somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঊনলৌকিক (ছোটগল্প)

২৩ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড়বোনের বিয়ে এ সপ্তাহে। বাসার সবাই অতি উৎসাহী ভঙ্গিতে ইয়া বড় একটা লিস্ট নিয়ে বাজারে বেরিয়েছে। সব বিষয়ে বরাবরই নিরুত্তাপ থাকা আমি বাসায় একা রয়ে গেলাম। অবশ্য একা শব্দটা পুরোপুরি প্রযোজ্য না। অনেক বছর ধরে আমাদের বাসার বিভিন্ন ফুটফরমাশ খেটে আসা ফজলু চাচাও আছেন বাসায়। এই মুহূর্তে আমি পায়চারী করছি এক রুম থেকে আরেক রুমে। মূলত পায়চারীর নামে অপেক্ষা করছি কলিং বেলের শব্দের৷ ছোট চাচা রওয়ানা দিয়েছেন, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে এসেও পৌঁছাবেন। আমার পরিচিত যতজন গুরুগম্ভীর মানুষ আছে তার মধ্যে ছোট চাচার স্থান সবার উপরে। যথেষ্ট গম্ভীর হলেও কেন যেন তাকে আমার খুব ভালো লাগে।

কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দ্রুতপায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। ছোটচাচাকে আজ কেন যেন অন্যরকম লাগছে৷ আমাদের শেষ দেখা হয়েছিল দাদার মৃত্যুতে। বছর দেড়েক হয়ে গেছে। ছোটচাচা তার চশমা পাল্টেছেন। আগের চারকোণার থেকে এই গোলাকার মতন চশমায় তাকে বেশ ভালো মানিয়েছে।

আমার চিরাচরিত গুরুগম্ভীর ছোটচাচাকে আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজের মনে হলো। বিষয়টা নিশ্চিত হলাম যখন তিনি ফ্রেশ হয়েই আমার রুমে চলে এলেন গল্প করার জন্য।
'কি খবর তোর? পড়াশোনার কি অবস্থা?'
'এইতো চলছে।'
' টেবিলে তো একাডেমিক বইয়ের থেকে গল্পের বইয়ের সংখ্যাই বেশি! মিসির আলী সমগ্র, তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র,............'
কথা আগাতে থাকে। এক ফাঁকে চাচাকে জিজ্ঞেস করি, 'তুমি কি অলৌকিক কোনো কিছুতে বিশ্বাস করো চাচা?'
কয়েকদিন ধরে হরর বই বেশি পড়া হচ্ছে। তাই হয়ত কারও সাথে কয়েক মিনিট কথা বললেই ঘুরেফিরে আড্ডার টপিককে আমি ভূতপ্রেতের দিকে নিয়ে যাই৷
'আসলে আমার মনে হয় সব ঘটনাকেই লজিকের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়'
'বাবার মুখে শুনেছি তোমাকে নিয়েও নাকি অনেক অদ্ভুদ গল্প আছে'
'যেমন?'
'তোমার বয়স যখন অনেক ছোট তখন একদিন তোমাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না, পরে সন্ধ্যাবেলা তেঁতুল গাছের ডালে পাওয়া যায়। একবার এক সাধু বাবা তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তুমি খারাপ ছাত্র থেকে রাতারাতি ভালো ছাত্র হয়ে যাও।
'আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার! তুই কি প্লাসিবো ইফেক্টের নাম শুনেছিস? এটা রোগীর এমন এক মানসিক অবস্থা সৃষ্টি করে যাতে রোগীর মনে হয় যে তার রোগ সেরে যাচ্ছে। যদিও এর পিছনে কোনো ঔষধ দায়ী না, রোগী সুস্থ হয় শুধুই তার মানসিক জোরে৷ আরেকটু পরিষ্কার করে দিচ্ছি। ধর ডাক্তার রোগীকে ঔষধ দিলো কিন্তু রোগ ভালো হলো না। এরপর রোগী ডাক্তারের কাছে আবার গেলো। ডাক্তার তখন মাথা খাঁটিয়ে জানালো রোগীকে উচ্চমানের বিদেশী ঔষধ দিতে হবে। কিন্তু তিনি তখন বিদেশী ঔষধ না দিয়ে আগের ঔষধের সমমানেরই কিছু একটা দিলেন। কিন্তু দেখা গেলো রোগী তাতে দিব্যি সুস্থ হয়ে গেছে। কারন রোগী ভেবে নিয়েছিলো এটা উচ্চমানের ঔষধ, এটা একপ্রকার অব্যর্থ, এতে রোগ সারবেই। সাধুর আশীর্বাদের বিষয়টাও হয়তো তেমন। তিনিই আমার মনে প্রথম ধারণা জন্মে দিয়েছিলেন যে আমার পক্ষেও ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। আমি ভেবে নিয়েছিলাম যেহেতু তিনি আশীর্বাদ করেছেন সেহেতু যেকোনো মূল্যে আমার রেজাল্ট ভালো হবেই। আর ছোটবেলায় খেলতে খেলতে তেঁতুল গাছে উঠে গিয়েছিলাম, পরে আর নামতে পারি নি। এর পিছনে মোটেও অলৌকিক কোনো কিছুকে দায়ী করা যায় না।'
'তাহলে কি অলৌকিকতার পুরো কন্সেপটাই ফিকশন? বাস্তবে আদৌ এরকম ঘটে না?'
'আমার তো মনে হয় না। আসলে মানুষই নিজেদের প্রয়োজনে এরকম গল্প ফাঁদে।'
'আমার এক বন্ধুর কাছে তার এলাকার একটা গল্প শুনেছিলাম। যশোর অঞ্চলের মানুষের কাছে পীর বলু দেওয়ান মোটামুটি পরিচিত এক নাম। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন বেশ রহস্যময় লোক। মৃত্যুর পরও সেই রেশ কাটে নি। স্বাভাবিকভাবে পীর আউলিয়াদের মাজার হয় একটা, কিন্তু তার দুইটা। একটা চৌগাছার হাজরাখানা গ্রামে, আরেকটা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ধোপাদি গ্রামে৷ কিংবদন্তী আছে তিনি মারা যান তার মাতুলালয় হাজরাখানা গ্রামে। সেখানে তাকে সমাহিত করা হয়। হাজরাখানার মাজার সগৌরবে জানান দিচ্ছে সেই ঘটনা। আবার একই দিন যাত্রাপুর গ্রামের লোক দেখতে পান বলু দেওয়ান মারা গেছেন যাত্রাপুরে বসে। পরে তাকে সমাহিত করা হয় যাত্রাপুরের পাশে ধোপাদি গ্রামে৷ এই ঘটনাকে তুমি কিভাবে দেখবে?'
'কিভাবে দেখবো আবার! আমার কাছে বানোয়াট লাগছে সবকিছু৷ একজন মানুষ দুইবার মারা যায় কিভাবে?’
'একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছো কেন? এমন কি হতে পারে না যে উনি মারা গেছেন এরপর কোনো অশরীরী কেউ তার রূপ ধরে অন্য গ্রামে চলে গেলো! আমি তো অনেক শুনেছি জ্বীন,ভূত মানুষের আকার ধারণ করতে পারে নিমেষেই।'
'ভূতের গল্প পড়তে পড়তে তোর মাথাটা পুরোপুরিই গেছে৷ বাস্তবে আদৌ ভূতপ্রেত বলতে কিছুই নেই৷ ধর যদি বাস্তবে ভূতপ্রেত থাকতো তাহলে আমি বা তুই নিশ্চয়ই কখনো না কখনো দেখতামই। দেখেনি তো? কিংবা ধর ......... '
আমি প্রায় সবটুকু মনোযোগ দিয়ে শুনছি ছোটচাচার কথা ঠিক তখন বেজে ওঠে আমার ফোনের রিংটোন। পাশের রুমে চার্জে বসিয়ে এসেছিলাম। আমার ফোনে সচরাচর কেউ কল দেয় না৷ তাই উঠে গিয়ে রিসিভ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম না। তবে দ্বিতীয়বার যখন আবার বেজে উঠল তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে গেলাম। ভাবলাম কোনো জরুরী কল হবে হয়তো। ফোন হাতে নিতে দেখি মায়ের নাম্বার৷ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মা তার চিরাচরিত কন্ঠ বাদ দিয়ে অনেকটা কান্না ভেজা গলায় 'হ্যালো' বললো। মায়ের এরকম গলা নতুন কিছু না। একটা ১০০ টাকার নোট হারিয়ে গেলে কিংবা রাস্তায় হাঁটার সময় নতুন শাড়িতে সামান্য কাদা ছিটকে উঠলেও তিনি এরকম করে থাকেন। কিন্তু এরপর মা আমাকে যারপরনাই হতবাক করে দিয়ে যা বললেন তা হলো, 'তোর ছোটচাচা ঢাকা আসার পথে গুরুতর এক্সিডেন্ট করেছে৷ এখন হাসপাতালে আছে।অবস্থা খুবই মারাত্মক। দ্রুত রক্ত ম্যানেজ করতে হবে । তুই দেরি করিস না, শিগগিরই চলে আয় বাবা'
আমি যেন মুহুর্তেই সবটুকু হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেলো মেঝেতে৷ ঠিক তখনই ওপাশের রুম থেকে কে যেন বলে উঠল, 'কিসের শব্দ হলো?'
আতংক কিংবা বিষণ্ণতায় মুষড়ে পড়া আমি আন্দাজ করতে পারলাম না এটা কার গলার স্বর। আমাদের ফুটফরমাশ খাটা ফজলু চাচার নাকি এতক্ষণ ধরে আমার পাশে বসে গল্প করে আসা ছোট চাচার!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×