আমাদের চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রোগীদের রোগ কতটুকু ভাল করতে পারেন তা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, নিজেদের প্রচারের ব্যাপারে তারা যে সিদ্ধহস্ত তা চট্টগ্রামবাসীরা ভালভাবে টের পাচ্ছেন।গত একমাস আমার বাবাকে নিয়ে তথাকথিত এসব চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আমার যে করুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে এসব চিকিৎসকদের প্রতি আমার এখন আর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা নেই।।এসব ডাক্তারদের সাক্ষাত পেতে হলে নানা অভিনব নিয়ম অনুসরন করতে হয় রোগীদের বা রোগীদের আত্বীয় স্বজনদের ।কোন কোন বিশেষজ্ঞদের সিরিয়াল পেতে হলে যেদিন স্বাক্ষাত দিবেন তার আগের দিন ,কিংবা ২দিন আগে রাত ১২ টা থেকে লাইন ধরতে হয় । অতঃপর নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অবশেষে ডাক্তার স্যারের সিরিয়াল মিললেও রোগীর আত্বীয় স্বজনরা নিজেরা অসুস্থ হয়ে পরেন। কোন কোন ডাক্তারকে আবার অগ্রিম ব্যবস্থপত্র ফিও দিয়ে ফেলতে হবে।এদেরকে আমি এখন প্রি-পেইড ডাক্তার ডাকি।আমি ডাক্তারদের এসব ব্যাপারকে তাদের সেলফ মার্কেটিং
ষ্ট্রাটেজি মনে করি ,আর মনে করি রোগীদের উৎপীড়নের কৌশল।
আমার বাবার গলায় সমস্যা ছিল।তাঁকে একজন ইএনটি বিশেষেজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই গত জুনের প্রথম সপ্তাহে;যিনি আবার প্রি-পেইড।ডাক্তারের কাছে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ,যথারীতি একগাদা প্যাথলজিক্যাল টেষ্টের লিষ্ট আর এক্স-রে করার জন্য বলেন ।এসব টেষ্টের রেজাল্ট নিয়ে গেলে, তিনি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন।অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে সিরিয়াল নাম্বার নিয়ে,মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে বাবাকে নিয়ে যাই।তিনি বাবাকে ব্রন্কোস্কপি করতে বলেন। ব্রন্কোস্কপি করতে গিয়ে বাবার গলার মধ্যে ক্যান্সারের আলামত পাওয়া যায়।ব্রন্কোস্কপি রিপোর্ট দেখে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পুনরায় ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন।এভাবে ডাক্তারদের মধ্যে ইদুর-বিড়াল খেলা চলতে থাকে ,ওদিকে বাবার অবস্থা সংকটাপন্ন হতে থাকে।এত বিশাল বিশাল ডিগ্রীর অধিকারী ডাক্তারেরা আমাকে এক মাসেও কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন নি, বাবার চিকিৎসা কি হবে?এদিকে আমাদের অর্ধ-লক্ষাধিক টাকার অপচয় হয়।
অবশেষে ঢাকার একদল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে গড়া একটি বোর্ড বাবার ক্যান্সারের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন এবং বাবাকে রেডিওথেরাপী দেওয়ার পরামর্শ দেন।ডাক্তাররা যদিও আশাবাদী,কিন্তু বাবার অবস্থা আসলেই সংকটাপন্ন।ডাক্তারদের মতে বাবার চিকিৎসা আরো আগে শুরু করলে ,শারীরিক অবস্থা আরো ভালো থাকতো।
আমার এই করুন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ অবস্থা নির্দেশ করছে,যার জন্য দায়ী ডাক্তারদের অতিরিক্ত কমার্শিয়াল চিন্তা-ভাবনা,অর্থলিপ্সা।একজন ডাক্তার যদি প্রতিদিন ২০-৪০ জন রোগী দেখেন,তাহলে তিনি সুস্থ থাকেন কিভাবে????????ডাক্তারদের পড়াশোনা বা গবেষনার সময় কোথায়?????????অথচ সমাজের সবচেয়ে মেধাবী সন্তানেরা এ পেশায় আসেন।কিন্তু সমাজের প্রতি,দেশের প্রতি তাদের কোন কমিটমেন্ট নেই; মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া।
এ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন নাগরিকেরা কি ভাবছেন?????????নীতিনির্ধারকেরা কি ঘুমিয়ে ???????????
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




