সেই চৈত্রের কাঠফাটা কোনো এক রোদেলা দুপুরে দ্বিধাহীন কন্ঠে তোকে বলেছিলাম ভালোবাসি! আশেপাশের সমস্ত ব্যস্ততাকে তুচ্ছ করে তোর মুখে ছিলো এক নির্জন বুদ্ধিতৃপ্ত হাসি। আমি চাইনি কখনো বলতে তোকে বেহায়া শব্দটি, খুব অনুশোচনা হচ্ছিলো নিজের উপর... তাইতো উত্তরের অপেক্ষা না করেই হাটা শুরু করি অলস বাতাসকে উপেক্ষা করে। চৈত্রের ক্ষরতাপ উত্তাপে আমার মুখে দিশেহারা পথিকের ছাপ ছিলো, ছিলো বুকে চিনচিনে ঐতিহাসিক সেই ব্যথা। পিছনে তাকানোর সাহস হয়নি আর আমার। যদি তাকাতাম তবে দেখতে পেতাম সদ্য কৈশোরউত্তীর্ন এক রমনীর স্তব্ধ স্থির তাকিয়ে থাকার দৃশ্য। তোর চোখে মায়া ছিলো, এক মুঠো ভালোবাসাও ছিলো আমার জন্য। কিন্তু ঐ মুহূর্তে বলার সাহস তোর ছিলোনা, ছিলোনা আমার সময়! তারপর... তারপর আবার সেই একি স্থান, তোর বাসায় ফেরার তাড়া, চোখে কিছু একটার প্রতীক্ষা, মন খারাপ করা বিকেলের হতাশা, এসব কিছু ছাপিয়ে আমি আবার তোর সম্মুখে! বলেছিলাম গতকালের জন্য সরি, ভালোবাসি বলবো না কখনো, তবে ভালোবেসে যাব অনন্তকাল। তুই হেসেছিলি, খুব হেসেছিলি আমার পাগলামো কথা শুনে! বলেছিলি তুমি বাসো আর নাই বাসো আমি কিন্তু ভালোবেসে যাবো প্রতিনিয়ত। খুব জানতে ইচ্ছে করে এখনো কি বাসিস ভালো আমায়? এখনো কি চোখ বন্ধ করে কল্পনা করিস ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকের সব কটা উচ্ছ্বল বিকেল? রিকাশায় একসাথে বসে আনমনে হাত ছুঁয়ে দেয়ার প্রবল ইচ্ছের মুহূর্ত টুকু? কিংবা অভিজাত টকটকে গোলাপের বদলে তোকে দেয়া অবহেলিত সেই রক্তজবাটির কথা? মনে পরে, আমাদের কাটানো সমস্ত অতীত? যেখানে হাজার রঙের স্বপ্ন ছিলোনা ছিলো কথা রাখার সাদামাটা বাস্তবতা। ছিলো আশংকা ছাপিয়ে একদল উত্তপ্ত ভরসার মিছিল, আর ছিলো তোর আঙ্গুলের সেই তৃপ্ত আশ্বাসের ছোঁয়া। যেখানে শুধু তুই ছিলি আমি ছিলাম ছিলো আমাদের নীলরঙা এক টুকরো আকাশ, সে আকাশে দুখী শঙ্খচিল ছিলোনা, ছিলো শুভ্র হরেক পায়রা, যারা আমাদের জন্য ভালোবাসা ছড়াতো প্রতিনিয়ত। শহরের শেষ প্রান্তে ছিলো একটা অকৃপন ঝর্না, যার বয়ে যাওয়া পানিতে তোর চপলা হাত ভেজানোর দূর্লভ দৃশ্য ও ছিলো। যেখানে তোর আমার মাঝে আদিম কোনো অভ্যেস ছিলোনা, ছিলো পবিত্র অদ্ভুত চাহনি। সেই কাঁচের চুঁড়ি, চোখের কাজল, সাদা এপ্রোন, দীঘল চুল, আমার কাছে তোর হেঁটে আসা, এসেই অহেতুক চোখরাঙানী... এগুলো কিভাবে ভুলতে হয় আমি জানিনা, তাই পারিনিও ভুলতে। তুই কি পেরেছিস? আমি জানি কক্ষনো না! একদিন পাশাপাশি হাটতে হাটতে তুই বলেছিলি... শান্তির রং সাদা, শোকের রং কালো, কষ্টের রং নীল, বন্ধুত্বের রং হলুদ, প্রকৃতির রং সবুজ... বলেছিলাম আর ভালোবাসার রং? তুই হেসে বলেছিলি ভালোবাসার রং গোলাপী। আমাকে ভালোবাসার রঙ চেনানো আজ সেই তুই আর নেই... আমাকে এক মুঠো রঙে ভাসিয়ে তুই কেন গেলি! খুব ইচ্ছে করে সৃষ্টিকর্তার সাথে যুদ্ধ করে তোকে মর্ত্যে ফিরিয়ে আনি, ইচ্ছে করে খুব তোর হাতটি আবার ধরি! কিন্তু তা কি সম্ভব? সবাই বলে পৃথীবিতে সবই সম্ভব। ডাহা মিথ্যা কথা! আজ সেই দিন... যেদিন তুই বলেছিলি পহৈলা বৈশাখে শুভ্র পাঞ্জাবি তুমি পড়ে এসো, আমি একটা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পড়বো। বলেছিলি আমাকে ঐদিন ভালোবাসা শিখাবি! কিন্তু... কিন্তু তার আগেই অসমাপ্ত কাব্য রচনা করে গেলি তুই। যে কাব্যের শেষ কটি লাইন এখনো মেলাতে পারিনি আমি, পারবো বলে মনেও হয়না। কাব্যটি লাশ হয়েই থাক... তোর মত নিষ্ঠুর এক! প্রতিবছর বৈশাখ আসে নানান ঢঙে, কিন্তু আমার ভালোবাসা শিখা হয় না আর। আমি ভালোবাসা কি তাও আর জানতে চাইনা, শিখবো না কাকে বলে ভালোবাসা!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪