মুভিঃ Colour Photo
ব্যক্তিগত রেটিং ০৯/১০
তেলেগু মুভির প্রতি আমার আগ্রহ দীর্ঘ সময়ের। আধুনিক-ক্লাসিক মুভি তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র। তার উপর রোমান্টিক-ড্রামা ঘরানার মুভিগুলোতে এত নাটকীয়তা থাকে যে শেষমেশ স্ক্রিনে চোখ রাখতে বিরুক্ত লাগে। কিন্তু সেই বিশ্বাস কে ভেঙ্গে নতুন কিছু উপহার দেবার চেষ্টা করেছেন পরিচালক সন্দীপ রাজ। এটা তার প্রথম সিনেমা, এবং প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত।
একটু কষ্ট করে ভাবুন তো, একজন অতি কালো বর্ণের বা শ্যামবর্ণের কোন হ্যাংলা পাতলা ছেলের সাথে সুন্দরী যে কোন রমণীর সম্পর্ক এখনো অবধি ভারতীয় সমাজে ট্যাবু নয় কি? তার উপর সবাই তো আবার মাহেশ বাবু হয়ে জন্মায় না, বা প্রভাস হয়ে। প্রয়োজনীয় উচ্চতা, মিল্কশেক-প্রোটিন দ্বারা ব্যায়ামে তৈরি সিক্স প্যাক এবং গায়ের রঙ যখন সম্পর্কের মানদন্ড হয়ে পড়ে তখন সে সমাজে একজন সাধারণ মানুষ তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে সক্ষম হবে না সেটাই স্বাভাবিক।
তার উপর ব্রিটিশদের উপনেশবাদের চর্চা এখনো যেখানে তীব্র তখন পুরো ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে পড়ে। কি যেন বলে, “আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী”। যদি তাই হয় তাহলে ভারতীয় সমাজের মোট জনসংখ্যার ৮০% শতাংশ মানুষ প্রেম তো দূর, বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আমরা যখন নিজের অজান্তেই ওমন কোন জুটিকে বলি, “গুলাব জামুন (রসগোল্লা)” তখন কতটা আঘাত হানতে পারে একজনের হৃদয়কে। খুব সম্ভবত, এজন্যই ওরা অসামাজিক। মানুষকে এড়িয়ে চলা, বা নিজের মত করে চলাই ওদের স্বভাব হয়ে দাঁড়ায়।
আরো ভয়াবহ যে বিষয়টি হচ্ছে, এই মানুষদের ছোট থেকেই আলাদা থাকতে হয় বা একরকম মার্জেন্যালাইজ করে দেওয়া হয়। ওদের বন্ধুরাও আলাদা-আলাদা হয়। পৃথিবীকে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে শুরু করে। আর একসময় বিশ্বাস করে নেয়, এটাই তাদের পৃথিবী। কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। বন্ধু জুটে যায় তারও কিন্তু মনের অব্যক্ত অনুভূতি অব্যক্ত-ই থেকে যায় হয়তো।
পুরো গল্প জুড়ে কালা-মানিকের সাফল্য আসলেও মূলত সে দৌড় খুব বেশিদূর খুব সম্ভবত নয়। ওদেরও বাবা-মা আছেন। আর তারাও তাদের নিজ সন্তানকে নিয়ে কম স্বপ্ন দ্যাখেন না। আর যে একতার কথা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বলা হয় সেটা যেন লোকাল ট্রেনের মত। সেদিন একজন জিজ্ঞেস করছিলো, “ভাই একতার খবর কি?”
প্রত্যুত্তরে আমি বলেছিলাম, “একতার কোন খবর নাই ভাই।“
কথাটি বলার পর কিছুটা টের পেয়েছিলাম যে, ব্যক্তিজীবনে এর প্রভাব কোন অংশে কম নয়। “কালার ফটো” মুভিটিতে কলেজের সেই একতার কথা বলার চেষ্টা করবে গল্পের প্রোটাগনিষ্ট সুহাশের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু শেষ অবধি সেই একতা টিকবে তো? না কি নাম মাত্র নিছক একতা?
সুহাশের শব্দ যেন লাখো ভারতীয়দের শব্দ বলে মনে হয়েছে। উপনেশবাদে হারবো না বলেও সুহাশের বুকে চাপা আর্তনাদ এক অন্যরকম ভীতি জন্মায় মনে। তবে কি ঠুনকো ছাউনির ঘর, কিছু গৃহপালিত পশু, রোজ-রোজকার গরুর দুধ সাইকেলে বেয়ে নিয়ে যাওয়া, সেসবের যত্ন নেওয়া, নিয়মিত কলেজ করা ইত্যাদির মধ্যে কি সত্যিকার জীবন তবুও ঢাকা পড়লো? সব তো সহজ-সরল ছিলো, তবে কেন এত বিড়ম্বনা!
কাউকে ভালবাসা আর যাইহোক পাপ হতে পারে না, অন্যায় হতে পারে না। ঠিক এমন এক চরিত্র নিয়ে এই ধরণের প্লটে নির্মিত মুভি হচ্ছে “কালার ফটো”। সব তো শব্দে ব্যক্ত করা যায় না, তাই একবার দেখে নিতেই পারেন। সুহাশদের(জয়কৃষ্ণাদের) জীবন ঠিক ক্যামন?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৬