somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যঃ ফয়েজ ভাইয়ের পাত্রী দেখা

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফয়েজ ভাই হলেন আমাদের কোরামের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তি। গ্র্যাজুয়েশন করেছেন বেশ ক'বছর হলো। বিসিএস দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চাকরি-বাকরি কিছু এখনও না করলেও চার-পাঁচটা টিউশনি করে ভালোই চলছে তার। এতটাই ভালো যে, উনি এখন আরেকজনের ভরণ-পোষণও করতে পারবেন। তো সেই লক্ষ্যেই ভাইয়ের জন্য আমাদের পাত্রী দেখা শুরু। আমাদের কোরামটা চার সদস্যবিশিষ্ট। কোরামের বাকি দুই সদস্য হলেন মেহেদী ও আরমান ভাই। বলা বাহুল্য, বয়সের দিক থেকে আমি হচ্ছি কোরামের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। বয়সে কনিষ্ঠ হলেও গায়ে-গতরে আমি কিন্তু কম যাই না। সে জন্যই কোথাও গেলে ফয়েজ ভাই আমাদের উনার ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। যাই হোক, পাত্রী দেখা প্রসঙ্গে আসি। তার আগে ফয়েজ ভাইয়ের বর্ণনাটা একটু দিই। ভাইয়ের মুখভর্তি দাড়ি। মায়াবী মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগেই থাকে। হরেক রকম পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ান। এলাকার মানুষের কাছে তিনি ডিজিটাল হুজুর হিসেবে সুপরিচিত। উনার মধ্যে একটা মুরব্বি মুরব্বি ভাব আছে।

নির্ধারিত দিনে ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে আমরা রওনা দিলাম। নানা রকম ফলমূল ও মিষ্টান্ন নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। যাত্রাপথে বাসের মধ্যে আমরা দুষ্টুমি আর মজা করতে করতে যাচ্ছিলাম। পেছনের সিটের এক লোক ফয়েজ ভাইকে হঠাৎ বলে বসলেন, আপনি যে পাত্রী দেখতে যাচ্ছেন; আপনার আগেরটার কী হবে? লোকটার কথা শুনে তো ফয়েজ ভাই তাজ্জব বনে গেলেন। এই ব্যাটায় কয় কী! সবে মাত্র প্রথম বারের মতো পাত্রী দেখতে যাচ্ছেন উনি। আর এই লোকে কয় কিনা, আগেরটার কী হবে? এদিকে আরমান ভাই ব্যাপারটাকে আরও রহস্যময় করে তুলতে ওই লোককে বলে বসলেন, ভাইয়ের বড় ছেলেকে তো এবার কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। তবুও ভাই আরেকটা বিয়ে করতে বদ্ধপরিকর। এই মজাটাই যে পরে কাল হয়ে দাঁড়াবে তখন কে জানত!

পাত্রীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আমরা নাশতা করছিলাম। পাত্রীর জন্য অপেক্ষা। ক্ষণকাল পরে লাল শাড়ি পরিহিত পাত্রী এলো। মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা দেওয়া। শাড়ির জন্য পা দেখা না গেলেও আমরা বুঝতে পারছিলাম! পাত্রী হাইহিল পরে যথেষ্ট লম্বা হয়েই এসেছে। আমাদের সেলফিপাগল মেহেদী বলেই ফেলল, ভাবি ঘোমটা সরিয়ে মুখটা একটু দেখান। আর আমি বেচারা লজ্জিত মুখে বসে রইলাম। পাত্রী দেখা পর্ব শেষ হলো। ফয়েজ ভাই জানালেন, আলহামদুলিল্লাহ- পাত্রী আমাদের পছন্দ হয়েছে। পাত্রীপক্ষ থেকেও জানাল, পাত্রকেও ওনাদের পছন্দ হয়েছে। খুশির চোটে সবাই মিষ্টিমুখ করল। কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষণ রইল না যখন জানতে পারলাম পাত্রীপক্ষ ফয়েজ ভাইকে নয়, আমাকেই পাত্র ভেবে বসে আছে। ফয়েজ ভাইকে আমার বড়ভাই ভেবে উনার সঙ্গেই ফর্দের দিনক্ষণ নিয়ে কথা বলছিলেন তারা। এর মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে উপস্থিত হলেন বাসের পেছনের সিটের সেই লোকটি। সম্পর্কে ইনি পাত্রীর মামা। আমাদের দেখেই তিনি বোয়াল মাছের মতো হাঁ হয়ে গেলেন। অন্দরমহলে গিয়েই তিনি জানিয়ে দিলেন, পাত্র আগে এক বিয়ে করেছে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল কানাঘুষা। ভেতর থেকে ফিসফাস কথাবার্তা ও হৈচৈয়ের শব্দ আসছিল। কেউ একজন দড়ি খুঁজছিল আমাদের বাঁধার জন্য। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা পালানোর পথ খুঁজছি। দরজা দিয়ে বেরিয়েই সবাই দিলাম ভোঁ-দৌড়। পেছন থেকে ধর ধর রব উঠল। আমরা তিনজন দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও ভারী শরীর নিয়ে ফয়েজ ভাই পেছনে পড়ে গেলেন। তার পেছনে লাঠিসোটা নিয়ে গ্রামবাসী ক্রমেই এগিয়ে আসছে। আরেকটু হলেই ধরা পড়ে যাবেন। দূর থেকে তখন ফজরের আজান ভেসে আসছে। আমি বিছানায় উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙছি আর খিলখিলিয়ে হাসছি শুধু। হা-হা-হা...।

[বিঃদ্রঃ লেখাটি ২ এপ্রিল,২০১৮ দৈনিক সমকালের "প্যাঁচআল" এ প্রকাশিত]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০২
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×