আরবের সাথে ভারতের ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল মুহাম্মদ (সা.) এর ইসলামের আগে থেকেই। ভারতে মুসলিম শাসন আসার আগেই মহাম্মদ (সা.) এর জীবদ্দশাতেই আরবে গিয়ে সরাসরি নবির কাছে ইসলাম গ্রহণ করে আসা লোকেরা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরপর সমগ্র উপকূল জুড়ে ব্যাপক প্রচারকার্য চালানো হয় এবং বেশ কিছু স্থানীয় অধিবাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অষ্টম শতাব্দীতে মুহাম্মদ বিন কাশিমের নেতৃত্বে আরব বাহিনী সিন্ধু জয় করে। সিন্ধু উমায়াদ খিলাফতের পূর্বতম প্রদেশে পরিণত হয়। এরপর ইংরেজ আমল পর্যন্ত ভারতীয় জনগণ ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে থাকে।ভারত ভাগ হওয়ার পরে মানুষ দেশান্তরিত হলেও খুব একটা ধর্মান্তরিত হননি। বর্তমানে ভারত বর্ষের তিন দেশের ধর্মীয় পরিসংখ্যান দেখুন-
ভারতে মোট জনসংখ্যা ১৩৪ কোটি, হিন্দু ১০৬.২৬ কোটি (৭৯%) কোটি, মুসলিম ২০ কোটি (১৫%)
পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যা ২১ কোটি, হিন্দু ০.৩৩কোটি (১.৬%), মুসলিম ২০ কোটি (৯৭%)
বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি, হিন্দু ১.৭০ কোটি (১০%), মুসলিম ১৪.৯৬ কোটি (৮৮%)
তিন দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭২ কোটি, হিন্দু ১০৮ কোটি (৬৩%), মুসলিম ৫৫ কোটি (৩২%)
এই ৫৫ কোটি মুসলমানের পূর্বপুরুষ অধিকাংশই স্থানীয় নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়েই ভারতের মুসলমান হয়েছে, যা প্রায় ভারতবের্ষের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। গবেষকদের দাবি সুফি-দরবেশদের হাত ধরেই সাধারণত নিম্নবর্ণ ও অস্পর্শ দলিত/হরিজন সম্প্রদায়ের হিন্দুরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। আজ ভারতের নিম্ন বর্ণের ও অস্পর্শ দলিত/হরিজন সম্প্রদায়ের হিন্দুরা যেমন আছে এই মুসলিমদের অবস্থা আরো খারাপই হতো। কারণ দলে দলে মুসলিম হওয়ার কারণে হিন্দুদের মধ্যে শ্রী চৈতন্যসহ হিন্দু নেতৃবৃন্দের জাতপাত বিরোধী একটা মতাদর্শ তৈরি হয় এবং বৈষ্ণবদের জাগরণ ঘটে। তাতে আজ জাত-পাতের কঠোর গিট্টু হালকা হয়েছে। নইলে সেই উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের পদতলেই থাকতে হতো সকল নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের। আজ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলিমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করেছে, বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক তারা, বড় বড় পদে চাকরি করছে, পেশাজীবী হিসেবে যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে। যদি তারা নিম্ন বর্ণের বা অচ্ছুত হিন্দু থেকে যেতো তাহলে কি এই উন্নয়নটা তারা করতে পারতো না। বাংলাদেশে নিম্ন বর্ণের ও অচ্ছুত হিন্দুদের সেই উন্নয়নটা কিন্তু এখনো তেমন হয়নি। ভারতের চিত্র আবার ভিন্ন। সেখানে এখনো বহু মুসলিম প্রত্যাশিত উন্নতি করতে পারেনি। এখনো ভারতে নিম্নবর্ণের ও হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্নভাবে নিপীড়ন করার কথা শুনতে পাই। কারণে অকারণে রাস্তায় তাদের ধরে মারধর করাসহ বিভিন্নভাবে অপমান করার কারণে কদিন আগেই তামিলনাড়ুতে দলিত ৩ হাজার মানুষের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেখলাম পত্রিকায়। তারা বলেছেন দলিত চিহ্নটা’ যত দ্রুত সম্ভব দূর করতে চাই। একবার দূর হলেই সবধরনের বৈষম্য কমে যাবে।
ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে এখনো বেশি। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রিসার্চ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ সালে উত্তর প্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। হরিয়ানা ও গুজরাটেও নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্ডিয়া টুডের জরিপকৃত বিশ্লেষণ বলছে, প্রতি ১৫ মিনিটে ভারতে দলিতদের বিরুদ্ধে একটি করে অপরাধ সংঘটিত হয়। এবং গত ১০ বছরে দলিত নির্যাতন বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। দলিত সম্প্রদায়ের জীবনমান নিয়ে ২০১১ সালের এক আদমশুমারিতে দেখা গেছে ৬০ শতাংশ দলিত কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছে না; ৫৩.৬ শতাংশ দলিত শিশু অপুষ্টির শিকার; ২০ শতাংশ দলিত বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। বিজেপি নেতাদের দলিত ও তাদের নেতাকর্মী সম্পর্কে খুবই বাজে কথাবার্তা নিয়মিতই বলতে দেখি। মায়ামতীকে তারা যাতা (এমনকি পতিতা) বলেই কথা বলে। ধর্মান্তরিত না হলে আজ ভারতের এই তিন দেশের ৫৫ কোটির অধিকাংশ নিম্নবর্ণের ও অস্পর্শ দলিত মানুষের কি অবস্থা দাঁড়াতো?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ৮:২৩