somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাত দে

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালাম সরদারের বাড়ির সামনে দিয়ে কুলুকুলু শব্দে বয়ে চলেছে বিষখালী নদী। এই নদীর কাছাকাছি তার কিছু পতিত জমি আছে।সেখানে তিনি শখ করে কিছু তালগাছ লাগিয়েছিলেন।অনেক বছর পর গাছগুলো বড় হয়েছে।সেখানে তাল হয়েছে। গাছগুলো,গাছের তালগুলো দেখে তার মনে খুবই আনন্দ জাগে।গাছের পাঁকা তাল দেখেন আর ভাবেন কালই পেড়ে ফেলব এগুলো।কাঁচাগুলো পরে পাড়লেও চলবে।তিনি প্রতিদিনই এমন ভাবেন।কিন্তু পরের দিন সকালে গিয়ে দেখেন গাছে তাল নেই। এলাকার বজ্জাৎ ছেলেগুলো তালগুলো পেড়ে নিয়ে যায়।তিনি ভাবেন কতগুলো আর নেবে ? গাছে এখনও অনেক তাল। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই তিনি লক্ষ করেন,তার গাছের তালগুলো আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। তার গাছের তাল তিনি খেতে পারছেন না।অন্যে পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি প্রতিটি গাছের গোঁড়ায় কাঁটার ঘের দিয়ে দিলেন। তাতেও ফল হলো না। দেখলেন কাঁটাগুলো গাছের গোড়ায় নেই।দূরে পড়ে আছে।

গ্রামে চৌকিদার ছিলো।সে সারারাত টহল দিতো।সালাম সরদার তাকে বললেন টহল দেয়ার সময় একটু ঐদিকটায় ঘুরে যেতে।তখন চৌকিদার বললো-

"আমার কাম তো দোকানপাট ,রাস্তাঘাট দেখাশোনা করা।হেইডাই ঠিকমতো করতে পারি না।আপনে আইছেন নদীর পাড় পাহারা দেওনের আবদার লইয়া।"

শুনে সালাম সরদার একটু মর্মাহত হলেন।বললেন-

"আরে মিয়ে এমন কর ক্যা?তুমি তো আপনারই লোক।রাস্তা টহলের সময় একটু নদীর পারে গিয়া বাতাস খাইয়া আইবা আর তোমার টর্চটা একটু আমার তালগাছের দিকে মারবা।"

তাতেও চৌকিদার রাজি হয় না।গাইগুই করতে থাকে। অভিজ্ঞ লোক সালাম সরদার বুঝে যান আসল ব্যাপারটি।সাথে সাথেই বলে উঠলেন-

"তুমি নদীর পাড়ে ঘুরান দিও রাইতে।চা পানি খাইতে দিমু নে।"

চকচক করে ওঠে চৌকিদারের চেহারা।লাজুক লাজুক মুখ করে বলে-

"কী যে কন না ভাই! আপনের লগে কি ট্যাকার সম্পর্ক? আইচ্ছা যামু নে আইজ রাইত থিকা নদীর পাড়ে।"

এবার একটু নিশ্চিন্ত হলেন সালাম সরদার। টানা চারদিন পর্যন্ত তিনি দেখলেন গাছের গোঁড়ায় কোনও আঁটি নেই।গাছে তালও আছে।চৌকিদার তার কাজ করেছে।তিনি খুশি হলেন। তবে তার মনে একতু চিন্তার রেখা দেখা দিলো যখন চৌকিদার বললো সে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে।আজ রাতে পাহারা দেবে না।তাই সে রাতে ঘুম আসছিলো না সালাম সরদারের।এপাশ ওপাশ করছিলেন বিছানায়।

ঐদিকে একদল তাল চোর গভীর রাতে এসে জড়ো হয়েছে সালাম সরদারের তালগাছগুলোর নিচে।ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে। এতদিন চৌকিদারের কারণে তারা চুরি করতে পারে নি। তাই আজ গাছ সাফ করে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে তারা।তাই দেরি না করে তাদের একজন উঠে গেল তালগাছে।বাকিরা নিচে রইলো তাল সংগ্রহ ও পাহারার জন্য।নিচ থেকে সিগনাল পেলে উপরের জন তাল পেড়ে নিচে ফেলছে।বাকিরা সেটা সংগ্রহ করে রাখছে।।ভালভাবেই চলছিলো সবকিছু। কিন্তু হঠাৎ তারা শুনতে পায় দূর থেকে কিছু পায়ের আওয়াজ তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। তারা ভাবলো হয়তো সালাম সরদার টের পেয়ে লোকজন নিয়ে আসছে।তারা যে যার মতো করে পালিয়ে গেল। কিন্তু গাছে যে ছিলো সে এসবের কিছুই টের পায় নি।সে গাছেই থেকে গেল সিগনালের অপেক্ষায়।

পায়ের আওয়াজ পেয়ে সালাম সরদার মনে করে চোরের দল পালিয়েছিলো।কিন্তু সেখানে সালাম সরদার ছিলেন না। ছিলো আরেকদল চোর। তারা নদীর পাড়ে তালগাছের কাছে এসে চুরির প্রস্তুতি নেয়। তাদের দল থেকেও একজন লোক তালগাছে ওঠে। সে যখনই গাছের একেবারে আগায় উঠে গেল তখনই শুনতে পেল তার উদ্দেশ্যে গাছের আগা থেকে অন্ধকার ভেদ করে কেউ একজন বলছে-

"এ ব্যাডা হাত দে।"

দ্বিতীয় লোকটি কাকতালীয়ভাবে সেই গাছেই উঠেছিলো যেখানে আগে থেকেই একজন আছে। আগেরজন মনে করেছিলো তাকে সাহায্য করার জন্য তার দলের কেউ গাছে উঠে এসেছে। তালগাছের ভূতের কথা গ্রামবাংলায় ব্যাপকভাবেই প্রচলিত । তাই "হাত দে" শোনার পর ফলাফল যা হবার তাই হলো।

""ওওওওও মা গোওওওওও"" গগণবিদারী চিৎকারে প্রকম্পিত হলো নদীতট। এরপর ধূপ করে একটা আওয়াজ হলো।

চিৎকারটা পরিষ্কারভাবেই শুনতে পেয়েছিলেন সালাম সরদার।তিনি সাথে সাথে ছুটে গেলেন নদীর পাড়ে। চিৎকার শুনে আরও কয়েকজন গ্রামবাসী এসে জড়ো হলো নদীর পাড়ে। গিয়ে তারা যা দেখলো একেবারে হতভম্ব হয়ে রইলো সকলে।

চিৎকারের পরপরই দলের বাকি লোক পালিয়েছিলো।গ্রামবাসী এসে দেখে নদীর পাড়ে গাছের গোড়ায় পড়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে এক লোক।তার চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ। তার মুখে গোঙানির শব্দ। "ভূত" "ভূত" "ভূত"। "আমারে কয় হাত দে।"

তার কথা শুনে গাছের আগায় টর্চ মারলেন সালাম সরদার। দেখলেন মানুষরূপী ভূত মহাশয় গাছের আগায় আড়ষ্ট হয়ে বসে আছেন। ভয়ে নড়তে পারছিলেন না তিনি।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×