somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক: “সাবলটার্ন বা প্রান্তিক কথা বলতে পারে?”

২৩ শে জুন, ২০২২ ভোর ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




উত্তর-ঔপনিবেশিক নারীবাদীদের মধ্যে আপনি নিশ্চয় “গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক” -এর নাম শুনেছেন। তিনি একই সাথে পদ্মভূষণ বিজয়ী এবং ১১টি সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রাপ্ত। ইংরেজি সাহিত্যের দ্বারা প্রভাবিত কিংবা পশ্চিমা সত্তা দ্বারা প্রভাবিত নারী তিনি নন। না, তাকে এই সংজ্ঞায় ফেলা উচিত হবে।

বরং ‘নারীবাদ মুভমেন্ট’র ক্ষেত্রে নিজেদের পক্ষে কথা বলার জন্য একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। হ্যাঁ, উপহাস এড়াতে “Can the Subaltern Speak?” প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন। যা বর্তমানে একাডেমিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হিসেবে সিলেবাসে যুক্ত হয়েছে।


গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক - একজন সংস্কার বিরোধী নারী

শুধু তাই নয় তিনি ‘নারীবাদ মুভমেন্ট’ -কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি নিজের পরিচয় দেন, “Practical Marxist-Feminist-Deconstructionist” হিসেবে। তিনি পশ্চিমা কনসেপ্টে না দাঁড়িয়ে বরং অ-পশ্চিমা বা ভারতীয় নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই “সাবল্টার্ন” বা প্রান্তিক নারীদের তিনি টেনে এনেছেন তাঁর সাহিত্য তত্ত্বের জগতে।

তিনি শ্বেতাঙ্গদের দেওয়া নারীবাদ কে গ্রহণ না করে একটা মার্জিন টেনে ভারতীয় নারীদের কথা তুলে ধরেছেন। যেখানে আছে ঔপনিবেশিক ধারণা, সংস্কৃতি, পিতৃতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ভাবে হীনম্যনতার শিকার এবং নিপীড়িত নারীরা।

আপনি যদি “গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক” -কে নিয়ে একটু গুগল করেন তাহলে খুঁজে পাবেন তাঁর অর্থনৈতিক মন্দা সম্পর্কে। পড়াশোনার জন্য রীতিমত তাঁকে স্টুডেন্ট লাইফে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি অপর্যাপ্ত অর্থের জন্য ইংরেজি বিভাগ ছাড়তে বাধ্য হোন তিনি। এরপর ফরাসী বা জার্মান ভাষা মত নতুন বিভাগে ভর্তি হয়ে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন।

উল্লেখ্য, তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক তাত্ত্বিক জাক দেরিদার “De la grammatologie” ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। আমার মতে, স্পিভাকের একজন কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পেছনে এটাই ছিলো মূল কারণ।

২০০২ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস্ এ প্রকাশিত একটি রচনায় তাকে ব্যাঙ্গও করা হয়েছিল। ইংরেজি অধ্যাপক ও তাত্ত্বিকদের দ্বারা বেশ ঝামেলায় পড়েছিলেন। বিশেষ করে তার স্টেরিওটাইপ সত্তার জন্য। শুধুমাত্র তিনি তাঁর সময়সীমা পূরণ করার জন্য এক সন্ধ্যার মধ্যে লিখেছিলেন, “ক্যান দ্য সাবল্টার্ন স্পিক?” এর মতো একটি জটিল রচনা। ফলে, একজন গড়পড়তা নারীবাদী বা তাত্ত্বিকের জন্য তাকে বুঝে ওঠা নিশ্চয় সহজ হবে না।

তিনি শুধুমাত্র একজন নারীবাদী, মার্কসবাদী অথবা, একজন লেখক হতে চান নি। এমনকি তিনি নিজের মতাদর্শের মধ্যে সীমাবদ্ধও থাকতে চান নি। বরং সেগুলোকেও আরো ব্যবচ্ছেদ করা যায় কিনা সেটা নিয়েও ভেবেছেন। আর এখানেই অন্যদের তুলনায় স্পিভাক আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন। হয়েছেন প্রান্তিক, নিপীড়িত নারীদের জন্য শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব।


স্পিভাকের উল্টোপথ এবং জনপ্রিয়তা

তিনি একরকম সুচারুভাবে বুদ্ধিমানদের বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন যে, তাদের মন পরিবর্তন করা এবং বিকাশে এমন কার্পণ্য দেখানো উচিত নয়। অবশ্য, স্পিভাক সবসময় এটাই করে গেছেন বলে আমার মনে হয়। কারণ, “নারীবাদ মুভমেন্ট” -এর বিখ্যাত বা প্রচলিত যে ধারণা সেটা হচ্ছে, “সমজাতীয় আন্দোলন” । কিন্তু স্পিভাক বলছেন যে, “নারীবাদ একটি সমজাতীয় আন্দোলন হওয়া উচিত নয় এবং পুরো ব্যাপারটা কে ব্যবচ্ছেদ করাতে কার্পন্য দেখানোও ঠিক হবে না” ।

তাকে এত সেরিব্রাল এবং একচেটিয়া বিবেচনা করা সত্ত্বেও, পশ্চিমা আধিপত্য, দীর্ঘ সময়ের ট্রাডিশন, স্থূলকার এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির বিশ্বে, তার মতো একজন মহিলার লেন্স দিয়ে বিশ্বকে দেখার প্রয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অন্তত মূলধারার জনসাধারণের বক্তব্যের ক্ষেত্রে।


“একজন মহিলা কি লিখতে পারেন (Can A Woman Write)?”

যদি আজ কেউ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক সম্পর্কে লিখতে চান তাহলে শিরোনাম অনেকটা এরকম হবে বলে আমার মনে হয়। কারণ তাঁর জটিল লেখার জন্য তাঁকে উপহাস করা হয়। আবার কেউ কেউ তাঁর ভাষা বা শব্দ চয়ন কে চমৎকার বলে থাকেন।

এখন মনে হতে পারে, আমরা যদি প্রান্তিক মানুষের কথা বলি এবং তাদের গল্প বলার জন্য তাদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করি, তবে আমরা যে ভাষা ব্যবহার করি তা অবশ্যই সহজলভ্য এবং সহজ হওয়া উচিত, তাই না? ভুল।

স্পিভাক কয়েক দশক আগে পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারে নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা দেওয়ার কাজটি গ্রহণ করেন। তবে তিনি তাদের অবস্থান আরও ভালভাবে বুঝার চেষ্টাও করেছেন। তাছাড়া, আপনি যদি ফুকো, দেরিদা বা দস্তয়েভস্কির অথবা, যে কোন পুরুষ সাহিত্যিক/তাত্ত্বিকের লেখা পড়েন, আপনি বুঝতে পারবেন যে, তারা সমানভাবে নির্মম (শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে) ।

তাহলে কেন স্পিভাকের কাজকে বোঝার মতো যথেষ্ট জটিল বলে মনে করা হয়? উত্তর আছে? না কি সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যে, মহিলারা লিখতে পারেন না। আশ্চর্যজনকভাবে, পুরুষ বুদ্ধিজীবীরা এই পৃথিবীতে তাদের বাগ্মী ও বাকপটু লেখার জন্য প্রশংসিত। তাহলে স্পিভাক কে নিয়ে সমস্যা কোথায়?


“Can Subaltern Speak?”

“সাবলটার্ন বা প্রান্তিক কথা বলতে পারে?” এই লেখায় স্পিভাকের বিশেষ যে বিষয়টি উল্লেখ না করলে আজকের এই লেখা হয়তো বা পুরোটাই অপূর্ণ থেকে যাবে সেটা হচ্ছে, “White men saving brown women from brown men” – হাস্যকর নয় কি! স্পিভাকের বিস্ময় যে, কীভাবে পশ্চিমারা ভারতীয় সমাজের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন অথচ ভারতীয়দের সাহায্য ছাড়াই!

“ক্যান সাবল্টার্ন স্পিক?” – এখানে অ্যামেরিকা থেকে শুরু করে ফুকো, ডেলিউজ এবং তাঁদের কাজের সাথে সম্পর্কিত পশ্চিমা লেখকদের সাথে একই বিন্যাসে কাজ করে গেছে। কিন্তু এই লেখা শুরু হয় একটি স্টেটমেন্ট দিয়ে, একজন পশ্চিমা একাডেমিক যা লিখছেন তা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের খাতিরে, প্রান্তিকদের জন্য নয়।

আরো ভালো করে বলা যায়, পশ্চিমারা যেভাবে তাদের প্রোডাক্ট আমাদের খাওয়ায় ঠিক তেমনি তাদের নারীবাদ বা এই চিন্তাও আমাদেরকে খাওয়াচ্ছে। তারা সতীদাহ প্রথা (হিন্দু ধর্মে প্রচলিত ছিলো) কি করে বুঝবেন? বা বুঝলেও ঠিক কতটা! অথবা, সতী হওয়ার কনসেপ্ট এত ভালো করে ব্যাখ্যা করছেন কীভাবে!

যাইহোক, আজ এই পর্যন্তই। তবে “ভারতীয় নারী” লেখায় বাংলাদেশী নারীরা আমার ওপর ক্ষেপে যাবেন না। এখানে আমাদের স্বার্থ নিয়েও কথা বলা হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝতে ব্যর্থ হই; তাহলে ক্ষতিটাও আমাদের হবে। পাশাপাশি আমার হোমওয়ার্কে ঘাটতি অনেক আছে। তাই লেখায় ভুলক্রুটি থেকে থাকলে মাফ করবেন।

* আপনি চাইলে আমার ওইয়েবসাইট থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন: https://www.backspace-journal.com
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২২ ভোর ৫:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×