বাল্ট্রা দ্বীপ বা ইসলা বালত্রা গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ছোট একটা দ্বীপ। দ্বীপটি দক্ষিণ সিমুর নামেও পরিচিত। বাল্ট্রা দ্বীপটি গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রে অবস্থিত সমতল একটা দ্বীপ।এই দ্বীপটি খুব শুষ্ক এবং ছোটখাটো শক্ত ঝোপঝাড়, একজাতের ফণীমনসা এবং পালো সান্টো গাছে পরিপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর এয়ার ফোর্স বেস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।ততকালিন সময় পানামা খালকে সুরক্ষিত রাখা এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাল্ট্রা দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধের পর ইকুয়েডর সরকারের কাছে দ্বীপটি হস্তান্তর করা হয়। দ্বীপ বর্তমানে ইকুয়েডর সেনাবাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিন ঘাঁটির কিছু স্থাপনা এখনও দ্বীপের কিছু কিছু অংশে দেখা যায়।১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দ্বীপের সিমুর বিমানবন্দরটি সমগ্র গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র বিমানবন্দর ছিল। বর্তমানে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ দুটি মোট বিমানবন্দর রয়েছে; অন্য বিমানবন্দরটি সান ক্রিস্তোবাল দ্বীপে অবস্থিত। তবে কেবল সিমুর বিমানবন্দরেই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যায়। বাল্ট্রা দ্বীপে দু'টি ফেরিঘাট রয়েছে। পর্যটক আকর্ষণ এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ইকুয়েডর সরকার দ্বীপটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দ্বীপটি গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত। গালাপাগোস ইগুয়ানা নামে এক প্রজাতির সরিসৃপ একসময় এই দ্বীপে বসবাস করত এবং পরবর্তীতে তা বিলুপ্ত হয় যায়। বর্তমানে প্রজাতিটি দ্বীপে অবমুক্ত করা হয়েছে।
আমরা মানুষেরা যে কোনো রহস্যময় বিষয়কে অনেক ভালোবাসি। ফলে আমরা ক্রমাগত ছুটে চলি অজানা কোনো না কোনো রহস্যের খোঁজে। কিন্তু প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের অনেক রহস্যই মানব সভ্যতা এখনো উম্মোচিত করতে পারেননি।আজ এমনই এক অদ্ভুত রহস্যেঘেরা দ্বীপ বাল্ট্রা নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।আজ আমরা এই অভিশপ্ত বাল্ট্রা দ্বীপ এর রহস্য সম্পর্কে জানার বা জানানোর চেষ্টা করবো।
বাল্ট্রা দ্বীপকে কেন অভিশপ্ত বলা হয়?
জানা যায় যে, বাল্ট্রা দ্বীপে এক সময় মানববসতি ছিলো। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এই দ্বীপে কি এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ মরতে শুরু করে। এবং ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে পালায়। তারা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় এই দ্বীপটি অভিশপ্ত, কেউ যেন দ্বীপের আশে পাশে না যায়, একবার গেলে আর প্রান নিয়ে ফেরা যাবে না। তারপর থেকে দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
বাল্ট্রা দ্বীপের অমীমাংসিত রহস্য
বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্যের কথা বিশ্ববাসীর সামনে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এই সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি এয়ারবেসের একজন অফিসার ছিলেন ফ্রান্সিস ওয়াগনার নামে এক ব্যাক্তি। তার মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের অদ্ভুত চরিত্রের কথা। এরপর অনেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথা স্বীকার করেন।
রহস্য১
বাল্ট্রা দ্বীপ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়েনা বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক উপর দিয়ে মেঘ গুলো উড়ে যায় এবং অন্যান্য দ্বীপগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম। বৃষ্টির প্রকোপ যত বেশিই হোক না কেন বাল্ট্রাতে তার ছোঁয়া কখনোই পায় না।
রহস্য২
আমরা সকলেই জানি স্বাভাবিক অবস্থায় কম্পাসের কাটা সব সময় উত্তর দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে। কিন্তু বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে নাবিকদের কম্পাস। সেখানে গেলে কম্পাসের কাটা কখনও স্থির হয়ে থাকে, কখনও ইচ্ছেমত ঘুরতে থাকে আবার কখনও উল্টোপাল্টা ভুল দিক নির্দেশ করে। তবে সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের উপর প্লেনে থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক হয়ে যায়।
রহস্য৩
বাল্ট্রা দ্বীপের আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো সেই দ্বীপে গেলে অনেকের মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। সেই দ্বীপে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন মানুষের মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অনেকে দেখা যায় উলটা পালটা আচরন শুরু করেন।আবার কারো কারো স্মৃতি লোপ পায়। কেউ কেউ আবার অজানা অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে জেতে চান। তবে বেশিরভাগ মানুষ বলেছেন সেখানে গেলে যাওয়ার আশ্চর্যরকম ভালো একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। দ্বীপটি যেন চুম্বকের মত টেনে রাখে । একবার গেলে আর ফিরতে আসতে মন চায় না। দ্বীপ থেকে চলে আসার পরও কিছুদিন সেই আশ্চার্য অনুভূতি থেকে যায়।
রহস্য৪
অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন বৃক্ষ নেই। নেই কোন পশুপাখি। কোন পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। দ্বীপের রহস্যময়তার আবিস্কারক ওয়েগনার একবার একটা পরিক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি জোর করে কিছু প্রাণীকে ধরে এনে বাল্ট্রা দ্বীপ এবং তার পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের মধ্যবর্তী খালে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল বাল্ট্রাকে এড়িয়ে গিয়ে প্রানিগুলো সান্তাক্রুজ দ্বীপের দিকে এগিয়ে গেল। সব চেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হোল- উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যেতে থাকে। দেখে মনে হয় যেন অদৃশ্য কোন দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৩