা বিদায়ের সময় আফগানিস্তানকে ঠিক ২০ বছর আগের অবস্থায় রেখে গেল! যে সময়ে আফগানিস্তানে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত ছিল মূলত আহমেদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বে নর্দান অ্যালায়েন্স এবং অপরদিকে তালেবানরা। নাইন ইলেভেনের মাত্র দুইদিন আগে পাঞ্জশিরের সিংহ আহমেদ শাহ মাসুদকে অত্যন্ত গুপ্তভাবে হত্যা করে তালেবানরা। সেই আহমেদ শাহ মাসুদের উত্তরসুরি আহমেদ মাসুদই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তালেবান বিরোধী জোটের। পাকিস্তানের সরাসরি সামরিক সহায়তা ছাড়া তালেবানরা পাঞ্জশিরে আংশিক সফল অভিযান চালাতে পারতো না।

তালেবানরা যোদ্ধা সন্দেহ নাই। শুধু তালেবান নয় আফগানিস্তানের মানুষেরাই যোদ্ধা। যোদ্ধা বলেই তারা তিন তিনটি পরাশক্তিকে তাদের মাটি থেকে উচ্ছেদ করতে পেরেছে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার বিদায়ে তালেবানরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে সন্দেহ নাই। কিন্তু সকল জাতী গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে আমেরিকা পরবর্তী দেশ শাসন এবং বিশ্ব সমাজের বৈধতা আদায় হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রথম পরীক্ষাতেই তালেবানরা ফেইলড করেছে। দুই একজন ব্যতিক্রম বাদে তালেবানরা সবাই সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতুন জাতি থেকে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও সংখ্যায় কম নয়। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী এবং নিজ দেশের অন্যান্য জাতীগোষ্ঠীর সবাই তালেবানদের সন্দেহের চোখে দেখছে। এছাড়াও প্রোগ্রেসিভ এবং নারী জাতির বিশাল অংশ তালেবান বিরোধী। বিভিন্ন স্থানে নারীরা তালেবান বিরোধী বিক্ষোভ ও মিছিল করতেছে। তাই তালেবান বিরোধী অংশও কম শক্তিশালী নয়।

এটা সত্য তালেবানরা আফগানিস্তানে বিপ্লবের মাধ্যমে বা গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসেনি। ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। তাই শংকা এত সহজে কাটবে বলে মনে হয় না। তালেবানদের আচরণ সন্তোষজনক না হলে পরাশক্তি এবং আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোই নিজ স্বার্থে তালেবান বিরোধী বিভিন্ন শক্তির সাহায্য ও সমর্থনে এগিয়ে আসবে। এছাড়াও তালেবানরা নিজেরা বিভিন্ন গ্রুপ ও উপগ্রুপে বিভক্ত। ক্ষমতার লড়াই ও আদর্শের বাস্তবায়ন নিয়ে অন্তঃদ্বন্ধ নিজেদের মধ্যেও প্রকট আকারে আছে। তাই চূড়ান্ত গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে আফগানিস্তান যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশটিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে। পুরো দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়বে। তালেবানদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আমেরিকার বিদায়ের রহস্য হয়তো এখানেই নিহিত।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫১

আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....

বিএনপি জানে তাদের মূল প্রতিপক্ষ কারা.....
ছাত্রসমন্বয়করা জানে রাজনীতিতে তাদের দৌড় কতদূর...

তারেক রহমানের যখন দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে তখনই হাসনাত গং নানান কাহিনী শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৮

পিউ রিসার্চের ২০১৫ সালের একটা জরীপের ফলাফল নিয়ে এই পোস্ট দিলাম। পিউ রিসার্চ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সামাজিক জরীপ এবং গবেষণা সংস্থা। এই জরীপের বিষয় ছিল, ২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্বেতশুভ্র সোর্ড লিলি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৪



সোর্ড লিলি বা মেক্সিকান সোর্ড লিলির নামের সাথে লিলি থাকলেও এটি আসলে লিলি বা লিলি পরিবারের কোনো ফুল নয়। কিভাবে কিভাবে যেনো এর নামের সাথে লিলি জুড়ে গেছে। এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কেন দাবী করলো না এনসিপি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৫


বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে আওয়ামী লীগ দলটি এখন ফুটবলের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ না পুনর্বাসন ইস্যুতে বড়ো ছোটো সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। নবগঠিত রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মিস্টার মাওলা"

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০৯


বিটিভিতে খুব সম্ভবত আগে একটি বাংলা ছবি প্রচার করা হতো , নাম 'মিস্টার মাওলা'। নায়ক রাজ রাজ্জাক, অভিনিত ছবির সার-সংক্ষেপ কিছুটা এমন: গ্রামের বোকাসোকা, নির্বোধ ছেলে মাওলা‌। মাকে হারিয়ে শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×