somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুপো বা মোহনচুড়া বেড়াতে এসেছিল আমার বাড়িতে।

২১ শে মে, ২০১০ ভোর ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পুরান খাতার পাতা থেকে: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬।

গত দু'দিন তাকে দেখেছি বাড়ীর পুকুর পাড়ে। মার কাছে শুনেছি এসেছে বাড়ীর ভিতরেও। আজ দেখলাম ঢুকেছে আমার ঘরে।অবাক হলাম তার আচরণে। বাড়ীর লোকজন জানালো আগে কখনো এত কাছাকাছি আসতে দেখেনি এই পাখিকে। এক বছর হলো পাখিটিকে আমি অন্য রকম ভালোবাসি। আমার দেখা দিতে এসে সে ভীষণ নাড়া দিয়ে গেলো।তারই কিছু রোমন্থন।

২০০৫ সাল চাকরি নিয়ে ঢাকা ছাড়লাম।মনে খুব কষ্ট পেয়েছি, ঢাকায় থাকাটা মনে হয়েছে জরুরী। রাজনীতি আর মুক্ত জীবনের জন্য মনে করতাম শহরই যুতসই। গ্রামীণ জীবনে দূষণ মুক্ত পরিবেশ আছে, মানুষের জীবন প্রণালীর ভিন্নতা আছে, মানুষ প্রকৃতির সাথে আছে সেই সূত্রে একটি সম্পর্কও আছে।সকল মানুষ সকলকে চিনে বলা যায় বংশ পরম্পরায় ফলে হৃদ্যতার সাথে তৈরী হয় বংশানুক্রমিক ঝগড়া ফ্যাসাদ। মুক্ত জীবন চর্চা ব্যাহত হয় মারাত্নকভাবে। শহরে আপনাকে দেখার কেউ নেই গ্রামে আপনাকে দেখছে সকলেই। নানাবিধ ভাবনার দোলাচালে চলে এলাম মফস্বলে।

চাকরিস্থল আমার বাড়ী থেকে ৮০ কিলোমিটার।থানা শহর গ্রামীণ পরিবেশ প্রথম প্রথম আমার একদমই ভালো লাগতো না। সুযাগ পেলেই চলে যেতাম বাড়ীতে। 'বাড়ীটি মোর এমন জায়গায়
যেখানে পাহাড় এসে সমতলে মিলায়
কাঞ্চনজঙ্ঘা সে তো দৃষ্টি সীমায়'।
অফুরন্ত সময় একটি গ্রামে কাটাই, শৈশব কৈশোরের চেনা জায়গা, বাবা মা পরিবারের লোকজন, ছোট্ট ভাতিজি অবনি আর টুকটাক পড়ালেখা। মনের স্থৈর্যতা ছিলনা। কেমন জানি টান অনুভব করতাম ঢাকা শহরের।যাকে বলে ক্ষ্যাপা ভাব আরকি। বেশীর ভাগ সকাল আর বিকাল যেত নদীর ধারে।চাভই নদী।পাহাড়ী নদী কাকচক্ষু জল নিয়ে ঝরণার মতো বয়। সকালে রাতচরা পাখিদের ঘরে ফেরা, দিনের পাখিদের কলোরব, লাল টুকটুকে সূর্যি মামার মোলায়েম আলোর বিচ্ছুরণ আর গ্রামের বালক বালিকা বা বধুদের গরু ছাগল নিয়ে নদীর ডাঙ্গায় গমনে যেন আড়মোড়া দিয়ে উঠে প্রতিবেশ। সন্ধ্যায় দিগন্তে ডানা মেলে পাখিদের ঘরে ফেরা, দু'একটা টুনি বগের শেষ মাছটি শিকারের অপেক্ষায় চুপটি মেরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা, গাছের আড়ালে রবির ঢাকা পড়া, কি কারণে জানিনা অনেক বাঁশঝাড় থাকার পরেও কোন নির্দিষ্ট বাঁশঝাড়ে হাজারে হাজারে গো শালিকের কিচির মিচির যেন লক্ষী পেচার ঘুম জাগানিয়া। সারা বছর নদীতে কমবেশী পানি থাকে। খুব ছোট নদী হওয়ায় জলজল্লাদ ভারতের প্রত্যক্ষ কবলে পড়েনি। নব ফেরাউনদের কবলে পড়ে বাংলা বা পদ্মা মেঘনা যমুনা আজ মৃত্যু শয্যায়। অবাক হয়েছি মৃত পুনর্ভবা নদী দেখে।তাই বলছিলাম নদীতে সারা বছর কিছুনা কিছু পানি থাকে। নদীর দু'ধারের মানুষের জীবনের এক অচ্ছেদ্য অংশ। অদ্বৈতমল্ল বর্মনের 'তিতাস একটি নদীর নাম' এ যে তিতাসের কথা বলা হয়েছে চাভই তারই একটি ক্ষুদ্র ভার্সান।
সকালবেলা নদী এলাকায় হাঁটছি হঠাৎ চোখে পড়লো হুপো বা মোহনচুড়া। পাখিটিকে আমি ছোটবেলায়ও দেখেছি আজ কড়া টান টানছে। সন্মোহিনী ভেলকি লাগিয়েছে তাকিয়ে ছিলাম অপলকে।ডোরাকাটা শরীর লম্বা ঠোট।যত লম্বা ঠোট তত লম্বা তার ঝুটি। ঝুটিওয়ালা পাখি দেখেছি যেমন বুলবুলি। হুপোর ঝুটিটি রূপপুর। দু'পাশে বাত্তি লাগানো তালপাখার মতো লাগাতে পারে খুলতে পারে। দু'তিনবার এ দৃশ্য দেখে চটকে মাতার দশা।কাছে গেলাম ঝুটি বন্ধ করে উড়াল দিল। ডোরাকাটা ডানা দিগন্তে মেলে ধরে ঢেউ খেলানো সাইনসয়ডাল উড়া। একবারে বেশী দূরে যায় না অল্প অল্প করে উড়ে।কিছুদুর গিয়ে থেমেই লম্বা চঞ্চু দিয়ে একমনে খাবার খোচাতে লাগলো। হুপোর আমন্ত্রণে সারা দিলাম।
ঢাকা গিয়ে সলিম আলির 'ইন্ডিয়ান বার্ডস' আর কলেজ থেকে জোগাড় করলাম বাইনোকুলার। গ্রামের পাখিদের সাথে কাটালাম কিছুদিন।

প্রাণিবিদরা বলে সরীসৃপ থেকে পাখির রূপান্তর তার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হাজির নাম হলো-আরকিওপ্টেরিক্স।
ডাইনোসাররা সরীসৃপ, একসময় পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো। পাখি উড়তে পারে, উড়তে পারলেই পাখি হয় না। উইপোকাও জীবনে একবার উড়ে, আর খুবই সাধারণ কথা সবাই শুনেছেন 'পিপিলিকার ডানা গজায় মরিবার তরে'। মশা মাছি মৌমাছি ফড়িং প্রেম ঠাকুর ভ্রমর সকলেই উড়ে।তাহলে শুধু উড়লেই পাখি হয়না। পাখি মেরুদন্ডী এবং উড়ে। এতেই গোল ছুটে না গোল বাঁধায় বাদুড়। তাহলে পাখি মেরুদন্ডী, উড়ে এবং ডিম পাড়ে। উট পাখি আবার উড়ে না সেক্ষেত্রে যে সব চতুস্পদী প্রাণির সামনের পা ডানায় রূপান্তরিত (কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে) তারাই পাখি। কী অদ্ভুত মিল মানুষের বেলায় সামনের পা হয়েছে হাত।মানুষেরও উড়ার আকাঙ্খা আছে।মহাভারত, রামায়ণ বা সোলায়মান নবীর গল্পে বা মিথে পাওয়া যায় উড়ার কথা।তবে মানুষ উড়তে গিয়ে বাঁধিয়েছে লঙ্কা কান্ড। রবি ঠাকুর পারস্যের পথে হেলিকপ্টারে উড়ার অভিজ্ঞতায় বলেছিলেন এ যেন পাখির রাজ্য এক কুৎসিত তেলাপোকা। আর পাখি উড়া মজ্জাগত।
আজ ঠিক ঈদের আগের দিন হুপো আমার বাড়ীতে এসেছিল।






সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১০ সকাল ৭:৩৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×