somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিন বদল থেকে নাম বদল

০৫ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুরুতেই বদল সংক্রান্ত এক পশ্চিমা গল্প জেনে নেয়া যাক। লুই ডোমাস নামক মার্কিনি রসালো সাহিত্যিক গল্পটি তার Black Events গ্রন্থে উল্লেখ করেন। ফেলাডোলফিয়া আর ডালাসের দুই জোড়া নব দম্পতি হ্যানিমুন উৎযাপনের জন্য লেক্সাসের সমুদ্র তীরে আসেন। ঘটনাক্রমে দম্পতিদ্বয় একই হোটেলের পাশাপাশি দুই কক্ষে ওঠেন। সপ্তাহখানেক পরে দম্পতিদ্বয় পরস্পর পরিচিত হন। হোটেলে নববধুদেও রেখে কুশলাদি বিনিময় হতো। একদিন হোটেলে ফিরে কাউন্টারে আসতেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। দুই স্বামী পাশাপাশি হাত ধরে অন্ধকারে তাদের রুম পর্যন্ত যান। কিন্তু আধারে ভুলে বদল হয়ে একজন অন্যজনের রুমে ঢুকে যান। ডালাস থেকে আগত স্বামী ক্যাথলিক ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান ছিলেন। তিনি রুমে গিয়ে প্রথমে নৈশ্য প্রার্থনা করলেন। তারপর স্ত্রীর হাত ধরে বুকে টানছেন ঠিক এই মুহুত্বেই বিদ্যুৎ চলে আসে। নববধূ ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলল আপনি পাশের রুমের ম্যাডামের স্বামী না? ভদ্রলোক লজ্জায় মাথা অবনত করে ছুটতে লাগলো নিজের রুমে। কিন্তু ভদ্র মহিলা লোকটির হাত টেনে ধরে বলল যেয়ে লাভ নেই। আপনি আমার রুমে এসে প্রার্থনা করে কিছুটা সময় পার করছেন। কিন্তু আমার স্বামীর প্রার্থনা করার অভ্যাস নেই। সুতরাং আপনার রুমে আধারের মধ্যে যা ঘটার তা ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে। গল্পটি আমাদের সংস্কৃতির সাথে স্যুট করে না সত্য। আমি এখানে গল্পটির উদ্ধতি দিলাম এটা বুঝাতে যে সব বদলের পরিনতি ভাল নাও হতে পারে। আর সবকিছু বদল করা সমীচিনও নয়।
বর্তমান মতাসীন সরকার আমাদের দিন বদলের গল্প (কেউ বলেন স্বপ্ন) শুনিয়েছিল। গল্প বলি আর স্বপ্ন বলি আমরা খারাপ অবস্থা থেকে মুক্তির সনদ ভেবে মহাজোট সরকারকে ক্ষমতাসীন করেছিলাম। কিন্তু হায়! দিন বদলের একি নমুনা। দিন বদলের বায়বীয় পরিবর্তনের আগে আমরা কিছু অদ্ভূদ বদলের মুখোমুখি হয়েছি। সম্ভবত নাম বদলের মাধ্যমে সরকার দিন বদলের বায়বীয় পরিবর্তনের সূচনা করতে চেয়েছেন।

মাওলানা আঃ হামিদ খান ভাসানী জাতির একজন কৃতি সন্তান। বিতর্কের উর্ধ্বের কয়েকজন ব্যক্তিত্বের একজন মাওলানা ভাসানী। শেখ মুজিবর রহমান নিজেও ভাসানী সাহেবকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। ভাসানী নভোথিয়েটারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হল বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার।

আওয়ামীলীগ সব সময় নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে দাবী করে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রভৃতি শব্দ যেন আওয়ামীলীগের ক্রয়কৃত সম্পদ। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে! আমাদের জাতির অহংকার ৭জন বীরশ্রেষ্ট। তাদের একজন বীরশ্রেষ্ট স্কোয়াড্রন লিডার রুহুল আমীন। এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে চট্রগ্রাম স্টেডিয়ামের নাম করণ করা হয় “বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্টেডিয়াম”। আওয়ামী সরকারের নাম বদল অভিযানে এ নামও যে বদল হবে তা ছিল অকল্পনীয়। জাতির সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুহুল আমীনের পরিবর্তে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নোত মরহুম জহুর আহমদ চৌধূরীরর নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হলো। তাতেই যেন দিন বদল পূর্ণতা পেল। রহুল আমীনের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এত বড় আপমানের বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কি এ বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের মিনতি শুতনে পান?

ঢাকার কলেজ গেটে অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। বিগত বি,এন,পি সরকারের আমলে হাতপাতালের সাথে নতুন করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়। নতুন এ মেডিকেল কলেজের নাম দেওয়া হয় বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। দিন বদলের সরকার সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপ প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার নাম ফলক ভেঙ্গে সেখানে নতুন নাম দেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

নাম বদল করেই সরকার ক্ষান্ত হতে নারাজ। দলীয় কর্মীরা রাতের আধারে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে শহীদ জিয়ার নাম ফলক ভেঙ্গে খান খান করেছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রবেশ দ্বারে জাতির দুই মহান ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়ারউর রহমান ম্যুরাল চিত্র ছিল। আওয়ামী কর্মীরা মুখোশ পরে টি,ভি ক্যামেরার সামনে জিয়ার মুর‌্যাল ভাঙ্গে।


প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আক্রোশেই শুধুমাত্র দিন বদলের যোদ্ধাদের নাম বদলের অভিযানকে উৎসাহিত করেনি। নাম বদলের এ অদ্ভূদ নেশাকে আন্তর্জাতিক বাজারেও বাজারজাত করতে শুরু করেছে এ সরকার। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। যে বন্ধুত্বের অনুপম নিদর্শন চীন বাংলাদেশ মৈত্রি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। সরকার সে বন্ধুত্বকে তুচ্ছজ্ঞান করে “চীন বাংলাদেশ মৈত্রী” শব্দ তুলে দিয়ে নতুন করে সংযুক্ত করল ‘বঙ্গবন্ধ’ শব্দ। এ বদলের পরিনতি কি হয়েছে তা সামপ্রতীক কালের বাংলাদেশ মায়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে বিচক্ষণ ব্যক্তিরা অবশ্যই তা উপলদ্বি করতে পারবেন। মায়ানমারকে মাধ্যম বানিয়ে প্রকারান্তরে চীনই যে সীমান্তে টেনশন বাড়াচ্ছে তা এখন সহজবোদ্ধ।

জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদল করে রাখা হল হযরত শাহ জালাল (রাঃ) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর প্রতি আওয়ামীলীগের কি হৃদয়স্পর্শী মায়া? জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কে করেছে সবাই জানে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নামে বিমানবন্দর না থাকলে, জিয়ার নাম মানুষের হৃদয় থেকে মুছবে না চিরসত্য। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বীরশ্রেষ্ঠসহ কোন মনীষির নামে কোন স্পাপনা থাক বা না থাক, ওনাদের নাম আজীবন সবার চোখের সামনে ভাসবে, হৃদয়ে দোলা দিবে,
প্রেরণার বাতিঘর হবে।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×