somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিজু চৌধুরী
সহজ সরল সোজা সাদা ভাষায় জীবনের কথা লিখতে পছন্দ করি। কাদা মাটিতে বেড়ে ওঠা একজন নিতান্তই সাধারন মানুষ। মনের কথাগুলি বরাবরই মুখে এসে বের হতে চায় না, কলমে আসতে চায়।

শিক্ষণীয় পোষ্ট - অর্থ সঞ্চয়

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম অংশ।
বাবা ও ছেলে মাটির ব্যাংক কিনেছে একইরকম। বাবা প্রায় প্রতিদিনই এক টাকা বা দুই টাকা ফেলেন। কখনও পাঁচ দশ টাকা। ছেলে প্রতিদিন চেষ্টা করেও পারে না ফেলতে। সপ্তাহে দুইদিন হয়তোবা ফেলে। আর সেটি চার আনা বা আট আনা এবং কখনও হয়তোবা কাগজের এক টাকা।
ছেলে দেখল এভাবে তো পোষাবে না। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসল। বাবার বেডরুমে রক্ষিত ব্যাংকটি সে তার ঘরে রক্ষিত ব্যাংকটির সাথে অদল বদল করল। সে দেখে, বাবা তার ব্যাংকে টাকা ফেলছে। তার ভাল লাগে। এরপরে সে চিন্তা করল যদি ধরা পড়ে যায়, তাই সপ্তাহ খানেক পরেই বাবার ব্যাংক, বাবার নিজের জায়গায় রেখে, সে বাবাকে বলে -
- বাবা, আমার ব্যাংকটা তো চুরি হয়ে যেতে পারে, তোমার ঘরে রাখলে চুরি হবে না।
এই বলে সে বাবার সামনেই একটি কাগজে বাবা, আরেকটিতে নিজের নাম লিখে, ভাত দিয়ে সাটিয়ে দেয় ব্যাংক দুটির গায়ে। ব্যাংক দুটি পাশাপাশি।
ছেলেটি বাবার অনুপস্থিতিতে হাল্কা করে লাগানো কাগজ দুটো বদলিয়ে দেয়। ছেলেটি বাবার সামনেই বা কখনও সবার সামনেই, নিজের নাম লেখা ব্যাংকে টাকা ফেলে।
ছেলেটি দুরে দাড়িয়ে দেখে, বাবা তার ব্যাংকে টাকা ফেলছে। ছেলেটির মন আনন্দে ভরে উঠে।
মাসখানেক পরে আজ স্থানীয় মাঠে মেলা শুরু হয়েছে, যার জন্যই এ পয়সা জমানো। ছেলেটি নিজে জমালে হয়তো খুব বেশী হলে বিশ ত্রিশ টাকা জমাতে পারত। এখন কম করে হলেও শত টাকার উপরে হবার কথা। বাবা সহ বাসার সবার অগোচরে ছেলেটি ব্যাংকটি ভাঙ্গে। গুনে দেখে সর্বসাকুল্যে আঠার টাকা আর অনেকগুলি কাগজ। চারটে কাগজ আঠা দিয়ে লাগানো ও সেগুলির গায়ে ১, ২, ৩, ৪ লেখা। বাকী কাগজগুলিতে লেখা -
- সিরিয়াল অনুযায়ী ১ থেকে ৪ পর্য্যন্ত পড়বে। ছেলেটি খুলে পড়তে শুরু করে -
১ নং -
বাবা,
টাকা কোথা থেকে অর্জন করবে সেটি যেমন কঠিন, তার থেকে কঠিন হচ্ছে কোথায় জমাবে? সেটি জানা -
"আমি সবার অগোচরে তোমার ঘরে গিয়ে আমার ব্যাংকে টাকা জমিয়েছি।"
২ নং -
বাবা,
টাকা আগলে রাখতে হয় নীরবে ও অগোচরে।
- তাই নীরবে আমি তোমার নাম লেখা আমার ব্যাংকে সবার অগোচরে টাকা ফেলেছি আর সবার সামনে তোমার ব্যাংকে কাগজ ফেলেছি। আর তুমি সবার সামনে আমার ব্যাংকে টাকা ফেলেছ।
৩ নং -
বাবা,
জগতে কখনই বড় টাকার সাথে লাগতে যাবে না। কখনই পারবে না বড় টাকার সাথে। আর বড় টাকার সাথে না থেকে নিজের মত থাকাই উত্তম। কারণ, বড় টাকা ছোট টাকাকে টানে।
- তাই, তুমি যত টাকা জমাতে পারতে, তার চেয়ে কম টাকা তুমি গুনে পাবে। কারণ, বড় টাকা তোমার টাকাকে টেনে নিয়েছে, তোমার হাত দিয়েই।
বাবা, তুমি আজ মেলায় যাবে। যাবার আগে আমার কাছে টাকা নিয়ে যাবে। আমি যা দেব, তাতে তুমি খুশীই হবে।
৪।
বাবা,
ছোট টাকার আওয়াজ বেশী, বড় টাকার আওয়াজ নেই।
- তোমার মনে হতে পারে যে, আমি কি করে বুঝতাম? ঝাকি দিলেই তোমার কম টাকা পয়সার ব্যাংকে ঝনঝনে আওয়াজ হত।

দ্বিতীয় অংশ
ছোটবেলায় আমিও মেলার জন্য পয়সা জমাতাম। আমারও ধারনা ছিল যে, বিশ থেকে ত্রিশ টাকা হবে হয়তোবা। ভেঙ্গে দেখি একশত টাকার উপরে। আমি অবাক। পরে জানলাম, বাবা আমার ব্যাংকে আমার অগোচরে টাকা ফেলেছেন।
একে মফস্বল শহর, তার উপরে সময়। ছোটবেলায় আমরা বাবাকে থ্যাংক ইয়্যু বা আই লাভ ইউ বলি নাই কখনো। আমাদের ছেলেমেয়েরা খুশী হলে চুমু দেয়। আমার মনে আসে না। তাই, মাথা নীচু করে দাড়িয়ে রইলাম। কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে বাবা উপরের গল্পটি হাসতে হাসতে বলেছিলেন -
- "পিসি সরকার বা ডেভিড কপারফিল্ডকে দেখিনি, আমি বাবাকে দেখেছি।"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×