ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ মূলত আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো তথা পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জিলেনস্কি মূলত পশ্চিমাদের তাবেদার ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি নিখাদ আমেরিকার ভাঁড়। আমেরিকার দেওয়া প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী তিনি বক্তব্য দেন। পশ্চিমারা কাড়ি কাড়ি ডলার এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ইউক্রেনে ঢালতেছে ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য নয় বরং রাশিয়াকে বিধ্বস্ত এবং নাস্তানুবাদ করার জন্য। ইউক্রেনের জনগণ এখানে গিনিপিগ সন্দেহ নাই, কিন্তু পশ্চিমাদের প্রেস্ক্রিপশনে ইউক্রেনের জনগণকে গিনিপিগ বানিয়েছেন খোদ তাদেরই প্রেসিডেন্ট। তিনি শুধু নাটক বা সিনেমার ভাঁড় নন, তিনি বিশ্বরাজনীতিরও ভাঁড়।
আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব সারা বিশ্বে যে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে ঠিক এই কারণে ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে হবে এমন কোন কথা নাই। পশ্চিমারা যদি সারা বিশ্বে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ নাও চালাতো তাহলেও ইউক্রেনকে সমর্থন করার কোন যুক্তি নাই। কারণ এই যুদ্ধের মূল কারণ কী? মূল কারণ হল ন্যাটোর সম্প্রসারণবাদী নীতি। পশ্চিমারা রাশিয়ার দোড়গোরায় এসে ড্রাগনের নিঃশ্বাস ছাড়তেছে আর রাশিয়া আন্তর্জাতিক পরাশক্তি হয়ে তা চুপ করে মেনে নিবে জিওপলিটিক্যাল ভিউতে তা অসম্ভব! পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য শুধু নিঃশ্বাস ছাড়ার মধ্যেই সীমিত থাকলেও হত, কিন্তু পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য হল ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বে তাদের নিরুঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।
এই জন্য বলির পাঠা হিসাবে ইউক্রেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই ২০১৪ সালে ইউক্রেনে ক্যু করে পশ্চিমাপন্থী ভাঁডকে ক্ষমতায় আনা হয়। বর্তমানে মার্কিন সিআইএ ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস বারাক ওবামার প্রেসিডেন্সির সময় ছিলেন ডিপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সময় তিনি বলেছিলেন "ইউক্রেনকে ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত করলে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হবে।" এর মানে দাড়ালো পশ্চিমারা এটা ভাল করেই জানতো যে ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য পদের টোপ দিলে ঘোলা জলে মাছ (রাশিয়া) শিকার করা যাবে। আর এই মাছ শিকার করতে পারলে বাদবাকিদেরও পর্যায়ক্রমে শিকার করা যাবে। ঠিক এই কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিছুদিন আগে বলেই ফেলেছিলেন তাইওয়ানকে ইউক্রেনের মডেল অনুসরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আমেরিকা তাইওয়ানে চীনের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করবে।
রাশিয়ার পর শুধু চীন নয় ইরান, ভেনেজুয়েলা, উত্তর কোরিয়াও তাদের পর্যায় সারণির নিশানা! ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনরায় করে ইরানকে নির্বিঘ্নে পরমাণু কর্মসুচি পরিচালনা করতে দেওয়া এবং বিশ্ব বাজারে অবাধ বাণিজ্য করতে দেওয়া পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য নয়। ইরানকে শেষ করে দেওয়াই পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকা নিজেকে প্রত্যাহার করে শাখের করাতে পা দিয়েছে-না পারছে গিলতে আর না বমি করতে। স্বাধীনচেতা দেশগুলোকে ধ্বংস করে পশ্চিমারা ভেবেছিল এভাবেই বিশ্বে তাদের নিরুঙ্কুশ আধিপত্য শক্তিশালী হবে এবং দীর্ঘায়িত হবে। কিন্তু চোখে বালু পড়ার মত সমস্যা হল রাশিয়ার গ্যাস এবং তেল শক্তি যা না হলে ইউরোপ কার্যত অচল। এরফলে রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ নিয়ে ইউরোপের মধ্যে চরম দ্বিধা বিভক্তি দেখা দিয়েছে। পশ্চিমারা চেয়েছিল ইউক্রেনে রাশিয়াকে টেনে এনে এবং রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করে রাশিয়াকে শুধু দন্তহীন বাঘ নয় বরং দন্তহীন বিড়ালে পরিণত করা।
তাই চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার অর্থই হল আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন করা। তাই যারা ইউক্রেনের জনগণের কথা বলে নাঁকি সুরে কান্না করতেছে এরা আসলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর।
কিন্তু ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতি এবং ইতিহাসের গতিপথ পালটে দিবে। এই পথ নিশ্চয় পশ্চিমাদের অনুকূলে হবে না। তার আলামত ইতোমধ্যই স্পষ্ট। ইউক্রেনে রাশিয়া জয়ের পথে। ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। অন্যদিকে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবেও কাবু করতে পারেনি পশ্চিমারা। ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে পশ্চিমাদের তৈরি সুইফট সিস্টেমের বিকল্পের উত্থান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ সবদিক দিয়ে এখন পতনের দ্বারপ্রান্তে।