ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন বিরোধী এই আন্দোলনে কিছু অসভ্য-বর্বর সামীল হওয়ার ভান করছে। তারা বলতে চাচ্ছে-
পোষাকের কারণেই নারীরা ধর্ষিতা হচ্ছে। সুতরাং সবাইকে সোনাগাজীর নুসরাতের মতো বোরকা ও স্কার্ফে অবগুণ্ঠিত থাকতে হবে। কিন্তু মূর্খ অনন্ত জলিলরা ভুলে যায়, সোনাগাজীর নুসরাত এবং ওই মাদ্রাসার আরো বহু ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নুসরাতকে ধর্ষণ করতে না পেরেই মাওলানা সিরাজ তাকে হত্যা করে।
অনেকেই বলতে চায়- নারী ধর্মীয় অনুশাসন মানছে না বলেই ধর্ষিতা হচ্ছে! কোন ধর্মের অনুশাসন মানবে নারী?
সুফিবাদী মাজার দর্শনের অনুশাসনে গিয়ে নারী নেচে গেয়ে উঠলেই আরেক দর্শনের মানুষ হামলে পড়বে। গণিমতের মাল বলেইতো তাদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করা হবে। হিন্দু ধর্মীয় দর্শনে বাড়তি পর্দা করার বিধান নেই। তারাতো অনুপাতের চেয়ে বেশি ধর্ষিতা হয় না এ কারণে। তাদের ধর্মীয় অনুশাসন কি অন্য ধর্মের লোকেরা মেনে নিবে? ভূটানের অনুশাসনে রাজা স্ত্রীর সব বোনকেই বিয়ে করে। মুসলিম ধর্মীয় অনুশাসন কি সেটা মেনে নিবে? ইসলামী অনুশাসনে ধর্ষণের বিচারে চারজন সাক্ষী লাগে। তার মানে একজন ধর্ষণ করলে, আরো চারজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখতে হবে এবং তারা সাক্ষী দিলেই ওই নারী বিচার পাবে! ধরলাম আপনি একজন সাক্ষী! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেন দেখলেন? মজা নিতে! বাস্তবিক আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন না। হয় নারীকে রক্ষা করবেন নইলে নিজেও ধর্ষণে অংশ নিবেন। সাক্ষী হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেউ দেখবে না।
নারীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হল আফগানিস্তান আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে আফগানিস্তানের নারীরা। নষ্ট মতাদর্শের জলিলরা এসব তথ্য রাখেন না। তারা নিজেরাও সিনেমা বানানোর নামে নষ্টামী করেন আর টাকা ঢেলে আমাদের চোখ বন্ধ রাখতে চান। তার মতো একজন নিম্নমানের নায়ক, প্রযোজক, পরিচালক হাস্যকর সিনেমা বানিয়ে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সর্বনাশ করেছে। এখন নষ্ট করতে চাচ্ছে সমাজ। পাকিস্তান, সোমালিয়া, ভারতে মানুষ খুব বেশি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে আর ওরাই নারী নিপীড়নের শীর্ষ দেশ। ধর্মীয় অনুশাসন নারীকে রক্ষা করে নি, করে না। সুশিক্ষা, সাম্যতা, নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার আর গণতন্ত্রই নারীদের রক্ষা করে। এসব দেশে ৯০ ভাগ নারীই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। ভারতের মানুষ খুবই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। সেখানে বছরে কতটি নারী ভ্রুণ হত্যা করা হয়? খবর নিন! পাকিস্তানে শুধু অনার কিলিং এর নামে কত নারীকে হত্যা করা হয়? নারী নিপীড়নের শীর্ষ দেশের তালিকায় কেন সৌদী আরব, পাকিস্তান, সুদান, ইয়েমেন, সিরিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো মুসলিম দেশ থাকে? জলিলরা কি জবাব জানে?
নারীর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ শহর হল- মিসরের রাজধানী কায়রো, পাকিস্তানের করাচি, ভারতের রাজধানী দিল্লি, কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসা, পেরুর রাজধানী লিমা, মেক্সিকো সিটি, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, নাইজেরিয়ার লাগোস, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা ও তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। অন্য দিকে নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহর হিসেবে শীর্ষে আছে লন্ডন। এরপরই আছে জাপানের টোকিও, ফ্রান্সের প্যারিস, সিঙ্গাপুর সিটি, জাপানের বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র ওসাকা, নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতেই নারীদের জন্য নিরাপদ নগরীর তালিকা দেখুন। শীর্ষ শহরগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্যই- নারীরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে না। নারীরা সাবলম্বী, ক্ষমতায়ন রয়েছে, শিক্ষা ও সাম্যতা রয়েছে, ন্যায় বিচার রয়েছে, নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীরা একা হেঁটে যেতে পারে গভীর রাতেও।
আমাদের ওয়াজের বক্তারা এসব তথ্য জানেন না। তাদের কাছে থাকে অন্তত হাজার বছর আগের তথ্য এবং কাল্পনিক গল্প। অনন্ত জলিলরাও একই পথের পথিক। অনন্ত জলিলের জ্ঞান চর্চার কোন নজির দেখিনি। হাস্যকর এই অভিনেতা অগাধ টাকা দিয়ে নষ্ট করেছেন আমাদের সাংস্কৃতিক অংগন। তার কোন নায়িকা কবে কোন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে অভিনয় করেছেন? অথচ এই মূর্খ লোকটা আমাদের শেখাতে এসেছে- নারী ধর্ষণের কারণ! ভুল তথ্য উপস্থাপন করে মিথ্যা বলা এসকল লোকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬