শুরুতেই বদল সংক্রান্ত এক পশ্চিমা গল্প জেনে নেয়া যাক। লুই ডোমাস নামক মার্কিনি রসালো সাহিত্যিক গল্পটি তার Black Events গ্রন্থে উল্লেখ করেন। ফেলাডোলফিয়া আর ডালাসের দুই জোড়া নব দম্পতি হ্যানিমুন উৎযাপনের জন্য লেক্সাসের সমুদ্র তীরে আসেন। ঘটনাক্রমে দম্পতিদ্বয় একই হোটেলের পাশাপাশি দুই কক্ষে ওঠেন। সপ্তাহখানেক পরে দম্পতিদ্বয় পরস্পর পরিচিত হন। হোটেলে নববধুদেও রেখে কুশলাদি বিনিময় হতো। একদিন হোটেলে ফিরে কাউন্টারে আসতেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। দুই স্বামী পাশাপাশি হাত ধরে অন্ধকারে তাদের রুম পর্যন্ত যান। কিন্তু আধারে ভুলে বদল হয়ে একজন অন্যজনের রুমে ঢুকে যান। ডালাস থেকে আগত স্বামী ক্যাথলিক ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তিনি রুমে গিয়ে প্রথমে নৈশ্য প্রার্থনা করলেন। তারপর স্ত্রীর হাত ধরে বুকে টানছেন ঠিক এই মুহুত্বেই বিদ্যুৎ চলে আসে। নববধূ ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলল আপনি পাশের রুমের ম্যাডামের স্বামী না? ভদ্রলোক লজ্জায় মাথা অবনত করে ছুটতে লাগলো নিজের রুমে। কিন্তু ভদ্র মহিলা লোকটির হাত টেনে ধরে বলল যেয়ে লাভ নেই। আপনি আমার রুমে এসে প্রার্থনা করে কিছুটা সময় পার করছেন। কিন্তু আমার স্বামীর প্রার্থনা করার অভ্যাস নেই। সুতরাং আপনার রুমে আধারের মধ্যে যা ঘটার তা ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে। গল্পটি আমাদের সংস্কৃতির সাথে স্যুট করে না সত্য। আমি এখানে গল্পটির উদ্ধতি দিলাম এটা বুঝাতে যে সব বদলের পরিনতি ভাল নাও হতে পারে। আর সবকিছু বদল করা সমীচিনও নয়।
বর্তমান মতাসীন সরকার আমাদের দিন বদলের গল্প (কেউ বলেন স্বপ্ন) শুনিয়েছিল। গল্প বলি আর স্বপ্ন বলি আমরা খারাপ অবস্থা থেকে মুক্তির সনদ ভেবে মহাজোট সরকারকে ক্ষমতাসীন করেছিলাম। কিন্তু হায়! দিন বদলের একি নমুনা। দিন বদলের বায়বীয় পরিবর্তনের আগে আমরা কিছু অদ্ভূদ বদলের মুখোমুখি হয়েছি। সম্ভবত নাম বদলের মাধ্যমে সরকার দিন বদলের বায়বীয় পরিবর্তনের সূচনা করতে চেয়েছেন।
মাওলানা আঃ হামিদ খান ভাসানী জাতির একজন কৃতি সন্তান। বিতর্কের উর্ধ্বের কয়েকজন ব্যক্তিত্বের একজন মাওলানা ভাসানী। শেখ মুজিবর রহমান নিজেও ভাসানী সাহেবকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। ভাসানী নভোথিয়েটারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হল বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার।
আওয়ামীলীগ সব সময় নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে দাবী করে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রভৃতি শব্দ যেন আওয়ামীলীগের ক্রয়কৃত সম্পদ। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে! আমাদের জাতির অহংকার ৭জন বীরশ্রেষ্ট। তাদের একজন বীরশ্রেষ্ট স্কোয়াড্রন লিডার রুহুল আমীন। এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে চট্রগ্রাম স্টেডিয়ামের নাম করণ করা হয় “বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্টেডিয়াম”। আওয়ামী সরকারের নাম বদল অভিযানে এ নামও যে বদল হবে তা ছিল অকল্পনীয়। জাতির সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুহুল আমীনের পরিবর্তে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নোত মরহুম জহুর আহমদ চৌধূরীরর নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হলো। তাতেই যেন দিন বদল পূর্ণতা পেল। রহুল আমীনের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এত বড় আপমানের বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কি এ বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের মিনতি শুতনে পান?
ঢাকার কলেজ গেটে অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। বিগত বি,এন,পি সরকারের আমলে হাতপাতালের সাথে নতুন করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়। নতুন এ মেডিকেল কলেজের নাম দেওয়া হয় বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। দিন বদলের সরকার সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপ প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার নাম ফলক ভেঙ্গে সেখানে নতুন নাম দেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
নাম বদল করেই সরকার ক্ষান্ত হতে নারাজ। দলীয় কর্মীরা রাতের আধারে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে শহীদ জিয়ার নাম ফলক ভেঙ্গে খান খান করেছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রবেশ দ্বারে জাতির দুই মহান ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়ারউর রহমান ম্যুরাল চিত্র ছিল। আওয়ামী কর্মীরা মুখোশ পরে টি,ভি ক্যামেরার সামনে জিয়ার মুর্যাল ভাঙ্গে।
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আক্রোশেই শুধুমাত্র দিন বদলের যোদ্ধাদের নাম বদলের অভিযানকে উৎসাহিত করেনি। নাম বদলের এ অদ্ভূদ নেশাকে আন্তর্জাতিক বাজারেও বাজারজাত করতে শুরু করেছে এ সরকার। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। যে বন্ধুত্বের অনুপম নিদর্শন চীন বাংলাদেশ মৈত্রি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। সরকার সে বন্ধুত্বকে তুচ্ছজ্ঞান করে “চীন বাংলাদেশ মৈত্রী” শব্দ তুলে দিয়ে নতুন করে সংযুক্ত করল ‘বঙ্গবন্ধ’ শব্দ। এ বদলের পরিনতি কি হয়েছে তা সামপ্রতীক কালের বাংলাদেশ মায়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে বিচক্ষণ ব্যক্তিরা অবশ্যই তা উপলদ্বি করতে পারবেন। মায়ানমারকে মাধ্যম বানিয়ে প্রকারান্তরে চীনই যে সীমান্তে টেনশন বাড়াচ্ছে তা এখন সহজবোদ্ধ।
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদল করে রাখা হল হযরত শাহ জালাল (রাঃ) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর প্রতি আওয়ামীলীগের কি হৃদয়স্পর্শী মায়া? জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কে করেছে সবাই জানে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নামে বিমানবন্দর না থাকলে, জিয়ার নাম মানুষের হৃদয় থেকে মুছবে না চিরসত্য। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বীরশ্রেষ্ঠসহ কোন মনীষির নামে কোন স্পাপনা থাক বা না থাক, ওনাদের নাম আজীবন সবার চোখের সামনে ভাসবে, হৃদয়ে দোলা দিবে,
প্রেরণার বাতিঘর হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




