somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে আকাশ আমার নয়

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

:- হ্যালো শফিক, কোথায় তুমি ? কখন আসবে ?
ওপাশ থেকে কোন উত্তর শুনতে পেলাম না।
:- শফিক তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো ?
এবার একটি মেয়ে কন্ঠ শুনতে পেলাম
: ও এখন ঘুমোচ্ছে। আজ আর.....
আমি বাকিটা শোনার ইচ্ছা পোষণ না করে লাইনটা কেটে দিলাম।
ইলমা,শফিকের জীবনে আসা নতুন নারী।এক অফিসেই কাজ করে।সেই থেকে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম।আর এখন তো নিজের বউয়ের থেকে তার কাছেই বেশি থাকতে পছন্দ করে সে। প্রথম যখন তাদের ঘনিষ্ঠতা আমার চোখে ধরা পড়ে, মনে হয়েছিলো একটা বড় পাহাড় আমার বুকের উপর চেপে বসেছে,দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।ঝগড়া করে চলে গিয়েছিলাম গ্রামের বাড়ি।কিন্তু সেখানেও খুব কষ্ট হত, একাকিত্ব ঘিরে ধরেছিল।শেষমেশ শফিক যখন নিয়ে আসতে গেল, কেন যেন না করতে পারলাম না।চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসেছিলাম।অন্য কেউ আমার জায়গায় থাকলে কি করতো আমি জানি না।আমি শফিক কে ছেড়ে থাকতে পারিনি।
এরপর কিছুটা সময় সব ঠিকঠাকই ছিলো।কিন্তু সেটা অল্প সময়ের জন্যই।সে আবার ইলমার দিকে ঝুঁকে পড়ে।শফিক খুব চেষ্টা করে আমার থেকে লুকানোর কিন্তু আমি বুঝতে পারি।আমি তাকে বুঝতে পারি।সে মিথ্যা গুছিয়ে বলতে পারে না।আজ হয়তো ইলমার সাথে কোথাও ঘুরে টুরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বাসায়ই।হয়তো ড্রিংকস করেছে।
এগুলো এখন দিনকে দিন সয়ে যাচ্ছে। এই যে এখন আমার যতটা রাগ করার কথা ছিলো ততটা হচ্ছে না।স্বাভাবিক ঘটনার মতই মনে হচ্ছে বিষয়টা, অথচ এখন আমার স্বামী অন্য এক নারী আলিঙ্গনে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।এখন রাত সাড়ে বারোটা।এই রাত আজ অনেক বড় হবে, সকালের আলো ফুটবে একটা সময়।কিন্তু আমার চোখে ঘুম আসবে না।মাথায় শুধু ইলমার কথা টা ঘুরবে "ও এখন ঘুমোচ্ছে"

দরজায় কলিং বেল ঘন ঘন বেজে চলেছে।রান্নাঘর থেকে দরজা অব্দি আসতে আসতে রীতিমতো দশ-পনেরো বার বেল শুনতে পেলাম।দরজা খুলেই চমক পেলাম। কাজল তার জামাই নিয়ে হাজির।দরজার মধ্যেই তার চিরচেনা স্বভাবমতো জড়িয়ে ধরে হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিলো। কাজল আমার বান্ধবী। একসাথে বড় হয়েছি, পড়াশোনা করেছি।আমার খুব কাছের একটা মানুষ সে।এমন একটা মানুষ যার কাছে সব কথা জমা রাখা যায়। সারপ্রাইজ দিবে বলে না জানিয়েই সরাসরি বাসায় এসে হাজির।কাজলের বিয়ে হয়েছে তিন বছর হল।বিয়ের পর আজই দেখলাম।নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে এখন তাদের সুখী দম্পতি বলেই মনে হচ্ছে।আজ আমার সারাটা দিন যাবে তাদের সাথে ঘুরে ফিরে।
:- কিরে শফিক কেও বল না আমাদের সাথে বেরুতে
: না, অফিসে কাজ পড়েছে।আমি মেসেজ করে দিয়েছি সমস্যা নেই।
:- কাজ মানে! আমি এসেছি কোথায় ঘুরতে যাব একসাথে।আমি হলে অফিস থেকেই ঘাড় ধরে নিয়ে আসতাম হু
আমি বিড়বিড় করে বলে উঠলাম এখন তো হাতটা ধরারই সময় পাই না।
:- কি বলিস মনে মনে ?
: নাহ কিছু না।চল
সারাদিন পুরো শহর ঘুরে বিকালে বাসায় ফিরলাম।শফিক বারান্দায় বসে পেপার পড়ছে। গায়ে কালো টি শার্ট।শফিক কে কালো টিশার্টে ভালো লাগে।প্রায় ছফুট লম্বা,সুদর্শন, হাসোজ্জল এই পুরুষটার প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম একসময়।তাকে নিয়ে খুব গর্ব হতো। আমরা সুখী ছিলাম।কিন্তু এখন নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি "শফিক তুমি কেন এত সুদর্শন হতে গেলে!!"
: কখন এলে ?
:- হ্যাঁ এইতো। তোমার বান্ধবী চলে গেলো ?
: হুম।
:- ভেবেছিলাম রাতে খাওয়াদাওয়া করে যাবে।
: আমি বলেছিলাম কিন্তু চলে গেলো।
:- আচ্ছা ঠিক আছে।আজ রাতে আমরা বাইরে খাবো। রান্না করার প্রয়োজন নেই।
আমি ছোট ছোট চোখ করে সন্দেহের নজরে শফিকের দিকে তাকিয়ে আছি।শেষ কবে আমরা বাইরে খেতে গিয়েছিলাম ভুলে গেছি।আজ হঠাৎ কি মনে করে!এমন নানাবিধ প্রশ্ন যখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন আমার কাঁধে একটা হাত পড়লো
:- অনেক দিন হল আমরা একসাথে সময় কাটাই না।কালো শাড়ীটা পড়ো আজকে।
আমি পেছনে ঘুরে কোনরকমে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করলাম।শতকিছুর পরও মানুষ চেষ্টা করে যায় তার ভালবাসার মানুষটার সাথে রয়ে যেতে।সম্পর্কটা ধরে রাখতে। আমিও সে চেষ্টাই করছি বোধহয়।

:- হ্যালো, কে ?
: আমি জামান। কেমন আছো কুসুম ?
আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো নামটা শুনে।জামান!! এত বছর পর!!
:- ভালো। তুমি হঠাৎ এতদিন পর! আর আমার নাম্বারই বা কোত্থেকে পেলে ?
: একটা নাম্বার জোগাড় করা কি খুব কঠিন ? তোমার বান্ধবী কাজলের থেকে নিয়েছি।
:- হুম।
: শফিক সাহেব বাসায় ?
:- শফিক তোমার সমবয়সী। সাহেব বলছো কেন ? হ্যাঁ সে বাসায় আছে।
: এমনি কল করলাম খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে।
:- আমি ভালো আছি।আর ধন্যবাদ খোঁজ নেয়ার জন্যে। আরো ভালো থাকব যদি তুমি আর কল না দাও এই নাম্বারে।
আমি লাইনটা কেটে দিলাম।প্রায় তিন বছর পর জামানের সাথে আমার কথা হল।শফিকের সাথে বিয়ের পর জামানের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেই আমি।নাহ, জামান আমার কোন পুরনো প্রেমিক নয়,খুব কাছের বন্ধু ছিলো। হয়তো মনে মনে ভালোবাসতো আমায়।কিন্তু কখনো তা মুখ ফুটে বলতে যায়নি।আর আমার এই ধারণাটা আরও স্পষ্ট হয় যখন শুনলাম সে আজ অব্দি বিয়ে করেনি।আগের মতই সাংবাদিকতা নিয়েই আছে।ক্রাইম রিপোর্টের খোঁজে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়ায়।কি এডভেঞ্চারাস লাইফ ওর।আর আমি? এই সব কি ভাবছি ? আমি কি,কেমন আছি তার সাথে জামানের কোন কানেকশন নেই।তাকে নিয়ে শুধু শুধু ভাবা নিরর্থক।তবু নাম্বারটা বড় অক্ষরে সেভ করে রাখলাম "জামান"।

টেলিভিশনে একটা পুরনো গান চলছে।অনেক দিন আগে শুনেছিলাম গানটা।শফিকের প্রিয় গান ছিল একসময়।অগত্যা আমাকে মুখস্থ করে তাকে শোনাতে হত।একই গান বারবার শুনতে কি ভালোই না লাগত তার।আচ্ছা শফিকের সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিলো কিভাবে?
আমি স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই।ছোট মামাই শফিকের কথা বলে প্রথমে।ছোট মামা আর শফিকের বড় ভাই ছিলো বন্ধু।সেই থেকে পরিচয় দুই পরিবারের।শফিক প্রথম যেদিন আমাকে দেখতে আসে, কালো কোট পরে ছিলো ও।আসলে তাকে দেখেই আমার পছন্দ হয়ে যায়।আলাদা গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিলো " আপনার কি আর কোন সম্পর্ক আছে?" হাসি পেয়েছিলো। মনে মনে বলেছিলাম "না গো,তোমার সাথে যে সবে মাত্র পরিচয়।প্রেমটা হবে কিভাবে বল!" হা হা হা.... এগুলো মনে পড়ে এখন হাসি পাচ্ছে।

শফিক বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে পেপার পড়ছে।এইসময়ে সে নিশ্চয়ই চা খেতে পছন্দ করবে।চা মূখ্য বিষয় নয়,মূল বিষয় হল আজ আমি নতুন কালো শাড়ি পড়েছি।আর সেটা তাকে দেখিয়ে প্রশংসা শোনাই আমার ইচ্ছা।
:- চা খাবে ?
শফিক মাথা তুলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার পেপারে মনযোগ দিল।
: দিতে পারো।তবে না দিলেও চলবে
:- আচ্ছা
আমি ফিরে যেতে যেতে বললাম
:- এই শাড়িটা কিনলাম নতুন।ভালো হয়েছে ?
শফিক না তাকিয়েই বলল হু
:- হু কি ?
: কিছু না। সুন্দর লাগছে তোমাকে।আমি একটু পর বেরুব।আজ রাতে আর আসবো না।কাজ আছে একটু।
:- ও, কাজটা কি ইলমার সাথে ?
শফিক পেপার রেখে আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকালো।
:- এই সম্পর্কটা একদম পুরোপুরি শেষ করে দিয়ে ঐ মাগীটার কাছে চলে গেলেই তো পার।
: বাজে কথা বলবে না একদম।
:- বাজে কাজটা ঠিকই তো করে যাচ্ছ। আমি বললেই দোষ হয়ে যায় তাই না !
: হ্যাঁ দোষ হয়ে যায়। তোমার না পোষালে নিজেই চলে যাচ্ছ না কেন ?
:- বাহ্ , এটা শোনার জন্যেই ছিলাম বোধহয় এতদিন।ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। ডিভোর্স পেপারটা কষ্ট করে পাঠিয়ে দিও।
আমি শুধু একটা চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে গেলাম।শফিক আমাকে একবারের জন্যেও আটকাতে আসলো না।অথচ আমি খুব করে চাইছিলাম শফিক এসে আমাকে যেতে বাধা দিক।একবার ক্ষমা চেয়ে নিক। এই এত বছরে আমার জন্যে কি শফিকের মনে এতটুকু মায়াও তৈরি হয়নি ! শফিক এতটাও স্বার্থপর হতে পারে না।
দেখতে দেখতে আমি সাদা চারতলা বাড়িটা পেরিয়ে চলে গেলাম।নাহ, শফিক পেছন থেকে আসে নি।আমাকে নিতে আসেনি।আমি হেঁটে চলেছি এ গলি পেরিয়ে,এ শহর ছাড়িয়ে অজানা গন্তব্যে।হাতে থাকা ফোনটাতে বার বার কল আসছে একটা।সেখানে বড় অক্ষরে ভেসে আছে একটা নাম, "জামান"। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ফোনটা ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।উপরে নীল আকাশ, স্বচ্ছ সাদা মেঘ সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আকাশ আমার নয়।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×