একবার ভাবুন তো! আমাদের জন্ম-সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে কি নিখুঁত তথ্য দেওয়া থাকে? নামের শেষে প্রমাণিক কে প্রাং, হাসান কে হোসেন, ইসলাম কে বিশ্রাম থেকে শুরু করে বানান ত্রুটি তো রয়েছেই। আর যদি জন্ম তারিখের কথা বলি তাহলে হাততালি পাবো বলে আশা রাখছি। এখন এসব পাল্টানোর জন্য সরকারী দপ্তরে আমরা যারা সাধারণ মানুষ দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত তাদের কষ্ট বুঝবার সামর্থ্য খুব কম মানুষের আছে। আর এই প্রক্রিয়া কতটুকু লম্বা সেটা ভুক্তভোগীরাই ভালো জানেন। প্রসঙ্গত, সামনে বিসিএস এবং আমার এই কথাগুলোতে দ্বিমত পোষণকারী পাওয়া যাবে না। যদি যায়, তাহলে ধরেই নেওয়া যায়, তিনি মিথ্যা বলছেন অথবা অস্বীকার করছেন।
কাগজ ছাড়া কোনকিছু প্রমাণিত হয় না। হোক সেটা জমি দখলের ক্ষেত্রে বা নিজের পরিচয় ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে। আপনাদের বোধকরি মনে আছে, মার্কিন নির্বাচনে একজন মৃত ব্যক্তি ভোট দেওয়ার কথাও জোরশোরে শোনা গিয়েছিলো। হুলস্থুল কান্ড বেঁধে গেছিলো। এখন যদি কাগজে কাউকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয় তাহলে তার ব্যক্তি অস্তিত্ব নিয়ে লড়াই করার অবস্থা দাঁড় হয়। আর এই হিম্মত খুব কম মানুষের আছে যারা সিস্টেমের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়তে পারেন। বাদী ও বিবাদীর আশীর্বাদে আইনজীবিদের পকেট ভারি হতেই থাকে কিন্তু বছরের পর বছর সেই মামলার ঘানি টানতে গিয়ে বরবাদ হয়ে যেতে পারে একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের সমাজের আজ অবধি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই এবং বলে রাখা ভালো যে, ঠিক কবে এই বিষয়ে আমাদের সুরাহা মিলবে সেটাও ঠিক করে বলা যায় না।
বিদেশে টাকা পাচার করা বাংলাদেশের খবরের কাগজে হট টপিক/টক অব দ্য টাউন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিদেশে টাকা নিয়ে যেতে হলে যে কাগজ দরকার সে সবের আমদানী কে করে থাকেন? কারা এর জন্য দায়ী? সরষের মধ্যে ভূত দেখা দিয়ে এই দূর্নীতি ঘোমটা খুলতেই লজ্জায় আবার সেটা নামিয়ে নেন। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার।
এতক্ষণে বুঝে যাবার কথা আমি আসলে কী নিয়ে কথা বলছি এবং কী নিয়ে আরো দুই একটা লাইন লিখতে চাই। যাইহোক, কে যেন বলেছিলো,
একটি দেশের নাগরিক দুই রকমের হয়,
১. এক – যিনি চাইলেই অধিকার খাটাতে পারেন।
২. দুই – যিনি চাইলেও কোনরুপ অধিকার খাটাতে পারেন না।
কিন্তু কাগজ যদি আমাদের মৃত ঘোষণা করে দেয়! তখন? লোকসমাজে মুখ দেখানোর মত অবস্থা আমাদের থাকে না। মানুষ মনে করতে বাধ্য হয়, সে এক জীবন্ত লাশ দেখছে। এমনকি এই নিয়ে দুই আইনজীবির সাথে ঝগড়া হয়, উপস্থিত থাকেন কাগজে মৃত এবং মানুষের কাছে এক জীবন্ত লাশ। তিনি বারবার বলছেন, “আমি বেঁচে আছি, দেখুন! আমি বেঁচে আছি”।
সংক্ষিপ্ত সংসারের ঘানি টানতে টানতে যে ব্যক্তি লোনের জন্য ব্যাংকে যান এবং জানতে পারেন যে, তিনি আর বেঁচে নেই। তারচেয়েও বড় কথা, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাদের জন্য এই কাগজ যত্ন সহকারে রাখা একরকমের বিলাসীতা নয় কি! অন্তত এটা মানুন যে, এসব বেশ কষ্টসাধ্য!
এমনি কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে হিন্দি সিনেমা “Kaagaz”- এ। ২০২১ সালের ভারতীয় বায়োগ্রাফিক্যাল চলচ্চিত্র যা সতীশ কৌশিক রচিত ও পরিচালনা করেছেন। এবং সালমান খান ফিল্মস ও দ্য সতীশ কৌশিক ইন্টারটেইনমেন্ট প্রোডাকশনের ব্যানারে সালমান খান ও নিশান্ত কৌশিক প্রযোজনা করেছেন। ছবিটিতে প্রধান বিরোধী চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমর উপাধ্যায়ের সাথে পঙ্কজ ত্রিপাঠি এবং মোনাল গজ্জর।
প্রতিবেশি দেশে এখন এই কাগজ নিয়েই চলছে দহরম মহরম। NRC ও CAA নিয়ে দুই ধাপ এগিয়ে গিয়ে লিখলে পাঠক সমাজ বিরুক্ত হতে পারেন। আমার মত বোকারাও আজকাল বেশ চতুর হওয়া শিখে গেছে। কিছু লিখলেই ট্যাগিং করার অভ্যাস আমাদের জন্ম থেকেই আছে বলে আমি মানি। তাই আর কথা বাড়ালাম না, তবে অন্তত একবার দেখে নেওয়া-ই যায় এই ছবিটি।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫১