অনুষ্ঠানের জন্য সন্ধ্যাই ভালো। কে জানে আসলেই ভালো কি না, তবে সন্ধ্যাটাই বেছে নেয়া হয়। এখানেও ব্যতিক্রম হল না। গো-পদাবলীর ধূলি মিলিয়ে যেতেই আকাশে আকাশে যে সান্ধ্য লালিমা জেগে উঠছিল তা ঠিক কোন অনুষ্ঠানের রঙ নয় বলে কিংবা কে জানে সে আলো হয়ত ক্যামেরার জন্য ততটা কাজের নয় বলে কৃত্রিম সব বাতি জ্বালিয়ে জায়গাটা ঠিকমতো আলোকিত করে নেয়া হয়েছে।
সরকার পক্ষে আছেন পুলিশ, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, নোটারি পাবলিক আরও অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা। আর ডাকাত পক্ষে আছে ছোট বড় নানা মাপের কান কাটা, নাক ছ্যাঁচা, ষন্ডামুখো সব ডাকাত। নো-ম্যান্সল্যান্ডে আছে সাংবাদিক, ভাড়া করা বাতিওয়ালা, কার্পেটওয়ালা, ফটোগ্রাফার, টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান, ডেকোরেটর, ক্যাটারার আরও নানা প্রান্তের, নানা কেজো অকেজো লোকজন। আছে কৌতুহলী মানুষ।
- কী হবে ভাই, এখানে?
- গুলি বিনিময় হবে, ভাই।
- অ।
তা গুলি বিনিময় কিন্তু শুরু হলো একসময়। সরকার পক্ষ থেকে একজন আর ডাকাত দলের পক্ষ থেকে একজন কয়েক কদম করে সামনে এলেন। তাদের বাম হাতে গুলি। আর ডান হাত ফাঁকা। 'হাতঝাঁকি' করতে হবে না! অর্থাৎ কিনা হ্যান্ড শেক। বা কর মর্দন। তারা এগিয়ে এলেন। হাতঝাঁকি করলেন। ক্যামেরার ফাশবাতিগুলো ক্রমান্বয়ে একের পর এক জ্বলে উঠল। মুভি ক্যামেরাগুলোর রোল ঘুরল।
এবার বাম হাতে বাম হাতে গুলি বিনিময় হল। তারা হাসলেন। নোটারি পাবলিকরা দেখলেন। ম্যাজিস্ট্রেট সেটাকে বৈধতা দিলেন। সাংবাদিকরা প্রয়োজনীয় নোট নিলেন। কাজ শেষে মুভি ক্যামেরাম্যানেরা কিছু ইনসার্ট শ্যুট করলেন। কাটার মাঝখানে সেগুলো বসানো হবে।
সাংবাদিকরা মনে মনে হেডিং ঠিক করলেন। "মাঝির চরে গভীর রাতে পুলিশ ডাকাত গুলি বিনিময়। একজন নিহত।"
নোটারি পাবলিক আর ম্যাজিস্ট্রেট মিলে প্রথমে ভাবলেন, আরে! নিহত কোথায় পাওয়া যাবে? পরে তারা ঠিক করলেন ভিড়ের মধ্য থেকে কাউকে বলে কয়ে রাজী করিয়ে নিহত দেখানো হবে। তাকে কিছু সম্মানীর লোভ দেখালেই হবে।