অগাধ বিশ্বাসে মানুষ অষ্টধাতুর আংটি পরে। কি কি ধাতু আছে এই আংটিতে? সোনা, রূপা, তামা, রাং, সিসা, পারদ ও লোহা। অনেকে কাসা, পিতল ও ব্রোঞ্জ এর কথাও বলেন। তবে এ তিনটি মৌলিক ধাতু নয়- তামা, রাং/টিন, সিসা/দস্তা এর একেক মিশ্রণ। হীরা, রুবি, নীলকান্ত, পান্না, গার্নেট, গোমেদ, মুক্তা (পাথর নয়) ইত্যাদি পাথর বসানো আংটিও অনেকে পরেন। স্রেফ স্বর্ণ বা রূপার আংটি যারা পরেন তারা অবশ্য শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যই পরেন। অষ্টধাতুর আংটির মধ্যে থাকা পারদ ও সিসা মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। অন্য ধাতুগুলোও হাতে ব্যবহার করলে ক্ষতি ছাড়া, কোন উপকার হওয়ার সুযোগ নেই। কোন পাথরেরও কোন উপকারিতা নেই। কেতু, রাহু বা শনির দোষ বলেও কিছু নেই আর কোন দোষ কাটানোর ক্ষমতাও নেই পাথরের।
অরুণ কুমার বসাক স্যার যখন পাথর বসানো আংটি পরেন তখন পাথর ব্যবসায়ীদের জন্য সুখ বয়ে আনেন আর বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করেন। লিটন দেওয়ান চিশতিরা দেখাতে পারেন- দেখুন দেশের সেরা পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকও আংটি পরেন। বিজ্ঞানের শিক্ষক হলেই তিনি বিজ্ঞানমনষ্ক হবেন তার নিশ্চয়তা থাকে না। যদি কেউ না হন তবে ক্ষতি অনেক। মৌলবাদী চক্র তাকে ব্যবহার করে বিজ্ঞানমনষ্কতার বিপক্ষে মতাদর্শ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন।অরুণ কুমার বসাক একজন বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বরেণ্য শিক্ষক ছিলেন এবং এখনো পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এমিরিটাস প্রফেসর। তাঁর ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখুন- তর্জুনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুলে চারটি আংটি। তিনি শুধু শোভা বর্ধনের জন্যই এগুলো ব্যবহার করেন তা নয়, একটি বিশ্বাস থেকেই করেন।আংটি পরলে নাকি তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকে! আর কুখ্যাত প্রতারক মোহাম্মদ সাহেদের হাতেও ধাতুর আংটি দেখুন। তিনি হয়তো মনে করেছিলেন, পাথর/ধাতুর আংটি পরে যত অপকর্মই করি না কেন, কেউ ছুঁতেও পারবে না। হায়! সাহেদ এখন জেলখানায়।
মানুষের শরীরে রয়েছে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পাটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, লৌহ, তামা, দস্তা, বোরণ, সোডিয়াম, ক্লোরিন ইত্যাদি ধাতু। সবচেয়ে বেশি রয়েছে পানি। নারীরা প্রায়শই আয়রনের (লোহা) ঘাটতিতে ভূগেন। ডাক্তারগণ তাকে আয়রণ সমৃদ্ধ কচু, কাচাকলা ইত্যাদি খেতে বলেন। বিভিন্ন উদ্ভিদে আয়রন যৌগ থাকে সম্পৃক্ত অবস্থায়। সম্পৃক্ত আয়রনই মানব দেহে কাজে লাগে। আয়রন ট্যাবলেটও খেতে দেন। এর পরিবর্তে যদি লোহার গুড়া কেউ খায় তবে সে মহা বিপদে পড়বে।বেশি খেলে মৃত্যুই ডেকে আনবে। কিন্তু যদি লোহার আংটি পরে তাহলে ওই লোহা তার কোন কাজেই আসবে না। আংটি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে অধিক ক্ষতিকর ধাতুগুলো মানবদেহে সামান্য হলেও ক্ষতি করবে। আবার হাতের যেকোন আংটিই হয়ে থাকে জীবাণুর বাসা। ঠিকমতো ধুয়ে না রাখলে আংটির জীবাণু শরীরে ঢুকে ক্ষতি করবে। আর সরাসরি শরীরে কোন ধাতু প্রবেশ করলে তাও ক্ষতিকর। সুশিক্ষিত ও সচেতন মানুষ কারো হাতে অষ্টধাতুর আংটি দেখলেই বুঝে নিবে লোকটি অসচেতন ও অন্ধবিশ্বাসী। অর্থাৎ অষ্টধাতুর আংটির কেবল ক্ষতিই আছে, কোন উপকারিতা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪০