somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কোনদিন দুধ চা খাওয়া হবেনা

২৪ শে এপ্রিল, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেশি সময় কারও লাগেনা। বুঝে ফেলে। আমার দৌড়টা তাদের জানা হয়ে যায়। এর জন্য আমি নিজেই আসলে দায়ী। ভাব ধরাটা শিখতে পারলামনা। তাই খুব সহজেই সবাই বুঝে ফেলে আমি মূলত অন্তজ শ্রেনীর মানুষ।

আমি নাকি ঠিক মানানসই নই এই সময়ের জন্য। পরিচিতরা সবাই বলে। এমনকি মাও বলেন, তুই বুঝিসনা দিনদুনিয়া কোন তালে চলে এখন! আমি কোন উত্তর দিতে পারিনা। মাথা চুলকাই।

কাদির মিয়া আমাকে কেন যেন খুব পছন্দ করে। জেলখাটা দাগী আসামী। নামের শেষের মিয়াটা উধাও হয়ে সেখানে ডাকাত শব্দটা ঠেসে ছিল অনেকদিন। কি করে যেন সে আমাদের অফিসে এসে জুটে গেল আর আজব কোন এক কারনে আমার সাথে তার খাতির হয়ে গেল। কাচের মগে লাল চা দিতে দিতে বলত, স্যার আপনার জীবনে কোনদিন দুধ চা খাওয়া হবেনা। আমি অবাক হয়ে বলতাম, মানে? সে বলত, এইত রোজ রোজ লাল চা খাবেন। দুধ কেনার টাকা হবেনা! আমি ঠাঠা মারা হাসি দিয়ে তাকে লাল চার গুনাগুন বুঝাতে চাইলে সে শুধু মিট মিট করে হাসত। সব কথা শেষ হলে মাথা নাড়তে নাড়তে সামনে থেকে বিদায় হত। মাথা নাড়াড় ভঙ্গিটায় স্পস্ট বুঝা যেত তার মনের কথা... আপনেরে দিয়া কিছুই হবেনা টাইপ মাথা নাড়ানো।

অফিসে ওই কাদির মিয়া ছাড়া আর কেউ আমারে পাত্তা দেয়না। এমনকি যারা আমারে পাত্তা না দিলেই নয় তারাও না। সেলসে যারা কাজ করে তাদের প্রতিদিনকার কাজের হিসাব নেয়ার দায়িত্বটা আমার। ওদের লগবুকে আমার সই না থাকলে বেতন হয়না তাদের! সেই অর্থে আমি তাদের কাছে বিশাল মতাবান কিছু একটা হওয়া উচিত। কিসের কি, আমার কাছ থেকে তারা প্রতিদিন এমনভাবে সই নেবে, ভাব দেখে মনে হয় কারো খাতায় যদি আমি সই না দিই তাহলে আমার এমাসের বেতন আটকে দেয়া হবে!

আমাদের অফিসের সবারই প্রায় আরামের জীবন। আমাদের বাড়ির প্রায় সবারই আরামের জীবন। আমি শুধু সেখানে বাগড়া। ফেলনা টাইপের কিছু একটা। কোন কিছুতেই আমার প্রবেশাধিকার নেই। অফিসের আর সবাই মিলে অনেকধরনের ধরনের মজা করে। আমি তাতে কোনদিনই সুজোগ পাইনা। কাদের মিয়া না থাকলে সেসবের খবরই আমি পেতামনা। তবে একবার আমিও গিয়েছিলাম সেরকম এক আয়োজনে। আসলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেদিন পাচটা না বাজতেই অফিসটা প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল। আমার আবার রোজ রোজ দেরি হয় অফিস থেকে বেরুতে। প্রায়ই সেলসের ওরা ফিরতে দেরি করে ফেলে। সাড়ে পাচটার দিকে ফোন আসল। মহিউদ্দিন সাহেব ফোন করেছেন।

- কি খবর মোকাম্মেল ভাই, এখনও আপনি অফিসে।

আমি বলি, কাজ শেষ করতে দেরি হয়ে গেল মুহিভাই।

-সেতো আপনার রোজই হয় বলে তিনি কাদির মিয়ার খোজ করেন। আমি বলি ওতো চলে গেছে। আমার রুটিন জানতে চান তিনি। আমি বলি বাসায় চলে যাব মুহি ভাই। মুহিভাই আজব এক কথা বলেন এর পর। তিনি আমাকে তার বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি অবাক হয়ে যাই। ধাতস্ত হয়ে বলি, না ভাই আজ না আরেকদিন। তিনি নাছোড়বান্দা। বলেন, আরে আজই আসেন। ১০ মিনিটের জন্য হলেও আসেন। কি আর করা। রাজি হতে হয়। মুহিভাই তার বাড়ির নাম্বার দিয়ে আমাকে বলেন, একটা কস্ট করতে হবে কিন্তু মুকাম্মেল ভাই, আমার টেবিলের তলায় ছোট একটা বাক্স আছে একটু কস্ট করে ওইটা নিয়া আসতে হবে। আমি বাড়ির পথের উল্টা পথের রিক্সায় চড়ে বসি। প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের বাক্সটা হাটুর ওপর শক্ত করে ধরে রাখি।

বাসায়ও এমন অনেককিছু হয় যার পাত্তাই আমি পাইনা! সেসব আমি গায়েও মাখিনা। অভ্যাস হয়ে গেছে। শুধু একবার, রাতে বাসায় ফিরে যখন মা মিস্টির বাটিটা এগিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বল্লেন নে মিস্টি খা, আমাদের মিনার বিয়ের মিস্টি। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। মা বলেন, আগামী শুক্রবার মিনার বিয়ে। জামাই লন্ডনে থাকে। ছয়মাসের মধ্যে মিনাকে লন্ডন নিয়ে যাবে। আমার মিস্টি খেতে ইচ্ছে হয়না। মন খারাপ করে। আমার বোনটার বিয়ে হবে সেই খবরটাও আমি জানতে পারিনা। চোখটা ভিজে আসতে চায়।

মোসাদ্দেক বেশ বুঝদার ছেলে। আমার দুবছর পরে দুনিয়ায় আসলেও আদতে সে আমার বড়ই হবে। সব কাজেই সে পাক্কা। কন্ট্রাক্টরি করে। সব কন্ট্রাক্টই সে নেয়। সে বাড়ি বানানোই হোক আর কাগজের বাক্স বানানো হোক। একেবারে শুন্য থেকে শুরু করেছে। প্রথম কাজটা পেল বড়ভাইয়ার শালার কাছ থেকে। ইউনানী ঔষধ কোম্পানির বোতল সাপ্লাইয়ের কাজ। বড়ভাইয়া শুনে হেভি ক্ষেপা। কোনদিন করেনি কাজ। কি বুঝে নিল। টাকা ওড়ানোর ফন্দি। মাও তাতে যোগ দিল। মোসাদ্দেক তাদের পাত্তাই দিলনা। সোজা চলে গেল ঢাকা। তিন চারদিন পর ফিরে এল। পনের দিনের মাথায় মিস্টি নিয়ে ঘরে হাজির। বিল পেয়ে মিস্টি কিনেছে!

আমি মোসাদ্দেককে জিজ্ঞেস করি কিভাবে। সে বলে সিস্টেম। এরচেয়ে বেশি কিছু বলেনা। তবে আমি বুঝে যাই তিনমাসের মাথায়। যখন আমাদের অফিসের প্রিন্টিং এর কাজটা ও বাগিয়ে নিল। বড় স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনার ছোটভাইতো বেশ কাজের ছেলে। আপনার মত নয়। দিন দুনিয়া বুঝে। আমি কিছুই বুঝিনা। দাড়িয়ে থাকি। তিনিই খোলাসা করেন। আরে আজ সে এসেছিল। আপনার পরিচয় দিয়ে বল্ল, কাজ চায়। দিয়ে দিলাম প্রিন্টিং এর কাজটা। আমি বেশ অবাক আর খুশি হই। রাতেই মোসাদ্দেক আমায় বলে, তুমার বসরে আইজ ফিট দিলাম। টেন পার্সেন্ট সাথে তুমি। আমি টেন পার্সেন্ট বুঝি কিন্তু সাথে আমিটা আর বুঝিনা। একবছরের মধ্যে মোসাদ্দেক আমাদের অফিসপাড়ায় পরিচিত একজন হয়ে যায়। আমার ভাইকে দেখি সবাই চিনে।

আমার দিয়া আসলেই কিছু হবেনা... এটা মোসাদ্দেকও বুঝে ফেলে যখন অফসেটে ছাপানোর অর্ডারটা আধাআধি টিকেতে ছাপিয়ে দেয়। আর সেটা আমি আটকে দেই তখন। আমি বুঝিনা কিভাবে তবু তার বিলটা পাস হয়ে যায়। আর মা কেন আমাকে এনিয়ে আমাকে বকা দেয় তাও আমার বুঝে আসেনা। আমার বৌও বলে, তুমি কি? নিজের ভাইয়ের সাথে আইন দেখাও!

মোসাদ্দেক একটা অফিস করেছে। খুব সুন্দর অফিস। লাল নীল কাচ বসানো অফিস। সে অফিসে সারাদিন বাতি জ্বলে। মা কয়েকদিন ধরে আমাকে খুব করে বকছেন। আমার দোষটা যে খুব বড় তা নয়। মোসাদ্দেক বলছিল আমি যেন রোজ তার অফিসে এক ঘন্টা করে সময় দিই। সন্ধার দিকে দিলেই হবে। ওর সারাদিনের হিসাবটা আমি দেখে দিলেই হবে। এটা এমন কোন আব্দার নয়। ওই সময়টায় আমি স্বপনের দোকানে বসে আড্ডা দিই। সময়টা কাজে লাগল। টাকাও নাকী দেবে। আমি যে বেতন পাই তারচেয়ে ডাবল! তবু আমার ভাল লাগেনি। মোসাদ্দেকের ঘাপলা আছে এই কথাটা অন্তত আমি বুঝতে পারি। তার সেই ঘাপলায় যোগ দিতে আমার ভাল লাগেনা। তাই না করে দিয়েছি। তাতেই মা ক্ষেপেছেন। বড়ভাইয়া ক্ষেপেছেন। বাবা থাকলে তিনিও নিশ্চয় ক্ষেপতেন।

আমার বৌও ক্ষেপেছে। কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, যে লোক বৌয়ের রিক্সাভাড়া দিতে পারেনা তার আবার এত লম্বা কথা কেন?

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
১৪৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×