somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

পর্ব-৫: বই দুটি আমাদের ইতিহাস শেখায়

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’
জাকির তালুকদারের ‘পিতৃগণ’



ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসে থাকার কথা, রাজা-বাদশাদের কথা। আর শওকত আলীর এ উপন্যাসে আছে ক্ষমতাবানদের তাণ্ডবে সেসময়েও সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থার বিবরণ। ১২০০ সালের দিকের ঘটনা। তুর্কিরা আসছে সেই ভীতি আছে সামন্ত ও তাদের পাণ্ডাদের, তাদের দৌরাত্মও আছে। এরমধ্যেই আছে সেন-আমলে চরম নিপীড়নের মধ্যে থাকা বৌদ্ধ ও উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতে সীমাহীন নিপীড়িত অবস্থায় থাকা প্রাকৃতজন। রাজনীতিতে এই ত্রিমুখী দ্বন্দ্বর ভিতরে বর্ণপ্রথার অভিশাপ উঠে এসেছে। ওই সময়ের নিম্নশ্রেণির মানুষের জীবনই মূল উপজীব্য। ডোম, কৃষক, কামার, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী- তারাই প্রাকৃতজন। ওই সময়ে অধিকাংশ এলাকাজুড়েই সাধারণ দরিদ্র মানুষ। মধ্যবৃত্ত শ্রেণি তৈরি হয়নি। এই নিম্নশ্রেণির মানুষের ধর্মত্যাগের কিছুটা কারণও উপলব্ধি হয়। উপন্যাসে প্রচুর সংখ্যক সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সময়ের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কি ছিল? সংস্কৃত? এই উপন্যাসের চরিত্ররা কথা বলেছে প্রচুর সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করে। আমাদের মতো সংস্কৃত না জানা মানুষেরও তা বুঝতে সমস্যা হয়নি। ক্ষেত্রকর মানে মনে হয়েছে কৃষক, মৃৎশিল্পী মানে কুমার...। শওকত আলীর ‘উত্তরের খেপ’ পড়ে তখন তাঁর উপর মুগ্ধ। রোকেয়া হলের গেটে প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করছি, আমার মতোই করছেন আরেক ভদ্রলোক। বাংলা সাহিত্য নিয়ে ওনি খুবই তাচ্ছিল্য করছিলেন। উত্তরের খেপের কথা বলাতে, তিনি বললেন, এরচেয়েও ভাল উপন্যাস শওকত আলী লিখেছেন, ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’। পড়ে তাঁর প্রতি অতি মুগ্ধ হই। জগন্নাথ কলেজে তিনি শিক্ষকতা করতেন। খোঁজ করে তার হিসাবও দেখলাম। অল্প টাকা আছে। পুরাতন স্টাফদের কাছে জানলাম ওনি আসেন? বললেন গত পরশুও এসেছিলেন! এরপর তাঁর মৃত্যু সংবাদই পাই, দেখা আর হয়নি।



ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে গেলে গবেষণা করতেই হয়। উপন্যাসের একটি বৃহৎ ভূমিকায় জাকির তালুকদার সে কথাও বলেছেন। পরাক্রমশালী পালরাজাদের হটিয়ে দিয়ে কৈবর্তদের ক্ষমতা দখলের এবং ৩৭ বছর পর ক্ষমতা হারানোর ইতিহাস হল পিতৃগণ। ওটাই আমাদের প্রথম স্বাধীনতা অর্জন।বরেন্দ্রভূমি বলতে আমরা উত্তরবঙ্গকে বুঝি। উত্তরবঙ্গের কৈবর্তদের সংগঠিত করেছিলেন কৈবর্তদেরই সন্তান দিব্যোক। শুধু একজন বীর সেনানীর গল্পই এটি নয়, গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি চরিত্র হল কৈবর্তদের কবি পপীপ। ঐতিহাসিক উপন্যাসের আরেকটি মজা হল, লেখক পাঠককে নিয়ে যান ঐ সময়ে। জাকির তালুকদার সেক্ষেত্রে সফল হয়েছেন অনেকটাই। বৌদ্ধ বিহারগুলোর ভিতরের খবর আমরা পেয়ে যাই। সোমপুর/পাহাড়পুর বিহার আর জগদ্দল বিহারে কি হতো? সামন্তদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকতো সেবাদাসী আর পুরোহিতদের বহুমাত্রিক দৌরাত্ম আমরা দেখি। পালরাজারা বিহার চালানোর জন্য তাদের জমি দিতো। প্রজাদের উপর তারা অতিরিক্ত নিপীড়ন করতো। আর সেইসব বিহারে নির্বাণ লাভের নামে ঘটতো অবাধ যৌনাচার। আমাদের সেই বিজয়ী আদিপুরুষদেরই লেখক পিতৃগণ বলেছেন। তবে এই নামকরণ আমাকে আকৃষ্ট করেনি। কৈবর্তদের বিজয়ের ৩৭ বছরের ইতিহাসে নামটি প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি।দিব্যোক-পপীপদের সংগ্রাম- মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। সাময়িকভাবে হলেও স্বাধীনতার স্বাদ তারা এনেদিয়েছিল। ১০৭৫ সালে মহিপালকে পরাজিত করে বরেন্দ্রর ক্ষমতা দখলে নেন দিব্যোক। তাঁর মৃত্যুর পর শাসন করেন ভাই রুদ্রক এরপর শাসক হন রুদ্রকের পুত্র ভীম। ভীমই রামপালের হাতে পরাস্ত হন।
জাকির তালুকদারের অনেকগুলো ছোটগল্প পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে, আমাকেও মুগ্ধ করেছে। তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ‘মুসলমানমঙ্গল’ ভাল লেগেছিল। শুধু সমাপ্তিতে মনে হয়েছিল, তিনি হঠাৎই মুসলমান হয়ে উঠেছিলেন।

তবুও দুই লেখকের কাছেই কৃতজ্ঞ দুটি ভাল উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৮
৮টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×