somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রিডম অব স্পিচ ও কৌশলগত রাজনীতি

২২ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজনীতি বাঙালী সমাজের রন্ধে রন্ধে। শুধুমাত্র ঐ পার্লামেন্টে কিছু সাংসদ রাজনীতি চর্চা করেন এমন টিপিক্যাল ভাবনার মানুষদের বুঝানো অসম্ভব যে, রাজনীতি সবখানে চলে, চলছে। এবং সেই গল্পটির মাধ্যমে যদি বাক-স্বাধীনতার কথা বলা হয় তাহলে মরার উপর খাড়ার ঘা। বাক-স্বাধীনতা কি? না বুঝে, না জেনে যখন কোনো হলরুমে কেউ “আগুন... আগুন...” বলে চিৎকার করে তখন ভীড়ে পা পিষ্ট হয়ে মরবেন অনেকে। এখন আমি যদি এই ঘটনাকে জাস্টিফাই করি উমুক ব্যক্তির এমন বেহুদা চিল্লাচিল্লি হলো তাঁর বাক-স্বাধীনতা। তাহলে অনুগ্রহ করে আমায় মাফ করবেন। ওমন পরিস্থিতিতে পড়বার যেমন ইচ্ছে নেই ঠিক তেমনি তেমন বাক-স্বাধীনতা চর্চার আমার কোনো খায়েশ নেই। যাদের আছে তারা দেদারছে সেটা করতে পারেন। চটে যাবেন? যদি বলি বাক-স্বাধীনতার অর্থ হ'ল স্বৈরশাসন এবং বাক-স্বাধীনতা প্রায়শই অরাজকতার কারণ হয়। কিন্তু সক্রেটিস যেখানে ছাড় পেলো না, একটা জুডিসিয়্যাল বা বিচারব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে তার মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়েছিলো সেটাও ভুলে গেলে চলবে না। উনার উপর অভিযোগ ছিলো, “সক্রেটিস যুককদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন”। আর বর্তমান বাংলাদেশে রুই-কাতলার আক্রমণে পুটি মাছ ভাজা চলছে মানে হিস্ট্রি রিপিট করছে। যদিও সক্রেটিস এখানে বোধ করি কেউ নেই, বাকীদের অবস্থা তেমন ঠেকে। গলা লম্বা করে কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতা নেই। এখন আমি যদি বিপরীত অবস্থান নেই মানে সরকারের পক্ষ নেই তাহলে আমাকে হিপোক্রেট ভাবার আগে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আপনাকে চিন্তা অবশ্যই করতে হবে।

● প্রথমত আমাদের বুঝতে হবে যে, বাক-স্বাধীনতা কখনো বিভ্রান্তিমূলক বা অরাজকতা বা কাউকে মিস-লিডিং করার জন্য নয়। যদিও সেটাই বর্তমান মার্কেটে চলছে বলে মনে হয়। দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তি বা কোনো পার্টিকুলার প্রতিষ্ঠান বা কমিউনিটি এমনকি সরকার বা প্রশাসন কে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু অর্গানাইজড ওয়েতে তাদের আক্রমন এবং মিথ্যে তথ্য দেওয়া বাক-স্বাধীনতায় গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না। বা কারোর মানহানি।

● আবার ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দুটো আলাদা জিনিস। একজন ব্যক্তি সোশ্যাল মাধ্যমে এসে অনেক কিছু বলতে পারেন, যেটা তিনি বিশ্বাস করেন। এখন জোর যার মুল্লুক তার থিউরি দিয়ে যদি সেটাকে সোসাইটির কোনো অর্গানাইজড প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে এগিয়ে আসে সেটাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ব্যক্তি যেমন তার শব্দের জন্য, লেখার জন্য বা তার অনুভূতি প্রকাশ করার স্বাধীনতা পাবে তেমনি ঐ ব্যক্তি বাক-স্বাধীনতার নাম করে বিভ্রান্তি বা মিথ্যা তথ্য ছড়ালে আমি তাকে হিপোক্রেট বলবো না তো কি বলবো?

● বর্তমানে ট্রেন্ডিং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একটা ভালো উদাহরণ হঠাৎ ফেসবুকের একটা পোস্টে পেয়ে গেলাম,

আপনি যদি ১০০টা কালো পিঁপড়া আর ১০০টা লাল পিঁপড়া একত্র করে একটা কাঁচের পাত্রে রেখে দেন, তাহলে কিছুই ঘটবে না। কিন্তু যদি পাত্রটা নিয়ে সজোরে একটা ঝাঁকি দিয়ে আবার টেবিলের উপর রাখেন, দেখতে পাবেন এক প্রজাতির পিঁপড়া অন্য প্রজাতির পিঁপড়াকে হত্যায় লেগে পড়েছে।

লাল পিঁপড়াগুলো তখন ধারণা করে, কালো পিঁপড়াই তাদের শত্রু। অন্যদিকে কালো পিঁপড়াগুলো ধারণা করে, লাল পিঁপড়াই তাদের শত্রু।

মূলত শত্রু হলো সেই লোকটা, যে পাত্রটা ঝাঁকি দিয়েছিল। একই ঘটনা মুসলিমদের সাথেও ঘটে। আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার আগে আমাদের উচিত নিজেদের প্রশ্ন করা, “পাত্রটা কে ঝাঁকি দিয়েছিল?”
(সংগৃহিত)

● বাবরি মসজিদ নিয়ে কি হয়েছে সেটা নিয়ে বাংলাদেশীদের মাথাব্যাথা থাকা উচিত কি? অবশ্য যদি মনে করেন যে, প্রতিবেশি হিসেবে থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে অন্যায় হয়ে থাকলে সেটার প্রভাব বা আঁচ প্রতিবেশির উপর পড়তে বাধ্য। এবং সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? আবার তার মানে এই নয়, সেই আগুন পুরো জাতিকে জ্বালিয়ে দিবে। এভাবে জাস্টিফাই করা যায় না। কিন্তু বাক-স্বাধীনতা হবে, “মন্দির এহি বানেগা!”। এখন বিরুদ্ধে বললে? বাংলাদেশে থাকো, আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে তোমার এত মাথাব্যাথা কেন?

● অসংখ্য ক্লিপিংসে যখন পাশের প্রতিবেশি বলছেন, বাংলাদেশের নাগরিক তাদের দেশে অন্যায় ভাবে লুকিয়ে আছেন। এবং সে দেশের যথেষ্ট ক্ষতি করতেও সামর্থ্য রাখছে(ভিডিও ক্লিপিংসগুলোর প্রমাণ চাইলে দেওয়া যাবে)।

“... জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০ বাংলাদেশি নাগরিক যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়, গড়ে একজন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ থেকে সেই পরিমাণ রেমিট্যান্স নিয়ে যায়।”
-সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

এখন আপনার এই বাক-স্বাধীনতা আমি মোটেই তুচ্ছ জ্ঞান করছি না। কিন্তু ভেবে বলছেন তো? যদি ভেবে না বলেন তাহলে প্রোভোক কে করছে? দাঙ্গার একটা কারণ থাকে তো। না কি সকালবেলা উঠে কারো মনে হলো যে, “আজ আমার মুড খুব খারাপ তাই হালকা একটু দাঙ্গা করা উচিত”।

● ইসলাম মানেই জঙ্গি। ইসলাম মানেই চার বিয়ে। ইসলাম মানে অশান্তি এবং হযরত আয়েশা(র)। ইসলাম মানেই যৌনতা। এই সব Narratives ক্রমাগত মুসলিমদের বর্তমান অস্তিত্ব সংকটে ফেলছে। ফান্ডামেন্টালিস্ট যারাই আছেন, তীক্ষ্ম জ্ঞানের বক্তারা যারা আছেন তাঁরাও তাঁদের অবস্থান নিয়ে এখন সঙ্কায় আছেন এবং এ ব্যাপারেও সন্দেহ রাখাটা ন্যায় না কি অন্যায় হবে সেটা ভাববার অবকাশ নেই মনে হয়। প্রশ্ন হলো, ঐ সব Narratives যদি বাক-স্বাধীনতা হয় তাহলে আমি দুঃখিত সেটা কখনোই শান্তির কথা বলছে না। এবং অশান্তির চাপে কিছুদিন যদিওবা প্রগতিশীল মানুষজন পুরো জাতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে পারতেও পারে কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য সেটা সম্ভব নয়।

● সর্বশেষ ঘটনা, আমাদের বাংলাদেশের গর্ব ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি চেয়েছিলেন। আমার তো তাই মনে হয়েছে। তাই তিনি যা করেছেন তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এমন সংজ্ঞায় এদেশের কোনো প্রগতিশীল মানুষ বা যে বুদ্ধিজীবীদের গালি না দিলে সকালটা হয় না তাঁরা লজ্জিত। একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কোনো যদু, মদু ,কদু নয়, বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার এভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা জাতি হিসবে এজন্য লজ্জিত। এখন দুই গল্পকে ভাগাভাগি করলে, তিনি(সাকিব আল হাসান) তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতা ফলিয়েছেন এবং অন্য আরেক জন সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে এজন্য তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এখন এই হত্যার বাক-স্বাধীনতা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

ঠিক তেমনি করে, একটি রাষ্ট্র যখন বিশেষ বা সোজা করে বললে মুসলিম কমিউনিটিকে আক্রমণ করে নবী(সাঃ) এর ব্যঙ্গ চিত্র আঁকাচ্ছে। শুধু তাই নয় সেটা দেখার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। আর আমি হ্যাশট্যাগ দিলে বলা হবে, “তুমি তো বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নও”। কেউ জঙ্গি তার শাস্তি দেওয়া অবশ্যই উচিত। এভাবে মানুষ খুন করা উচিত হয়নি। এবং এরুপ আচরণ আমার জানা মতে ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু দিল্লীতে হাঙ্গামা নিয়ে বাংলাদেশ চুপ আছে, প্রতিবেশী তাই ভালোবাসে। গায়ে জোরও নেই খুব একটা। কিন্তু বাক-স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতায় সূক্ষ্ম রাজনীতি ঢুকে নেই তো?

ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×