somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

‘সংখ্যাগুরুর’ গণতন্ত্রের আড়ালে কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর সাইলেন্ট

০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এদেশে ৩০% থেকে সর্বোচ্চ ৪০% ভোট নির্ধারণ করে আমাদের ‘শাসক’ কে হবেন। নির্বাচনের এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (First-Past-The-Post, সংক্ষেপে FPTP)’। সারাদেশে মোট ৩০০টি আসন সংখ্যা রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি আসনে একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর সবচেয়ে বেশি ভোট-ই নির্ধারণ করে তার জয় বা পরাজয়। এখানে কে কত ভোট পেলো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। বিষয় হলো, আপনি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সুতরাং আপনি জয়ী।

এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গত অন্তত ৩টি নির্বাচন কে সহী নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই ৩টি নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সফল ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিক থেকে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুফল-ই তূলনামূলক বেশি দেখা গেছে। একাধিক আন্তর্জাতিক মানদন্ডে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে। দ্বিতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর ২০০১ সালে। এবং তৃতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ৩টি নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭.১৩% ভোটার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। ২০০১ সালে ছিলো ৭৪.৯৭% এবং ১৯৯১ সালে ছিলো মাত্র ৫৫.৪৫% ভোটার উপস্থিতি। আবার ২০০৪ সালে নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্ধারণ করা হয়। এতে করে সারাদেশে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫০টিতে।

এই সংরক্ষিত মহিলা আসন প্রদান করা হয় নির্দিষ্ট দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হিসেবে, তবে এখানেও মোট ভোটের শতাংশ দেখা হয় না। নির্দিষ্ট দলের মোট আসনের অনুপাত অনুযায়ী নারী প্রতিনিধি নির্ধারণ করা হয়। যেমন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ২৩০টি আসনের বিপরীতে ৭৬.৬% অনুপাতে ৪৫টি সংরক্ষিত নারী আসন পেয়ে যায়। এত বড় সংখ্যক সিট প্রদানে আওয়ামী লীগের বেপরোয়া স্বভাব স্পষ্ট।

সংসদে গান, নাচ, কবিতা, বিচার, গল্প, আড্ডা, নাটক সবই হয়েছে। রীতিমত সংসদ হয়ে উঠেছিলো একটি থিয়েটার মঞ্চ। আর এটাকেই বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ‘পিআর’ বলছেন মানে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR - Proportional Representation)’। যা মোটেই শুদ্ধ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নয়, অন্তত আমার মতে।

এছাড়াও ঐ তিন নির্বাচনে FPTP আসন-বণ্টন ও ফলাফলের কারণে ১৭% থেকে ৪২% জনগণের ভোটেই পূর্ণ সরকার গঠন সম্ভব হয়েছে; বাকি ৫৮–৮৩% জনগণ সরাসরি কোনো সমর্থন দেয় নাই। সুতরাং ‘A’ দল ও ‘B’ দলের বাইনারির বাইরে অন্তত কোটি সংখ্যক মানুষ নির্বাচনের বাইরে থেকে যায় এই দেশে। প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাল আমলের বিবেচনা আমাদের ভাবায়। কারণ এই ভোট যুক্ত হলে গণতন্ত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

সমস্যা আরো আছে, জনশুমারি ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে। সামান্য NID কার্ডের কিছু তথ্য পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে এখানে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। প্রথমে এই ভুলটা হয় স্থানীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতায়। তারপর ঐ ভুল হয়ে যায় ‘অমর’ এবং ‘সংশোধন অযোগ্য’। জন্ম সনদ থেকে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে আমি নিজেও এক ভুক্তভোগী।

প্রশ্ন হলো, একটি নির্দিষ্ট বড় সংখ্যক বা কোটি সমান জনসংখ্যার কোনো দল কি এই দেশে আছে?

হ্যাঁ, আছে। অন্তত খাতা-কলমে। সংসদে থাকলে শতভাগ না হলেও অন্তত ৯৫%+ ভোটার উপস্থিতি পাওয়া যেত। আবার যারাও বা ভোট দেন তারা নিজের পছন্দমতো প্রার্থী যাচাই করতে সক্ষম হোন না। আমাদেরকে সবসময় একটি বাইনারীর মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে হয়। সকল মহল, সকল মতাদর্শ, সকল দলের, সকল ধর্মের মতামত আমরা কখনোই সংসদে উপস্থিত থাকতে দেখতে পাই না।

গল্পটা ঐ ৩৮টা ভেড়া আর ১২টি ঘোড়ার মধ্যেই সীমিত থেকে যায়। সুতরাং সংখ্যাগুরু ‘ভেড়া’ মিলে আমাদের ‘গণতন্ত্র’ নির্ধারণ করেন, আমাদের ‘শাসক’ নির্ধারণ করেন। এছাড়াও কোনো রাষ্ট্রের সিলেক্টিভ হেয়ারিং তার জন্য ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল আছে অনেকগুলো। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি করেও আজ পর্যন্ত কোনো আসন পান নাই এমন দলও কম নয়। কিছু কিছু দল সময়ের পরিবর্তনে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটি ছোট দল এই দেশে ১ কোটি ভোট পেয়েও একটিও আসন পান নাই এমন উদাহরণও আছে। তারমানে কি দাঁড়ায়? ঐ ১ কোটি ভোটের কোনো দাম নাই? ঐ ১ কোটি মানুষ কি বলতে চাইছিলো আমরা কেউ কি জানি?

উদাহরণস্বরূপ: তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে যথাক্রমে ৭৫, ৫৪ ও ৩৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিটি নির্বাচনে এক কোটির বেশি ভোট পেয়েও শূন্য বা মাত্র ১-২টি আসন পাওয়া দলের সংখ্যা অন্তত ১০ থেকে ২০টি।

আমরা যে সবসময় সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার কথা বলি তা যেন শুধু মুখেই। একটি ছোট দল, যার সমর্থন ১ কোটি+ মানুষ কিন্তু সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নাও থাকতে পারে। আর এভাবেই মানুষ অরাজনৈতিক বা এই ধরণের তথাকথিত গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা মনে করতে পারে, যেহেতু দেশটা নির্দিষ্ট দুটি-তিনটি দলের কাছে বর্গা দেওয়া সেহেতু আমরা এদেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক ছাড়া আর কিছুই নই।

‘পিআর (PR)’ আসলে স্থানীয় সরকার থাকবে না, পরিচিত প্রার্থী থাকবে না, মানুষ দলকে ভোট দিলে দূর্নীতি বাড়বে, দেশে অরাজকতা বাড়বে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক সিস্টেম, সিন্ডিকেট বাড়বে… এই কথাগুলো শুনে মনে হয়, আমরা বর্তমানে বেহেস্তে আছি। এসবের কিছুই হয় নাই গত সময়ে। ‘PR’ আসার পর হঠাৎ করে সব শুরু হয়ে যাবে।

মানে হলো, যত গুলো ভুল ও মিথ্যা ধারণা কোনো সিস্টেম নিয়ে থাকতে পারে তার কিছুই বাদ পড়ছে না। আমিও ব্যক্তিগতভাবে মানি, PR পারফেক্ট নির্বাচন পদ্ধতি নয়। কিন্তু আমার মতে আমাদের হাতে এই একটি পদ্ধতিই আছে যা ভবিষ্যতে এই দেশে কাউকেই আর স্বৈরশাসক হয়ে উঠতে দেবে না।

এখন পুরো পদ্ধতিই ভালো লাগছে না সেক্ষেত্রে সংস্কার করবেন কীভাবে? সংস্কার তখন করা যায় যখন নতুন পদ্ধতির শুধু উপস্থাপন নয় বরং বারবার আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ ক্রুটিমুক্ত যাওয়া যায় বা করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ১ কোটি ভোটার সংখ্যা গণনায় আসুক, তারাও একটি ভয়েস হোক, আমরা সবার কথা শুনতে এত ভয় পাই কেন!

ছবি: VidIQ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:০৩
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×