ছাত্র-রাজনীতির ভালো-মন্দ -
দিন যত যাচ্ছে কলেজ ও ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী ততই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে, সমাজের কেউ বলছেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। আবার কেউ বলেন অন্যায়ের জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্র রাজনীতি একান্ত প্রয়োজন। আবার কেউ বলেন, ছাত্র-রাজীনীতি চলবে তবে তা থাকবে ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোন রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করা ছাত্রদের উচিত নয়। যারা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের অভিমত হলো ছাত্ররা রাজনীতিতে নামার কারণে দেশের রাজনৈতিক ময়দান সব সময়েই উত্তপ্ত থাকে। এতে দেশের শান্তি শৃক্মখলা দারুণভাবে ব্যাহত হয়। তাছাড়া ছাত্ররা লেখাপড়া ছেড়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে অনেক ভাল ভাল ছাত্র বছরের পর বছর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হচ্ছে। মা-বাবা অনেক আশা করে অনেক অর্থ খরচ করে সন্তানদেরকে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পাঠান। যাতে তারা লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হয়ে পরিবার দেশ ও দশের সেবা করতে পারে কিন্তু অপ্রিয় হলেও অতি সত্য কথা হলো অধিকাংশ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে বড় মানুষ না হয়ে বড় পশুতে পরিণত হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী সরকার এবং অপরাজনীতির ধারক বাহকগণ।
ছাত্ররাজনীতি চলার কারণেই ইউনিভার্সিটির হলগুলো এখন মিনি ক্যান্টনমেন্ট। লেখাপড়ার পরিবেশ আর নেই। চলছে অস্ত্র আমদানি, হেরোইন বিক্রি, পিস্তলের বেপরোয়া প্রদর্শনী, চলছে ককটেলবাজী, বোমাবাজি, নিরীহ ছাত্রদের মেরে তাড়িয়ে দিয়ে হল দখল করছে সরকারি দলের ছাত্রগণ। তারা অন্য দলের ছেলেদের তো খুন করছেই এবং স্বার্থের কারণে নিজেদের দলের ছাত্রদের খুন করতে মোটেই দ্বিধা করছে না, রাজীব এবং ফারুক ছাত্রলীগের হাতেই খুন হয়েছে যদিও ফারুকের ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে শিবিরের ছেলেদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং ব্যান্ড করার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। বিগত সিনেট নির্বাচনে সরকার ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের ওপর। তারা জোর-জুলুম করে ভোটতো ছিনিয়ে নিলোই, প্রতিপক্ষের সম্মানিত শিক্ষকদের এমন পিটান পিটালো যে, কোন কোনও শিক্ষককে দুমাস পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হলো এখন যত চাঁদাবাজী, ছিনতাই, ভর্তি বাণিজ্য টেন্ডারবাজী জবর-দখল মা বোনদের ইজ্জত-সম্ভ্রম ধ্বংসের কাজও করে চলেছে ছাত্ররাই। বানরের হাতে খুনতি দেবার দুদর্শায় পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোন মতেই তার ছাত্রদের আর কন্ট্রোল করতে পারছেন না। ফলে ছাত্রদের অভিভাকত্ব তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। কথায় আছে সাপ নিয়ে যারা খেলে সাপের হাতেই তারা মরে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ তার হিফাযতের দায়িত্ব নিন।
ছাত্ররাজনীতির কারণে ১৯৭৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সহিংসতায় শিক্ষাঙ্গণে খুন হয়েছে ১২৮ জন, আর গুরুতর আহত হয়েছে ৪২৯০ জন। ভাষা শিক্ষা-৯১৮ ডা. হায়াত মামুদ নিঃসন্দেহে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুন এবং আহতের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি হবে। কোন মাতা পিতা চান না উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে তাদের সন্তান লাশ হয়ে ফিরে আসুক। তাছাড়া ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ তারা যদি এভাবে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে এদেশ চালাবে কারা? তাই অনেকের দাবি অচিরেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হোক। ছাত্ররাজনীতির পক্ষে যারা কথা বলেন, তাদের অভিমত হলো যুগে যুগে শাসকদের অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদে ছাত্ররাই রুখে দাঁড়িয়েছে এবং আন্দোলনের তোড়ে শাসকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।
৭১ মুক্তি সংগ্রামে ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্র সমাজের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
৫২এর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান এবং তাদের বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার বিরল কীর্তি বাঙ্গালী জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। তাছাড়া ছাত্রাবস্থায়ই যদি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকে তাহলে উচ্চ ডিগ্রি লাভ করে এসেও যোগ্যতা, দক্ষতা ও প্রজ্ঞার সাথে দেশ চালাতে পারে না। সে কারণে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি ঠিক নয়। তবে রাজনীতি করতে লেখা পড়ার ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ছাত্রদের।
দুটি পক্ষের মনোভাবকে সামনে রেখে আমরা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি তাহলো--
১) ছাত্ররাজনীতি চলবে, তবে তাহবে লেখা পড়ার ক্ষতি করে নয়।
২) রাজনীতি হতে হবে আদর্শভিত্তিক, জোর যার মুল্লক তার, বীরভোগ্য বসুন্ধরা এ সকল নীতির ভিত্তিতে নয়।
৩) ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
৪) কোনও অনাদার্শিক রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করা ছাত্রদের শোভা পায় না।
৫) ধোকা ফাঁকি মিথ্যে এবং সহিংসতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। তাদের নীতি হবে সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।
৬) একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেদের দ্বারা আরেকটি অন্যায় সংঘটিত হবে এমনটি যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৭) দেশ ও জাতি দেশী বিদেশী কোন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে কিনা, আমি নিজেও সেই ষড়যন্ত্রের সহায়ক ভূমিকায় আছি কিনা ছাত্রদের সে ব্যাপারেও যথেষ্ঠ হুঁশিয়ার থাকতে হবে।
৮) এদেশ মুসলমানদের, এখানে ৯০% মুসলমান বাস করে। আমরা যে দলই করি। নিজেদের মুসলিম জাতি সত্ত্বার ওপর আঘাত আসে এমন আত্মঘাতি কাজ কোন মুসলিম ছাত্র করতে পারে না। যদি করে তবে অচিরেই তাদের পরিচয় মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ইসলাম বিদ্বেষীরা ওঠে পড়ে লেগে যাবে।
এরিস্টটল বলেন, প্রতিটি মানুষই রাজনৈতিক প্রাণী। এদিক থেকে আমরা সকলেই রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে এক্ষেত্রে একজন রাজনীতিবিদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। একজন ছাত্রের সে দায়িত্ব নেই। যুক্তরাজ্য, ইংল্যান্ডে, ফ্রান্সে, জার্মানিতে এবং ইন্দোনেশিয়ায় ছাত্ররাজনীতি রয়েছে। কিন্তু তাদের রাজনীতি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। আমাদের দেশের মত এত নোংরা নয়। আমাদের দেশের ছাত্রদের ঐসব দেশের ছাত্ররাজনীতি অনুসরণ করা দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




