আমরা অনেকেই অপেক্ষায় আছি- আবারো নূর হোসেনের মতো কেউ এসে বদলে দিবে ইতিহাস। আমরা অপেক্ষায় থাকি আর আফসোস করি কেন আসছে না! এই ধর্ষণ, এই মাদক, এই সন্ত্রাস, এই ভোটহীনতা, এই দুঃসময় কাটিয়ে দিয়ে সুন্দর দিন এনে দিবে। কিন্তু নূর হোসেনরা কারা? কোথা থেকে আসে?
নূর হোসেন ছিলেন একজন অস্বচ্ছল শ্রমিক! আরো আগে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের মধ্যে আমরা কেবল রফিক, বরকত, সালাম, রফিক ও শফিউরের নাম জানি। রাজমিস্ত্রির কিশোর পুত্র অহিউল্লাহ, রিকশাচালক আবদুল আওয়াল, অজ্ঞাত পেশার সিরাজুদ্দিন এবং আরো কয়েকজন শহীদ হন ভাষা আন্দোলনে- তাদের নাম ইতিহাসও জানে না। তারা রাজপথ কাঁপাতে এসেছিল অতি সাধারণ পরিবার থেকেই। একাত্তরে ত্রিশ লক্ষ শহীদের মধ্যে কতজন ধনীক শ্রেণি বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির? বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ২৬ জন, চিকিৎসক ২০ জন, অন্যান্য পেশার (সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সমাজসেবক, আইনজীবী) ১৩ জন আর রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকসহ সকল শিক্ষক ও সকল আইনজীবী ধরলে সর্বমোট না হয় হাজার জন হবেন। বাকি শহীদ কারা? সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা কারা? সিংহভাগ সেই দরিদ্র শ্রমিক, কৃষক, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও তাদের সন্তানরাই।
সংগ্রাম করে পরিবর্তন আনতে হলে জীবন হাতের মুঠোয় নিতে হয়। প্রাণ দেয়া নেয়ার খেলা খেলতে হয়। সেই খেলাটা জানে ওই শ্রমিকরাই। আমরা আফসোস করছি-
কিভাবে নোয়াখালীতে এক মাকে এভাবে নগ্ন করতে পারে?
কিভাবে এমসি কলেজের ছাত্রনেতারা স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে?
কিভাবে মাওলানা সিরাজরা কন্যাসম ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করতে ব্যর্থ হয়ে খুন করাতে পারে?
কিভাবে সাগর-রুণি ও তণুর খুনিরা একেবারেই নাই হয়ে যায়?
কিভাবে ইকরাম-মেজর সিনহাদের ক্রস-ফায়ার দেয়া হয়?
আমরা আবারো অপেক্ষা করছি নূর হোসেনের জন্য, ভাষা শহীদ আওয়ালের জন্য, একাত্তরে মূল ভূমিকা রাখা সেই শ্রমিক-কৃষকদের জন্য। তাদের রক্তের বিনিময়ে পরিবর্তন আসলেই হালুয়া রুটির ভাগ নিয়ে কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হয় ধনীক শ্রেণি। মধ্যবিত্তরাও উপরে উঠে হয়ে যেতে থাকে ধনীক শ্রেণি। আর গালি দিতে থাকি সেই সমাজ বদলে দিতে থাকা শ্রমজীবী মানুষদের। খালি কথায় চিড়ে ভিজবে না! ইয়াবা, ধর্ষণ বন্ধ হবে না। এর পেছনে যারা থাকে তাদের পৃষ্ঠপোষকরাই এসব টিকিয়ে রাখে। চিড়া ভেজাতে প্রয়োজনীয় পানির কথাই বলতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৪