" আচ্ছা, তারপর কি হলো বলনা?", মিতুর প্রশ্নে চেতনা ফিরে পেল যেন তনু। "কি আর হবে? আফতাব যে বিয়ে করে ফেলবে আমি বুঝতেই পারিনি। তারপর ও অনেক বার আমার সামনে এসেছিল আর মাফও চাইছে। আমি বুঝি না ওর কত্ত বড় সাহস ও ঘরে বউ রেখে আমাকে ফেরত পেতে চায়। ও আমাকে অনেক ঝামেলা দিছে দোস্ত। আমার ভার্সিটিতেও ও অনেক ঝামেলা করছে। মানুষজনকে আমার নামে উল্টাপাল্টা বলছে। আর তুই তো জানিসই একটা মেয়ের নামে ভার্সিটিতে কোনো গুজব থাকা মানে তার জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাওয়া।" " ঐ ব্যাটাকে সামনে পেলে না মেরে ওর হাড্ডি ভেংগে দিতাম আমি।" মিতুর কথা শুনে হাহাহা করে হেসে উঠে তনু। বলে," তোর কথা বল।" " আমার আর কি কথা। সায়েম অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসতো। এটাতেও আমার কোনো সমস্যা হত না যদি ও আমাকে সত্যি কথাটা বলতো। ও আমাকে বলতেই পারেনাই যে ও রিমা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসে, আর ওর কাছ থেকে ছ্যাকা খেয়ে আমাকে ও জাস্ট ওর মন ভালো করার জন্যে ইউজ করছে। আমি ওকে ছোটোবেলা থেকে চিনি, কিন্তু তাও ও আমার সাথে এমন করল। আমি ভাবতেও পারিনা আমাকে বলা সব কথা ওর মিথ্যা ছিল।" "তোর সাথে ওর যোগাযোগ আছে?" " থাকবে না?? সবকিছুর পরও ও আমার কাজিন। তাই ওর সাথে ফরমাল সম্পর্কটা আমার আছেই।" " আর তোর ঐ বন্ধুটা, কি জানি নাম?" " ওহ, শ্রাবণ? ও বাইরে চলে গেছে পড়তে। প্রথম কিছুদিন যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ওর একটা গার্লফ্রেন্ড হইছে ওখানে, ঐ মেয়েটা খামাকাই আমার সাথে ঝগড়া করল কেনো জানি। তারপর থেকে ওর সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ নাই। তবে ওকে আমি খুব মিস করি। জানিস, তোর সাথে যখন যোগাযোগ ছিল না, ও আর আমি রিকশা নিয়ে কত্ত যায়গায় ঘুরেছি!! ও আমার মন ভালো করে দিত সবসময়। কিন্তু আসলে বন্ধুত্ব ওভাবে টিকে না।" "ভালোবাসাই কি টিকে খুব? কি হলো আমাদের? খুব তো ভালোবাসলাম।" দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে তনু। "আরেহ, চিল ইয়ার । মানুষের জীবনে কি ভালোবাসা আর একবার আসে নাকি??? দেখবি আমাদের জন্যেও কেউ আসবে। তখন আর আমাদের মনে এইসব ফাউল কষ্ট থাকবে না।" ঠিক স্কুলের দিন গুলোর মতই বান্ধবীকে আশা দিল মিতু।
" তুই না অনেক চেন্জ হয়ে গেছিস।" তনু তাকায় মিতুর দিকে। " আমি??" মিতু অবাক। "হুমম। তুই। কেমন জানি ঝিমিয়ে থাকিস তুই।" বান্ধবীকে খুব ভালো করে চিনে তনু, তাই ওর পরিবর্তনটাও খুব ধরতে পারে। " তোর মনে আছে, আমাদের ভর্তির আগে যাব উই মেট নামে একটা মুভি হইছিল? তুই বলতি ঐটার গীত ক্যারেক্টারটা পুরাই আমি। গীত লাফালাফি করে, বেশি বকবক করে, আজব বুদ্ধি দেয়?" " হুমম, বলতামই তো। আমার সবসময় তোকে ঐরকমই দেখতে ভালো লাগে। প্রাণবন্ত।"তনু যেনো পুরানো সব দিনে ফেরত যায়। কলেজ থেকে কোচিং এ যাওয়ার সময় রিকশায় দুজনের ননস্টপ বকবক, ওদের দিকে কেউ তাকালেই মিতুর ভেংচি কেটে মানুষজনকে অবাক করে দেওয়া, দৌড়িয়ে রাস্তা পার হওয়া কত কিছু মনে পড়ে গেল। মিতুর কথা শুনে বাস্তবে ফিরে এল তনু " ঐ মুভিতে যখন গীত বুঝতে পারলো যে জীবনটা তার মত করে চলে না। জীবনটা অনেক বাস্তব। তখন গীত থেমে গি্যেছিল জানিস?? আমিও মনে হয় থেমে গেছি। অনেক চেষ্টা করেছি সব ভুলে যেতে, কিন্তু পারিনি। নিজেকে কেনো জানি অনেক বোকা আর ছোটো মনে হত। তুই তো জানিস না, সেকেন্ড ইয়ারে একটা ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছিল।ও আমার অনেক ভালো বন্ধুও ছিল। আমি অনেকটা অসহায় অবস্হায় ছিলাম। ওকে ফেরাতে পারিনি। আমারও তো একটা সাপোর্ট দরকার ছিল। কিন্তু আমি যত ওর প্রতি ডিভোটেড হতে চেয়েছি ততই যেন ও আমাকে আরো বেশি সন্দেহ করতে শুরু করল। ও ভাবত আমি এখনও সায়েমকে ভুলতে পারিনি। ব্যস, সম্পর্কটা আর টিকলো না। সন্দেহ খুব খারাপ জিনিস। সব নষ্ট করে দেয়।" চোখের পানি আটকাতে পারেনা মিতু। রাস্তা দিয়ে গাড়ি গুলো যাওয়ার সময় দেখলো দুইজনমেয়েকে হাত ধরে কাঁদতে। বড় অদ্ভুত সে দৃশ্য!!
(** মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে। আজকে আমার গল্পের ষোলোতম পর্ব । আজকের তারিখও ষোলোই ডিসেম্বর। আমি নিজেই দেখে অবাক হলাম।ভালো থাকবেন সবাই। **)
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ১৫ "
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ১৪ "
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ১৩ "