somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালালা আর নাবিলা,একই ভুবনের দুই বাসিন্দা।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপজাতি অধ্যুষিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে রান্নার জন্য সবজি তুলতে গিয়ে ৬৭ বছর বয়সী নাবিলার "দাদী" নিহত হন।তার দাদী মোমিনা বিবি ঐ সময় কিছু শিশু-কিশোরদের শেখাচ্ছিলেন কিভাবে ঢেঁড়শ তুলতে হয় যেন সেটা দিয়ে তারা ঈদের দিন তাদের পরিবারের সাথে তরকারি করে মজা করে খেতে পারে,সাথে নাবিলা আর তার ভাইও ছিলো।কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হল ঐদিন তাদের জন্য এমন কিছু একটা অপেক্ষা করছিলো যাতে তাদের পরিবারের পুরো জীবনটাই উলটপালট করে দিতে পারে।

মুক্ত রৌদ্রজ্বল আকাশে আকস্মিকভাবে তারা একটি 'মার্কিন ড্রোন বিমানের' আকাশবিদারী গর্জন শোনে যা প্রায়ই সেখানকার গ্রামবাসীরা শুনে থাকেন এবং এর মাঝেই বসবাস করেন। পাইলটবিহীন এই বিমানটি তার ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করলো রেহমানদের (পড়ুন—আব্দুর রাহমানদের) পরিবারের উপর, আর ঠিক এক মুহুর্তেই এই শিশু-কিশোরদের আনন্দময় জীবনটা বদলে গেলো এক বিভীষিকাময় স্বপ্নের মত, কিংকর্তব্যবিমুড়তায় ও আতংকে।আর নাবিলার ঠিক চোখের সামনেই তার দাদীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেলো।আজ পর্যন্ত যার কোনো ব্যাখ্যা, ক্ষমা বা ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি।

গেলো সপ্তাহে, নাবিলা সংগে তার স্কুল শিক্ষক পিতা ও তার ১২ বছরের ভাই আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে আসে তাদের (জীবনে ঘটে যাওয়া) সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা বলার জন্যে এবং সেই ঘটনার সদুত্তর পেতে যা সেদিন ঘটেছিলো। সে যাই হোক, এতকিছু হওয়া সত্বেও তারা অবিশ্বাস্যভাবে সকল বাঁধা পেরিয়ে তাদের গ্রাম থেকে সুদূর ওয়াশিংটনে আসতে সক্ষম হয়। যদিও নাবিলা আর তার পরিবার বার বার উপেক্ষিত হয়।

মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে প্রায় ৪৩০ জন স্বাক্ষীর মধ্য থেকে মাত্র ৫ জন আসে।নাবিলার পিতা সেই ৫ জন উপস্থিত স্বাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
“আমার 'মেয়ে'র চেহারা 'সন্ত্রাসী'দের মত না,আর না আমার 'মা'এর চেহারা 'সন্ত্রাসী'দের মত ছিলো। আর এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে এই বিষয়টা কিভাবে ঘটে গেলো.. একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমেরিকানদের 'শিক্ষাদান' করতে চাই এবং 'উপলব্ধি' করাতে চাই যে আমার সন্তানরা কতটাইনা 'ক্ষত-বিক্ষত'।”

একজন দোভাষী (Translator) যখন এই ঘটনা (আদালতে) বলছিলেন তখন তার দু’চোখ বেয়ে 'অশ্রু নামছিলো', কিন্তু সরকারপক্ষ এবং তাদের (সমর্থনদুষ্ট) আদালত এই বিষয়টাকে 'চরম অবজ্ঞা' করে এবং তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকেও।

আকর্ষণীয় লালচে বাদামী চোখের কিশোরী নাবিলা যার বয়স প্রায় নয়,তার সাক্ষ্য প্রদানের সময় শুধুমাত্র একটি ছোট্ট প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলোঃ “ আমার দাদী কি দোষ করেছিলো ? ”

পিনপতন 'নীরবতায়' সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারেনি, এমনকি যারা ''তত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলো তারাও।
প্রচন্ড 'ঘৃনা' জন্মেছিলো সেই সরকারের উপর যারা দাবী করে যে তারা 'বাক-স্বাধীনতায়' ও 'মানবধিকারে' বিশ্বাস করে,যখন রেহমান (পড়ুন—আব্দুর রাহমান) তাদের কঠিন দুরবস্থার কথা বলছিলো। আর ঠিক সেই মুহুর্তেই "বারাক ওবামা" মিটিং করছিলো লকহিড মারটিনের সাথে যে কিনা একটি 'অস্ত্র প্রস্তুতকারী' প্রতিষ্ঠানের 'সি.ই.ও'।

কিছু বাছাই করা স্মৃতিঃ
______________

এটা খুব সহজেই অনুধাবণ করা যায় যে, মার্কিন সরকারের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বৈষম্যের 'নাবিলা রেহমান' ও 'মালালা ইউসুফ যাই' এর ক্ষেত্রে যাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করেছিলো। যেখানে পশ্চিমা মিডিয়া,কুটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা মালালার প্রতি সম্মান দেখায় তার বীরত্বের জন্য, সেখানে নাবিলা হয়ে যায় নামহীন,পরিচয়হীন লাখ লাখ সেই অতি সাধারণ মানুষদের একজন যে বা যারা প্রায় একদশক ধরে আমেরিকানদের (চাপিয়ে দেয়া) যুদ্ধের কারণে এখনও ধবংসস্তুপের মাঝে তাদের জীবন ধারণ করে চলেছে বছরের পর বছর।

এই তীব্র বৈষম্যের কারণটি এখন স্পষ্ট। যেহেতু মালালা ছিলো তালেবানদের স্বীকার,এরপরেও সে (সে দেশে বসেই) 'তীব্র প্রতিবাদ' করতে সক্ষম হয়, এবং এটা ছিলো রাজনৈতিক একটা 'প্রচারাস্ত্র' যা দ্বারা যুদ্ধকে 'বৈধভাবে' টিকিয়ে রাখা যেতে পারে(তালেবানদের বিরুদ্ধে)।আর 'মালালাকে ব্যবহার' করা যেতে পারে একজন 'পাবলিক ফিগার হিসেবে তাদের (আমেরিকানদের) 'সন্ত্রাসের' বিরুদ্ধে যুদ্ধকে 'শক্তভাবে বৈধতা' দেওয়ার জন্য। আর এর ফলে আমেরিকা ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠী তার (মালালার) পক্ষ হতে বলতে পারে যে- তারা এমন নোংরা রক্তাক্ত ঘটনা (মালালাকে গুলি করার ঘটনা) যেন আর না ঘটতে পারে সে জন্যই (তালেবানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ করছে।

তারা তার নাম ও ছবিকে একটি প্রতীক হিসেবে নিয়েছে যেন তারা তাদের যুদ্ধের বৈধতাকে শক্তিশালী করতে পারে যা তারা আজ 'মুসলিম ভূমিগুলোতে' করছে ,আর এরকম উদাহরণ অজস্র।আর এটা করতে গিয়ে তারা তাদের নিজেদের 'আত্ন-উপলব্ধি' বা 'আত্নগ্লানির' দিকে মোটেই কর্ণপাত করছে না।

যেটা ম্যাক্স ফিসার তার ওয়াশিংটন পোষ্টে বলেছেনঃ

“পশ্চিমাদের মালালার প্রতি 'তোষামোদের' মাত্রা এমন হয়েছে যে তার (মালালার) সংগ্রাম যা সে করেছিলো পাকিস্তানের লাখ লাখ নারীদের উন্নয়নের জন্য যারা নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে (সে দিকে মনোযোগ না দিয়ে) তার চাইতে বেশি পরিমাণে (তোষামোদ) এজন্য করা হচ্ছে যে- আমরা একজন 'সেলেব্রিটি'র সাথে আনন্দময় ও উষ্ণ সময় কাটাতে পারি (যাতে টি.ভিতে নিজেদের 'উদারতার' ছবি আসে) একটি ছোট্ট মেসেজের (নারীদের সম-অধিকারের) সাথে।যেটা দ্বারা আমরা নিজেদের 'কনভিন্স' করছি যে এটা আসলে একটা অতিসাধারণ বিষয় যা ঘটে থাকে- ভালো (সত্য) ও খারাপ (মিথ্যা) মানুষদের মাঝে,আর (ভাবটা এমন যে) যেহেতু আমরাই 'ভালোর' (সত্যের)পক্ষে তাহলে এত চিন্তার কি আছে?”

কিন্তু এসব রাজনৈতিক প্রচ্ছদে নাবিলার ছবি কোথায়? আদালতের আইনের বহির্ভূত এসব হত্যা, ড্রোন হামলা ও অত্যাচারের ঘটনাকে যদি শুধুমাত্র পাকিস্তান,আফগানিস্তান ও অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের 'স্বাধীনতা' (তালিবান ও এই মতাদর্শের যোদ্ধাদের হাত থেকে) 'টিকিয়ে' রাখার নামে (যা আমেরিকানরা দাবী করে) হয়েও থাকে তাহলেও কোথায় এসব মানুষদের জন্যে একটুখানি "স্বীকৃতি" যে বা যারা এই "ভয়ংকর যুদ্ধের স্বীকার" ঠিক যেমনটা ছোট্ট কিশোরী নাবিলা?

শুধুমাত্র তারাই "স্বীকৃতি" পায় যারা কিনা এই যুদ্ধে শত্রুদের (তালিবানদের) হাতে নিহত হয়।মালালার সংগ্রাম আমেরিকানদের সাহায্য করেছিলো তাদের যুদ্ধকে 'বৈ্ধতা' দিতে আর এটাকে (যুদ্ধকে) তারা টিকিয়ে রাখবে যদিও তার (মালালার) ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায় তবুও, যেখানে ছোট্ট শিশু-কিশোররা (যেমন নাবিলা) অনবরত 'ভীতসন্ত্রস্ত' ও 'নিহত' হতে থাকবে যতক্ষণ না এই যুদ্ধ শেষ হয়।আর এতে করে নাবিলার মত যারা আছে তারা কোনোদিন 'সেলেব্রিটি' হতে পারবে না,আর না পারবে কোনো 'এ্যওয়ার্ড' নিতে এবং তাদের 'বিবৃতি'তেও কেউ চাইবে না উপস্থিত থাকতে।

কিন্তু যদি তারা উপস্থিত থাকতো, তাহলে সেই প্রশ্নটি শুনতে পেত ঠিক নাবিলার মত আরো সে সকল লাখ লাখ শিশু-কিশোরদের মুখে যা গত এক 'দশক' ধরে চলে আসা এক 'ভয়ংকর যুদ্ধ' তাদের 'বলতে শিখিয়েছে'-

“কখন আমি শুনবো যে তারা (আমেরিকানরা) তাদের (তালিবান ও এই মতাদর্শের যোদ্ধাদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? আমি তাদের সাথে কি অন্যায় করেছি? আমার দাদী কি অন্যায় করেছিলেন? আমিতো কোনো অন্যায় করিনি!

সূত্র
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×