somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সিনেমায় প্রাণ খুঁজে পাই

২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্প্যানিশ, জাপানীজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান, ফ্রেঞ্চ অথবা মালায়লাম মুভি এবং সিরিজ দেখা হলেও বাংলা মুভি বা সিরিজ দেখার প্রতি আগ্রহ ক্রমাগত কমে এসেছে আমার। এজন্য একান্তভাবে ব্যক্তি হিসেবে শুধু আমি দায়ী তা হয়তো নয়। আমাদের বাংলা মুভি ইন্ডাস্ট্রি(এপার-ওপার মিলে) আমাদের চিত্ত বিনোদন বা চিন্তার খোরাক হতেও বর্তমানে অনেকখানি ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

তাই অনেক অখাদ্যের মধ্যে বাছাইকৃত কিছু খাদ্যের(বাংলা মুভির রিভিউ) পরিবেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি,

(ক) কাঠবেড়ালিঃ তালিকায় প্রথম পর্যায়ে রাখবো বর্তমানের এই মুভিটিকে। চিলেকোঠা প্রোডাকশন হাউজ এবং হইচই মিলে আমাদের অসাধারণ একটি মুভি উপহার দিয়েছেন। মুভিটির প্লট একটি প্রত্যন্ত গ্রামকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা কেমন এবং সেই সম্পর্কে সুনিপুণ স্ক্রিনপ্লে দেখা যাবে এই মুভিটিতে। মূল চরিত্রে থাকা "হাসু" কে মনে হয়েছে বাংলার সকল প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রোটাগনিস্ট। ক্রাইম-থ্রিলার এবং একইসাথে রোমান্টিক ড্রামা ঘরানার এই মুভিটির স্ক্রিনপ্লে একটু স্লো হলেও মুভিটির শেষ অবধি না দেখা পর্যন্ত বুঝে উঠা বড় মুশকিল হয়ে যাবে। সত্যি বলতে কী নেই এই মুভিতে? নদী, জেলে, হাডুডু খেলা, সবুজ, ভিলেজ-পলিটিক্স, বিদেশের প্রতি ঝোঁক, পাটক্ষেত, জমি বর্গা, অতি সরল ঝাঁকুনির প্রেম, চেয়ারম্যান সাহেব, গ্রামের বাল্যবন্ধুর চেহেরা, বিনোদন সংকট ও পরস্ত্রীগম, ইট ভাটার আগুন আর হাতে সিগারেট যেনো চিত্রায়িত করেছে এমন একটি অসাধারণ কাল্পনিক গ্রাম কে। জমি চাষ অথবা গৃহপালিত পশু পালন থেকে শুরু করে গ্রামের সাদা মনের মানুষও খুঁজে পাওয়া যায় এই মুভিটিতে।

মোটকথা বাংলাদেশের একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামগুলো যেমন হয় ঠিক তেমন করেই এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। তাই একবার দেখে নেবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

(খ) বন্য প্রেমের গল্প ২ঃ এটি মূলত একটি বাংলা সিরিজ। অসাধারণ এই বাংলা সিরিজটির প্লট নির্মিত হয়েছে একটি কাল্পনিক মানসিক হাসপাতালে। এই গল্পের কিছু স্ক্রিনপ্লে ঝাঁঝালো হলেও, মানসিক সমস্যা যে একটি বড় সমস্যা সেটিকে সুন্দরভাবে টেনে তুলে আনা হয়েছে।

সাইকো-থ্রিলার ঘরানার এই সিরিজটি লোমহর্ষক কিছু দৃশ্যের অবতারণা করবে এবং সামনে কী অপেক্ষা করছে তা দেখার জন্য দর্শককে চাপ প্রয়োগ করবে। প্রতিটা মূহুর্তে আপনাকে একরকম ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে এটা ভেবে যে, এই মানসিক রুগীদের সাথে বসবাস কত খতরনাক হতে পারে। অবশ্য এই সিকুয়েন্সে দেখা মিলবে একজন আদর্শবান ডাক্তারের। কিন্তু শেষ অবধি তিনিও কি সত্যিকার অর্থে আদর্শবান ডাক্তার?

অন্যদিকে যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ পেয়েছে গ্রাফিক এবং ভয়ংকর চিত্র। একজন নার্স কীভাবে একজন ডাক্তারের দ্বারা শোষণের শিকার হচ্ছে সেটা নিঁখুত ভাবে তুলে আনা হয়েছে।

(গ) সাঁঝবাতিঃ দেব এবং সৌমিত্র চাটার্জীর কম্বিনেশনের ড্রামা ঘরানার এই মুভিটির অপেক্ষায় ছিলেন বহু দর্শক। তাদের মধ্যে আমিও একজন। যে মুভির ট্রেইলার দেখেই মুগ্ধতা চলে এসেছিলো।

সিক্স প্যাক কমার্শিয়াল মুভির নায়ক দেব নিজেকে পুরোপুরি ভেঙ্গেছেন। নিজেকে দেখিয়েছেন সাধারণ এক গৃহ পরিচারকের চরিত্রে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমি দেবের অভিনয়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তবে তিনি যে চেষ্টা চালিয়েছেন সেটাও কোনো অংশে আমার কাছে কম পাওনা ছিলো না। এমন দেবকে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন ধরে। যিনি কিনা সাধারণদের কথা বলবেন।

অন্যদিকে পুরো সিনেমার সকল চরিত্রকে ছাপিয়ে গেছে পাওলি দাম এর অভিনয়। ভয়ানক সুন্দর অভিনয় করেছেন তিনি। লিলি চক্রবর্তী এমনকি সৌমিত্র চাটার্জী কে ছাপিয়ে গেছে তার অভিনয় ভঙ্গিমা। বিশেষ করে একজন গৃহ পরিচারিকার যেমন শব্দ চয়ন হয় তিনি যেনো হুবহু তাই করেছেন। এই বয়সেও তিনি যে একজন কিশোরীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এত সুন্দরভাবে তা যেনো মানতে বাধ্য হবেন।

মুভিটির প্লট নির্মিত হয়েছে দুটি বিষয় মাথায় রেখে,
১. ব্রেইন-ড্রেইন
২. বার্ধক্য

আমার মন ছুঁয়েছে বার্ধক্যজনিত কারণে দুই বৃদ্ধ মানুষের কথা, তাদের দুঃখ-কষ্ট। মুভির শেষপ্রান্তে একসময় চোখে জল চলে এসেছিলো। সৌমিত্র সাহেব যখন বলছিলেন, "এটা আমাদের-ই তো ইচ্ছে ছিলো"। এই অস্পৃশ্য স্বীকারোক্তি মন না ছুঁয়ে পারে না। আমার চোখের সামনে এমন অনেক বৃদ্ধকে দেখি প্রতিদিন, একা, বড্ড নিঃসঙ্গ। নিজেকে সেই ফ্রেমে দেখলে বুঝবেন আর হয়তো বলবেন, "জীবন তুমি আদতেই একটা ভোগান্তি হতে চলেছো"।

আমার প্রত্যাশা এই যে, বার্ধ্যকেও কেউ রান্না করে হয়তো খাওয়াবেন আমাকে বা অন্তত খেয়াল রাখবেন।

ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:১৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×