somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুহূর্ত নির্মিতি

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৬ নভেম্বর ১৯৯৫। বাসে করে ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছি, জীবনে প্রথম। ওটাই প্রথম অত দীর্ঘ ভ্রমণ আমার। কবিতার সাথে তখন মাত্র অর্ধযুগের দহরম মহরম। যা দেখি তাই সুন্দর লাগে ধরনের বয়স। পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতায় দু'য়েকটা বিশেষ ব্যতিক্রমী অঞ্চল ছাড়া গোটা দেশের ভূ-প্রকৃতিকেই প্রায় একইরকম মনে হলেও, সেবার আমার চোখে বৈচিত্র্যের আর শেষ ছিল না যেন। বাসের জানালাগুলো খুবই চঞ্চল হয়ে উঠেছিল একজোড়া তৃষ্ণার্ত চোখের নাচুনিতে। বসেছি একপাশের জানালায়, কিন্তু বারেবারেই মনে হচ্ছিল, আহা, ওপারে বুঝি অদেখা রয়ে যাচ্ছে কোনো বিরল সুন্দর! বাসের যাত্রীদের মধ্যকার কেউ কেউ যাত্রার খানিক পর থেকেই সশব্দে ঘুম যাচ্ছিল, আমার পোড়াচোখের ওই দুর্মতি ছিল না। বরং এ জানালা থেকে ও জানালা, এই বাম তো এই ডান, এই আবার সম্মুখ। এর মধ্যেই কখন যে কাগজ-কলম বের করে নিয়েছিলাম খেয়ালই করতে পারি নি। এটা ওরকম বয়সেই সম্ভব। এখন তো মাথায় কবিতা কিলবিল করলেও জনসমক্ষে কাগজ-কলম বের করে লিখে ওঠা হয় না কিছুই। মাত্র যুগটাক ব্যবধানেই মানুষ কত বদলে যায়! কিন্তু সেবার, মনে পড়ে, যশোর অবধি গিয়ে খাতার পাতার শাদাকে অন্ধকার এসে একেবারে গ্রাস করে নেবার আগপর্যন্ত অসম্বিত থেকে আসা একটা তাড়না আমাকে দখল করে রেখেছিল। সেবার যেটুকু আঁকিবুকি করা সম্ভব হয়েছিল, এক দশকাধিকাল সেটা আঁচড়মুক্তই থেকে গিয়েছিল। কৌতূহলবশত পাণ্ডুলিপির স্তূপ ঘেটে খসড়াটি নতুন করে পড়তে গিয়ে ওই মুহূর্ত নির্মিতির প্রতি একটা প্রেমবোধ আঁচ করতে পারি। আদি ও আসল নকশামালার কোনো বিকৃতি না-ঘটিয়ে একাধটু চুনকাম সহযোগে খসড়াটির প্রকাশোদ্যোগের নেপথ্যে ওই প্রেমবোধটিই একমাত্র বিলাস। আশ্চর্য হবো না যদি পাঠকদের কেউ কেউ আদৌ কোনো সংবেদনের বালাইটিই এতে খুঁজে না পান। মানুষের মধ্যকার সৌন্দর্যধারণার বৈচিত্র্য ও রুচিবৈভিন্ন্যের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মানসিকতা এ লেখকের আছে।

সাভার : জল ও হাওয়া

কালীগঙ্গায় বিনাশী ঢেউ।
বাতাসপ্রবর এসে
দু'হাতে সরালো বস্ত্র জলের দেবীর।
কামাতুরা দেবী বিছায়ে দিলেন
তার ভেজাদেহ, জলের শয্যায়।
কে একজন বেরসিক
অসময়ে উড়িয়ে আনলে ধুলো
লগন বিফল হয়ে গেল।

মানিকগঞ্জ ১ : কুড়ানি

অবসর ফুরিয়ে গেছে, এদিকে এখন মাড়াই।
এখন শুধু মাঠ, এখন শুধু সোনা।
দারুণ ঠাণ্ডায় হিম হয়ে যাচ্ছে
ঘরের গরম ভাত।

পেছনে ডাকলে কেউ ফিরে তাকাবি না
বয়ে গেল বয়ে যায় হিজা কুড়াবার বেলা।

মানিকগঞ্জ ২ : স্নানক্রিয়া

স্নান একটা শিল্প, যদিও স্নানার্থী জানে না
অন্যে দেখে মহিমা বাড়ায়
জলের আদরে ফোটে ফুল
সুগন্ধ ছড়ায়।

প্রাণীদের এটি চিরকালই শৌখিন ক্রিয়া।

সাটুরিয়া : একা এবং অন্য একজন

হিজল বিলের মধ্যিখানে একাগাছ
ডালে এক দলছুট ভিংরাজ পাখি।
পাখি বলে-- গাছ হে, কষ্ট কি কিছু ?
গাছ বলে-- পাখি হে, জগত্সত্য শোনো
দলে থাকলেও একাকিত্ব ছোটে পিছুপিছু।

মহাদেবপুর : ভালোবাসা

ঝুলব্রিজে পারাপার, তবু
আমাদের টোল-ট্যাক্স নেই।
হাসতে, হাসাতে জানি
কথা জানি ভালোবাসিবার।

ভালোবাসা পৃথিবীর, জেনো
সমুদয় সীমানা ডিঙোবার বিলাস টিকিট।

শিবালয় ১ : দূরত্ব

শুধু অসঙ্গতি শুধু বিচ্ছিন্নতা, তাই
শিবালয়ে ঢুকেছি এসে অলিঙ্গ প্রাণী
আমাকে পূজছে যারা তারাও অযোনি।

শুধু বিচ্ছিন্নতা শুধু অসঙ্গতি
নিজেকে আড়াল করে
বাওড়ে ভিড়ল এক
নাও বৈঠাহীন।

শিবালয় ১ : ইছামতি

বোন ইছামতি, শীর্ণা মেয়ে ওহে!
এত ভালোবাসা শিখলে কোথায় ?

বুক ভরা মাঝি, বুক ভরা শুধু নাও।

তোমার নদীতে শুনি কতই জোয়ার ?
এবারটা খোলো তবে মনের দুয়ার।

আরিচা : পারস্পরিকতা

চলো ইলিশ হই পদ্মায় ভাসি
থৈ থৈ জল ঝিকমিক।
চলো স্রোত হই বয়ে চলি
ঝাটকা হই কাঠের পাটাতনে।
চলো চিল হই উড়ি
শিকার নেশায় করি বাতাস ভজন।

চলো নিচে নামি
ডুবে যাই দু'জনে দু'জন।

দৌলতদিয়া : নদীর ঔরস

জেলে নাও ঝিরঝির
চলমান জালের পতন।
ও নদীরে...
ভাণ্ডে তোর মণিমুক্তারাজি
বহু গোপন সম্পদ।
স্রোতে যে সাঁতরায় সে নদীর সন্তান
নদীর ঔরস বড়ো ভীষণ ধেয়ানি।

গোয়ালন্দ : গান

সবুজিমা ছেড়ে আমরা লালে এলাম
মাঝে জলের প্রবাহ, স্রোত।
পথঘাট মেতে আছে কর্মসংগীতে,
আমরাও।

সবুজের এপারে লাল, লালের ওপারে সবুজ
আমার ওপারে সে, তার এপারে আমি।

লাল দুঃখ ও সবুজ আনন্দে মাখামাখি
পালাগান
তুমি সবখানে আছ।

আহ্লাদীনগর : পথ

ইংরেজি 'এস' আকৃতির পথ ঘেঁষে খেজুরের বন
গুড়ের গন্ধে আড়াল খসে পড়ে।
যারা মাছির সওদাগর তাদের এ আহ্লাদীনগর।

আমার 'এম' আমার সম্পূর্ণ সত্তার।
ইন্ডিগো ইন্ডিগো গ্রাম এবং রাজশাহীর আম
ম্যাঙ্গো থেকে আরেকটা 'এম' নিয়ে
তোমার বুক চিরে রচিত হলো
আমার দারুণ পথ-- এসএম অ্যান্ড এম।

রাজবাড়ি : নাম

তুমি ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছ, আমি যাচ্ছি
আমাদের শুধু চলা দুই বিপরীত দিকে।

তুমি যার সাথে মিশেছো, আমিও মিশেছি। পুড়েছো
তুমি যার প্রেমে, আমিও তারই...

আমরা একই মানুষের দুই ভিনগামী নাম।

কেশবপুর : শালিক

শালিক নামছো শালিক উড়ছো
আমি যাচ্ছি কাছ দিয়ে তার।
চেয়ে দেখো সুনয়না
সুনাসিকা সুদন্ত সুঠোঁট
চেয়ে দেখো পাতিহাঁস।

একদিন পায়ে ছিলাম, আজ পাখায়
ফের একদিন তোমার আলসদৃশ সিঁথিপথে
হাঁটব একাকী।

কানাইপুর : ধন্ধ

এদিক তাকালে ওদিকে গুমোট অন্ধকার
একজন খুশি তো অন্যে বেজার।
এক আখড়ায় দু'পির চলে না।

এ বনে পাখি তো ও বনে বাঁদর
এদিকে আনন্দ ওদিকে উল্লাস
ওদিকে বেদনা এদিকে বিষাদ।

একসঙ্গে দু'জনের হওয়া যায় না বলে
আবারো আসতে হবে ফিরে।

মধুখালী : বিনিময়

এবার শুধু দেখব, খাব না।
এবার শুধু শুঁকব, চাটব না।

এবার শুধু সর্ষেক্ষেত, তেল না।
এবার শুধু আখক্ষেত, গুড় না।

এবার শুধু বালিকা, নারী না।
এবার শুধু কোমলা, পাকা না।

আসো সবটা দেই, আসো সবটা নেই
আসো বিনিময় করি।

কামারখালী ১ : সম্পর্ক

মেঘের আঁড়ে লুকাচ্ছ সূর্য কালো ঘোমটায়
কবে এমন নতুন হলে যে লাজ করছো।

আসো খেলি আলো আলো খেলা
আসো হাঁটি পায়েচলা পথ।

দারুণ হোঁচটে উলটিয়ে নোখ
আসো একে অন্যের পা বেঁধে দেই
রক্ত মুছি।

কামারখালী ২ : বার্তাবাহক

মধুর সুভাণ্ড তুমি মধুমতি কারে পেতে চাও ?
কার লাগি ঘর বাঁধো জমিজিরাতের প্রেমে ?

কার লাগি রাতদিন কাঁদো ?
তোমার সে কোথায় থাকে, কী করে ?
খুব বুঝি ব্যথা দেয়, নেয় না খবর ?
তিনমাস সাথে শুয়ে নয়মাস বাঁকে বাঁকে ঘোরে
টই টই ?

কখনো সমুদ্রে গেলে
তোমার খবর ঠিক পৌঁছে দেব আমি।

মাগুরা : সুলতান

মাগুর মাছের পেট থেকে নেমে গেছে
তোমার বাড়ির দিকে পথ।
চিত্রা নদীর ছেলে তুমি রঙিন স্বপ্নচারী
মাছের পেটে তোমার নাম লেখা আছে।

পেশিপুরুষ সমুদ্র সুলতান
না-বলে সহসা বেড়াতে গিয়েছ কোন নদে ?

আমরা তো কেঁদে কেঁদে কাদা।

ঝিনেদা : পাপ

ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা নির্জন বাহারি নীড়
শীতল সবুজ মাখা।

নদী নেই জলগুলো ঘোলা
তবু গাছের প্রাচুর্যে ভাবি
এ শহর আত্মীয় আমার।

সোনাগুলো রঙ পাচ্ছে মাঠে মাঠে
তার দেহে বিলি কেটে সামনে গেলাম।
পরনারী আমাদের হাতছানি দিল।

যশোর : অন্ধকার

অন্ধকারের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি
যেটি আলোর যৌনাঙ্গ এবং পিচ্ছিল ভয়ানক।

শুধু যাচ্ছি, আসছি না
আসা-যাওয়া একত্রে হলে রেতঃপাত ঘটে
এটি কখনো সখনো দুর্ঘটনারূপী
আর দুর্ঘটনাও চিরকাল পিছলপ্রিয় হয়।

Image From: http://www.henham.org
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×