নাইন-টেনে পড়ার সময় হাত দেখার একটি বই হাতে আসে। আর তা পড়ে শখের জ্যোতিষি হয়ে যাই। আমার এক সহপাঠিনীর বান্ধবীর সন্তান হবে। ওর অনুরোধে হাত দেখে বলি, সন্তান ছেলে হবে। তবে ফাড়া রয়েছে। সাবধানে থাকবেন। সম্ভব হলে আংটি ব্যবহার করতে পারেন। আমার সহপাঠিনীর কাছ থেকে আরো অনেক কিছুই কৌশলে আগে জেনে নিয়েছিলাম। সেসব বলে মেয়েটিকে চমকে দেই। হাত দেখার আগে তার সাথে অনেক কথা বলে নিতাম। অন্যদের কাছ থেকেও জেনে নিতাম। হাত দেখার সময় তার কাছ থেকে শোনা কথা যখন তাকেই বলতাম, সে হতভম্ব হয়ে যেতো।
মেয়েটির মৃত পুত্র হয়। মেয়েটি আবারো সন্তানসম্ভবা হয়। আমি ভর্তি হয়েছি উচ্চ মাধ্যমিকে। মেয়েটির স্বামী আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। একদিন আমাকে ধরে বাসায় নিয়ে গেল। ভালমন্দ খাইয়ে সামনে নিয়ে আসে মেয়েটিকে। হাত দেখে বলি, এবারও পুত্র হবে এবং সুস্থ হবে, কোন ফাড়া নেই। অনেক বছর পরে জেনেছিলাম ওনার পরপর দুটি কন্যা হয়েছিল। কন্যারা এখন ভাল আছে।
কোথায় থাকে সন্তান রেখা? পুরুষের কণিষ্ঠ আঙুলের নিচে ও তালুর প্রান্তে খাড়া খাড়া ছোট বড় রেখা হল সন্তান রেখা। মেয়েদের ক্ষেত্রে বুড়ো আঙুলের নিচে তালুর প্রান্তে থাকে। এই রেখা কাটা কাটি, কালার, জবচিহ্ন, ক্রশ ও অন্যান্য বিষয় বিচার করে দেখা যায় তার সন্তান ভাগ্য আছে কিনা? হলেও কটা হতে পারে? ছেলে না মেয়ে কিংবা সন্তানের হাত ধরে আপনার জীবনে সুখ আসবে কি না তাও বলে দেয়া হয়। কি দেখে কি বলতাম-
প্রথম পদ্ধতি
১। স্পষ্ট ও গভীর রেখা থাকলে পুত্রসন্তান হয়। আবার পাতলা ও হাল্কা রেখা থাকলে কন্যাসন্তান।উপর থেকে নিচের দিকে হিসাব করতে হয়।
২। হাল্কা রেখা থাকলে সন্তান শারীরিক দিক থেকে দুর্বল হতে পারে। রেখা ভাঙ্গা, মাঝখানে বাঁকা বা যবচিহ্ন থাকা মানে ফাড়া থাকা।
৩। কণিষ্ঠ আঙুলের নিচে খুব উঁচু ও সন্তানরেখা স্পষ্ট, তাঁদের বহু সুপুত্র ও সুকন্যা সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪। বৃদ্ধাঙ্গুলের নীচের অংশ খুব উঁচু থাকলে ওই নারী কাকবন্ধ্যা হবে।
৫। একটি সন্তানরেখা অধিক স্পষ্ট থাকলে একটি সুসন্তান হবে এবং সেই সন্তান তাঁদের সুখী রাখবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
এক জ্যোতিষি কিছু কৌশল বলে দিয়েছিলেন। বইতে যাই থাকুক-
১। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে যাতে সবসময় বলি পুত্র সন্তান হবে,
২। প্রথম সন্তান পুত্র হলেই বলতে হবে আপনার কন্যা হবে,
৩। কয়েকটি কন্যা হলে অবশ্যই পুত্র সন্তানের আশ্বাস দিতে হবে, তাদের পাথর পরতে বলতে হবে।
৪। সন্তানহীনাদের পাথর ও তাবিজ পরতে বলতে হবে।
হাতের রেখা দেখে স্পষ্ট বুঝতে না পারলে তখন হাত দেখাতে আসাদের চাহিদা বুঝেই বলতাম। যাদের মিলে যেতো তারা দেখা হলেই খুশি হয়ে বলতো, আপনার কথাই সত্যি হয়েছে। পুত্র হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মিলতো না স্বামী স্ত্রীর দুজনেরই স্পষ্ট পুত্র রেখা থাকার পরও। সন্দেহ হওয়ার কারণে বিখ্যাত জ্যোতিষি কিরোর বই কিনি। বিস্মিত হয়ে দেখি দুটো বইর অনেক কিছুই আলাদা। আরেকটি বই পড়ে দেখি আরো আলাদা। সর্বনাশ! একই রেখার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা থাকলে কোনটা বলবো? সন্তান রেখায় স্ত্রীর হাতে রয়েছে পুত্র, স্বামীর হাতে রয়েছে কন্যা! তাহলে? স্বামীর রেখাকে প্রাধান্য দিতে হবে? আরো জানার আগ্রহ নিয়ে একবার এলিফ্যান্ট রোডে প্রফেসর হাওলাদারের বাসায় গেলাম। আমরা ষষ্ঠদশ ক্লাসের ছাত্র যেনে তিনি হাত দেখলেন না। আপ্যায়ন করে, কিছু গল্প করে বিদায় দিলেন। মনে হয়েছিল তিনি ভয় পেয়েছেন।ততদিনে হাতের রেখা দেখে সন্তান বা ভাগ্য বলাটা যে ভুয়া তা বুঝে ফেলেছি।
আচ্ছা হাতের রেখা দেখে সন্তান সম্পর্কে ঠিক কথা বলা যাবে এটা তো ওই জ্যোতিষিরাই বলেছে। তাদের কাছে কোন ঐশী বাণী আসার কথাও শোনা যায় নি। তারা গবেষণা করে বের করেছেন এমন প্রমাণও নেই। আধুনিক কোন গবেষণাতেই সন্তান রেখার সাথে সন্তানের সম্পর্কের কথা প্রমাণ হয়নি। মাতৃগর্ভে সন্তান থাকে হাত মুঠো করে। তাই ওই সময়েই হাতে রেখা তৈরি হয়। হাত মুঠোবদ্ধ করার জন্য ওই রেখা লাগবেই। হাতের সাথে রেখার সম্পর্ক এখানেই। ভাগ্যের বা সন্তানের কোন সম্পর্ক নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৯