একসময়ের দুরন্ত, সাহসী, উদ্যমী লোকেরাও বয়সের সাথে চুপসে যেতে থাকে। অতীতের লেশমাত্র দেখা যায় না। তারুণ্য যৌবনের টগবগ করা রক্ত শান্ত হয়ে যায় সবার। চিন্তা চেতনায় মৃত্যুর ভয় বা পৃথিবীর প্রতি এক প্রকার অনীহা আসতে থাকে কেন যেন। প্রকৃতির নিয়ম হয়তো।
আর্থিক মন্দা, ভাইয়ের মৃত্যু, পর পর সাত সন্তানের মৃত্যু, পালিত ভাগ্নের মৃত্যু, সিপাহী বিদ্রোহ, দিল্লির ভাঙন, মোঘল সাম্রাজ্যের পতন যেই গালিবকে দমাতে পারে নি; হীনম্মন্যতার ছাপ আনেনি তার লেখায় তিনিও একসময় ভাঙতে শুরু করেন। মৃত্যুর ছাপ আসতে থাকে তার লেখায়।
১৮৬৩ সালের পরের সময়ে গালিবের সমবয়সী বাল্যবন্ধু মোমিন খাঁ, যার সাথে ৪২/৪৩ বছরের বন্ধুত্ব ছিল তিনি একদিন মারা গেলেন। তখন তার চিন্তায় এল তার সন্তান, সমবয়সীরা একে একে চলে গেল। তারও হয়তো সময় নিকটে। তার লেখায় কৌতুক, বুদ্ধি, প্রেম, দর্শন ইত্যাদি বৈচিত্রের ঝাঁঝ ধীরে ধীরে কমে যেতে লাগলো। মৃত্যু হয়ে উঠে মুখ্য বিষয়।
এমন সময়ে লোহারুর নবাব গালিবের অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন "গালিব কেমন আছেন?"
তারই উত্তরে গালিব বলেছিলেন "দু একদিনের মধ্যে আমার পাড়াপড়শিকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবে গালিব কেমন আছে।" তার উত্তরে এই শেষ ঝলক দেখিয়েছিলেন গালিব।
১৫ ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৬৯ সালে গালিব তার কবিতার প্রধান নায়ক মৃত্যুর দেখা পেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪৮