somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাব্লিক ডিমান্ডের বিচার আসলেই কি নিরপেক্ষ, নাকি পাব্লিকই কোন পক্ষ?

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের কথা বলছি। সেখানের বিচারের কথা লিখছি। গত প্রায় ১৫ বছর যাবত সোস্যাল মিডিয়ার ব্যাপক উপস্থিতির কারনে খুব অল্প সময়ে অনেক দূরে থেকেও এক মাঠে মিলতে পারি। বাংলাদেশ এই মিলনের যেমন ভাল দিক গুলো দেখেছে তার কালো দিকটাও কম দেখেনি।


শিপ্রা বিড়ি খেলেই সেতা তার খুনি বা এই কান্ডে তার জড়িত থাকা প্রমান করে না।

জাতীগত সমৃদ্ধি, সহমর্মিতা আর একসাথে বেঁচে থাকা আমাদের সবার কাম্য। সেটা ধর্ম, দল সব ভুলে হলে আরো ভাল। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে আসলে খুন, গুম, ধর্ষন বা অনৈতিক অনেক অপরাধের সংগঠিত হলেও বিচার খুব কমই দেখি। তবে ইদানিং গ্রেপ্তারটা অন্তত করা হয়। তবে আমাদের বিচার ব্যবস্থার যে ধীর গতি, যা কিনা হিন্দি সিরিয়ালের পর্বকেও হার মানায়। তারপর যেহেতু আমি কোন আইনের লোক না তাই এগুলো নিয়ে নাই বলি।

বলছিলাম পাব্লিক ডিমান্ডের কথা। পাব্লিক ডিমান্ডের কারনে বিচারের মোড় ঘুরে যাওয়ার ঘটনার কথা। আসলে এই ডিমান্ড নতুন কিছু না। খুব ছোট ছিলাম তবুও মনে আছে যখন ২০০১ বা ২০০২ সালের দিকে এরশাদ সিকদারকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল আমাদের এলাকায় মিষ্টি বিতরন করেছিল। আবার এই ফাঁসির আগে তার ভাল আর খারাপ অনেক গুণ কির্তনময় ক্যাসেড বাজারের পাওয়া যেত। সেখানে গানের সুরে তার গুণ গাওয়া হতো।

তবে তখন অনেক মানুষকে এক মাঠে নিয়ে আসা অনেক কঠিন ছিল। বাড়ি বাড়ী যেতে হত। বুঝাতে হত। আরো কর কি। কিন্তু এখন এই ফেইসবুক বা ইউটিউব এই দাওয়াতি কাজটা খুব ভাল এবং সহজে করে দিচ্ছে। এর অনেক ভাল ফলাফলও আমরা দেখেছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় কিংবা তবু হত্যা কিংবা নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের আসামীদের গ্রেপ্তারের সময়। আর খুব নতুন মেজর সিনহার হত্যা।

আর খারাপ দিক? সে তো আরো বেশী। যাবজ্জীবন পাওয়া জামায়াত নেতার ফাঁসি হল এই পাব্লিক ডিমান্ডের নামে। অনেক জামায়াত নেতা সহ বিরোধীদলের নেতাদের সাঁজা কিংবা ফাঁসি হল, যখন তারা নিজেরা নিজেদের নিরপরাধ প্রমান করার সুযোগও পেলেন না। আবার চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের গাড়ি চাপা দেওয়ার অপরাধে বেচারা চালক জমির উদ্দিনের যাবজ্জীবন হল। তিনি জেলেই মারা গেলেন। এই জমির উদ্দিনকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্যারের দলিল সহ একটা লেখা পড়লাম গতকাল। তার অনুসন্ধানে এই চালকের পুরস্কার পাওয়া উচিত, কারন তার প্রচেষ্টায় গাড়ির অন্যরা বেঁচে যায়। আর বেচারা জমির উদ্দিনের ভাগ্যও এমন খারাপ চাপা দিল এমন একজনকে যাতে পাব্লিক ডিমান্ড সৃষ্টি হবে। সাধারন ১৫-২০ জন চাপা দিলেও কিছু হত না। সেখানে এই পাব্লিক ডিমান্ডটা নেই। তবুও সম্মান রাখছি দেখের বিচারের পাল্লায়। হয়তো তারা সঠিকই করেছেন। তবে সরকারের কাছে এই ডিমান্ডের ক্ষেত্রে ১৫ কোটির থেকে ১ কোটি, যারা কিনা সামনে এসেছে তারা তখন পাব্লিক হয়। বাকিরা গননায় আসে না। যা আমরা শাহবাগে দেখেছি।

বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সরকার ব্যবস্থা অন্যের গোলামী করে। সেটা শুধু এখন যারা আছে তারা না, আগে যারা ছিলেন তারাও। এখানে গদিতে টিকে থাকতে যেমন দাদাদের সাহায্য লাগে তেমনি ভোটের সময় না দাম দিলেও পরে পাব্লিকের মন রক্ষা করতে হয়। অনেকটা বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র জমির উদ্দিন বা কাদের মোল্লাদের ত্যাগ করতে হয় আর কি।


সংবাদ সম্মেলনে শিপ্রা এবং সিফাত।

এই এই সৃষ্ট ডিমান্ডকে তুলে ধরতে কাজ করে দেশের প্রথম সারির মিডিয়া। মিডিয়ার একটা থিওরি আছে, নাম এজেন্ডা সেটিং থিওরি। এখানে বলা হল কখনও কখনও জনগন মিডিয়াতে কি প্রচার করবে সেটা নির্ধারন করে দেয়। আবার কখনও উল্টোটা ঘটে। তবে বাহির থেকে জনগনের এই এজেন্ডা সেটিং করা দেয়া দেখলেও, মূলত এটা কখনও হয় না। আধিপত্য আর মিডিয়া তার নিজস্ব মত বা নীতির আলোকে এই সেটিংসগুলো করে থাকে। তারা একটা বিষয়কে সামনে এনে পাব্লিককে দিয়ে সেটার চুড়ান্ত আদায় করে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। এমন ভাবে ফেলে দেয় যেন আর কেউ মনেও করে না। নতুন ঘটনার চাপে চাপা দিয়ে দেয়। যেমন আজ আর কেউ শাহেদকে নিয়ে লিখে না। স্কাইপ কেলেঙ্কারি কিংবা তনু হত্যার কোন খবরও নেই তাদের কাছে। সবাই প্রদীপের আলোতে আলোকিত।
তবে প্রশ্ন যে, এই প্রদীপ খুব খারাপ সেটা মেনে নিলাম, তবে এতদিন কোথায় ছিল তাদের এই রিপোর্ট। আগে অনুসন্ধান করলে এত মানুষ মারা যেত না, হয়তো। মিডিয়ার কাজ কি শুধুই সামনে আসা ঘটনাকে তুলে ধরা নাকি ঘটনার পেছনের টা খুজে বের করা। তবে মাঝে মাঝে এই মিডিয়ার কারনে কিছু কিছু ঘটনা সামনে আসে না, তাও না। আসে তবে সংখ্যা কম।

এবার আসি এই লেখার মূল কারনে। শিপ্রা। যিনি নিহত মেজর সিনহার সহকর্মী ছিলেন। যিনি মাত্র ৩ দিন আগেও নায়িকা ছিলেন আজ যেন রীনা খান এর ভূমিকায় উপনীত হয়েছেন। কারন তিনি তার চ্যানেলের প্রচার করেছেন। আবার তার অনেক ছবি ভাইরাল হয়েছে। যার কারনে সৃষ্টি হয়েছে সেই পাব্লিক ডিমান্ড।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই শিপ্রার বিড়ি খাওয়া কিংবা অনেক ছেলেদের সাথে ছবি তোলা কি তার খুনি হওয়া প্রমান করে? যারা তদন্ত করছে তারা খুজে বের করবেন যদি তারা দোষ থাকেও। শাস্তি পাবেন। কিন্তু আমরা এটাকে এমন ভাবে তুলে ধরছি যেন তাকে এখনই ফাঁসি দেয়া হয়। তিনিই খুন করেছেন। মানছি তার সামাজিক অবক্ষয়ের একটি লাইফ ছিল। এই সময়ে চ্যানেলের প্রোমোট করা ভুল ছিল। তাই বলে এটা তার খুনি হওয়া প্রমান করে না। আবার সে হিন্দু আর প্রদীপও হিন্দু, এই যুক্তিও কেউ কেউ দেখিয়েছেন। যেন তার হিন্দু হওয়াই অপরাধ। আবার সেই পাব্লিকই ভারতে মুসলমানদের কিছু হলে হিন্দুদের গালি দিয়ে ডিমান্ড তুলেন। কিন্তু এটা বুঝতে পারছেন না অপরাধ ধর্ম করে না, করে মানুষ।

এই মেয়েটি বা তার সাথের সিফাত একটি সমাজে বাস করেন। এই পাব্লিক ডিমাণ্ডের সমাজে। সেখানে তাদের টিকের থাকতে হয়। সেখানে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকাটাতে বাঁধা হচ্ছেন আপনি। মানসিক ভাবে তাদের ক্ষতি করছেন। তার পরিবারের মাথা ছোট করে চলতে আপনি বাধ্য করছেন আপনার এই এখনও প্রমানিত না হওয়া ডিমান্ড দিয়ে। পাব্লিক যেভাবে বিষয়টি তুলে এনেছেন তাতে তখন তাদের ডিমান্ডের কাছে আবার তাকে গ্রেপ্তার করা হতেও পারে। নতুন নাটক আসাটা নতুন কিছু না। তবে যদি সে নিরপেক্ষ হয় তাহলে? তাকে সে এভাবে অপমানিত করছেন তার জন্য আপনার বিচার কে করবে?

একটি দেশের বিচার ব্যবস্থা যদি নড়বড়ে হয়, প্রমানের থেকে পাব্লিক ডিমান্ডেট হয় তবে সেটা নিরপেক্ষ বিচার হতে পারে না। কারন এই নিরপেক্ষ পাব্লিকই একটি পক্ষ। তাই ডিমান্ড করার সময়ও সতর্ক হোন। আপনি ডিমান্ড করছেন, কারল কেউ আপনার মাথা চেয়ে ডিমান্ড করতে পারে এদেশে। যদি আপনি ঠিক না হন।।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০৪
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×