পরিসংখ্যান বলে ভারতে প্রতি দশ লাখে ১.৮ জন নারী ধর্ষিতা হয় আর বাংলাদেশে ১০ জন। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে সাড়ে পাঁচগুণ বেশি নারী ধর্ষিতা হয়। এসব পরিসংখ্যান হয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী। ভারত-বাংলাদেশে বহু নারী মুখই খুলতে পারে না। সমাজ সব দোষ চাপিয়ে দিতে চায় ওই নারীর উপরই। তারপরও সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক নারী নিপীড়নের খবর আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনীতি করে নষ্ট হয়ে যাওয়া বখাটে যুবকরাই জড়িত। সিলেটে একদল রাজনৈতিক কর্মী স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করলো স্ত্রীকে। মুন্সিগঞ্জে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে এক বখাটে। নোয়াখালীতে এক নারীকে উলঙ্গ করে নিপীড়ন করে স্থানীয় বখে যাওয়া যুবকরা। কিন্তু এমন আরো হাজারো ঘটনাই অপ্রকাশিতই থেকে যায়।
সৌদি আরবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে কড়া আইন রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ধর্ষিতার সংখ্যা সেখানে যথেষ্টই বেশি৷ ধর্ষক তখনই শাস্তি পাবে, যখন এমন কাজের চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য পাওয়া যাবে৷ তাই ধর্ষণ প্রমাণ করা বেশ কঠিন এখানে৷ শুধু তাই নয়, একা ঘরে ধর্ষণের পর সেই নির্যাতিতা যদি একাই রাস্তায় বের হয় তবে সেও শাস্তি পাবে৷ এখানে, স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণের আওতায় ধরা হয় না৷ আবার সেখানে বিদেশ থেকে যাওয়া নারী কর্মীদের অহরহই ধর্ষণ করা হয়। এই নারীরাও কোন আইনী সাপোর্ট পায় না। ধর্ষিতার পক্ষে চারজন সাক্ষী পাওয়া বাস্তব সম্মত নয়। হয় ওই চারজন ধর্ষকদের পিটিয়ে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করবে নয়তো নিজেরাও সামিল হবে। চার জন সাক্ষী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধর্ষণ হতে দেখবে? হাস্যকর আইন। ইরানে প্রচুর গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ কর্তৃপক্ষ "হিজাব" পরিধান না করার জন্য ধর্ষিতাদের দোষারোপ করে। গণ ধর্ষণের শিকার ধর্ষিতাকেও উল্টো দোষারোপ করে গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটে ওখানে। বাস্তবিক আরব ও পারস্যে ধর্ষণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশ ও ভারতেও। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনে ধর্ষণ অনেক বেশি দেখা যায় পরিসংখ্যানে। সেখানে অধিকাংশ নারীই পারে থানায় অভিযোগ/মামলা করতে। তাই পরিসংখ্যান এসব ক্ষেত্রে কোন সত্যই প্রকাশ করে না।
ভারতের জন্য আরেকটি পরিসংখ্যান রয়েছে যা ভিন্ন তথ্য দেয়। নারীদের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে অনিরাপদ দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। অন্য চারটি দেশ হল কঙ্গো, কেনিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো। ভারতে গণধর্ষণ, ঘরোয়া অত্যাচার, মানব পাচার, প্রচুর পরিমাণে মেয়ে শিশু হত্যার ঘটনা ও পতিতালয়ে বিক্রির ঘটনা ঘটে। সেবাদাসী/দেবদাসী হিসেবেও ওখানে নারীরা নিপীড়িত হয়। পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ বছরে মেয়ে শিশু হত্যার কেস ৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে! পরস্পর বিরোধী পরিসংখ্যান।
ইতালিতে কত শতাংশ নারী কর্মজীবী? আর বাংলাদেশে কতজন নারী সারাদিন ঘর থেকেই বের হয় না? দুটি ক্ষেত্রেই উত্তর অধিকাংশ। এককালের মাফিয়াদের দেশ ইতালিতে এখন ধর্ষণের বা গণধর্ষণের খবর পাওয়াই যায় না। পত্রিকায় রিপোর্ট দেখি গভীর রাতেও ইতালিতে নারীরা নিরাপদ। রাতে দক্ষিণ এশিয়া, আরব/পারশ্যে বা আফ্রিকায় নারীদের দেখাই যায় না। নারীরা এসব দেশে সাধারণত একা একা চলাফেরাও করে না। ধর্ষণে শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে আফ্রিকার দেশই সাতটি। ধর্ষণের সংজ্ঞাতেও পার্থক্য রয়েছে দেশে দেশে। বাংলাদেশে নিজ স্ত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি হাস্যকর মনে করা হবে কিন্তু সুইডেনে এটাও ধর্ষণ। আবার ধর্ষণের কমপক্ষে ৮০% ঘটনা থেকে যায় অপ্রকাশিত। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশে প্রায় ৮৭ ভাগ নারী পরিবারেই যৌন-নিপীড়নের শিকার। এদের প্রায় সকলেই বিষয়টি গোপন করে যায়। বাংলাদেশেও ৮০% ধর্ষণের ঘটনা ঘটে পরিচিত লোকদের দ্বারাই। এসব তথ্য প্রকাশ করতে পারলেও ধর্ষণ কমে আসতো। আমেরিকা ও সুইডেনে এটা প্রকাশ করার প্রবণতা বেশি তাই পরিসংখ্যানেও ধর্ষণ বেশি। ভারত-বাংলাদেশের নারীরাও এসব গোপন রাখতে বাধ্য হয় তাই বিপুল নিপীড়নের শিকার হয়েও পরিসংখ্যানে সেই নিপীড়নের তথ্য নেই তণুকে কে হত্যা করেছে তার তথ্যের মতোই। নুসরাতের নিপীড়ক সিরাজ মাওলানার বিরুদ্ধে বহু যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল যার কোনটাই পরিসংখ্যানের আওতায় ছিল না। শুধু নুসরাত মামলা করেছিল বলেও না, যদি ওভাবে খুন না হতো তবে সিরাজ মাওলানা পবিত্রই থেকে যেতো।